টুং-টাং ছন্দে মুখরিত কামারবাড়ি
সালেহীন বাবু
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ১২:৪৩ এএম, ১৬ আগস্ট ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৩:৫০ পিএম, ১৭ আগস্ট ২০১৮ শুক্রবার
টুং-টাং শব্দে মুখরিত কামারবাড়ি। আগুনের শিখায় তাপ দেয়া ও হাতুড়ি পেটানোর টুং-টাং শব্দে তৈরি হচ্ছে দা, বটি, চাপাতি ও ছুরিসহ নানা রকমের অস্ত্র।
আগামী ২২ আগস্ট বুধবার ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। যতই দিন ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে কামারদের ব্যস্ততা। ঈদে কোরবানি ও আনুষাঙ্গিক কাজের জন্য দা, ছুরি, চাপাতি, বটিসহ অন্যান্য উপকরণ বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে। এসব যন্ত্রপাতি শান দেয়া কিংবা নতুন ভাবে তৈরি করার জন্য একমাত্র মাধ্যম কামার। আগুনের তাপে কামারদের শরীর থেকে ঝড়ছে অবিরাম ঘাম তবুও দিন-রাত সমানতালে হাঁসুয়া, ছুরি, চাপাতি, দা, বটি, ভোজালি, কুড়াল তৈরি ও শান দিতে ব্যস্ত তারা।
পুরোদমে এখনও বিক্রি শুরু না হলেও দিন-রাত চলছে টুং-টাং শব্দে কামারদের কাজ। তবে কয়লার দাম বেশি হওয়ায় অন্যবারের চেয়ে এবার দা, বটি, ছুরি ও চাপাতির দাম কিছুটা বেশি বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন কামারশালায় দেখা যায়, অনেকেই পরিবারের ব্যবহৃত ও অব্যবহৃত দা, বটি ও ছুরি শান দেয়ার জন্য নিয়ে আসছে কামারদের কাছে। তাই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে কামারদের বিরামহীন ব্যস্ততা। বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়েও দোকানে বেড়েছে মৌসুমি কর্মচারীর সংখ্যা।
হাজারীবাগ এলাকার নগেন কর্মকার বলেন, সারা বছরই আমাদের তৈরি জিনিসের চাহিদা থাকে। তবে কোরবানির ঈদে আমাদের জিনিসের চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায়। এ ঈদের পশু কোরবানির জন্য অনেকেই নতুন ছুরি, চাপাতি, চাকু ইত্যাদি কিনতে আসেন। আমরা লোহার এসব জিনিসের চাহিদার কথা মাথায় রেখে আগে থেকেই বেশ কিছু জিনিস তৈরি করে রাখি।
তিনি বলেন, বছরের প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন লৌহজাত জিনিস বানিয়ে গড়ে ৪০০- ৫০০ টাকা আয় হয়। কিন্তু ঈদের আগে লোহার অস্ত্রের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন প্রতিদিন ৩-৪ হাজার টাকা আয় হয়। হাতে অতিরিক্ত কাজের চাপ থাকায় আমরা এখন অনেক ব্যস্ত। এই ব্যস্ততা চলবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত।
সাভারের বাইপাইলের ফরিদ কর্মকার জানান, সাধারণত স্প্রিং লোহা ও কাঁচা লোহা ব্যবহার করে এই দা, বটি ও ছুরি তৈরি করা হয়। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি উপকরণের মান ভালো, দামও বেশি। আর কাঁচা লোহার তৈরি উপকরণগুলোর দাম তুলনামূলকভাবে কম হয়ে থাকে।
পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১০০ থেকে ২০০ টাকা , দা ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, বটি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি ৩০০ থেকে ৭০০টাকা, চাপাতি ৫০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হয় বলে জানান তিনি।
গাবতলীর বাজারের দুলাল কর্মকার বলেন, ঈদে যে বেচাকেনা হয় তা আর অন্য সময় হয় না। সারাবছর এসব পণ্য যে পরিমাণে বিক্রি হয়, তার চেয়ে বেশি বিক্রি হয় ঈদের সময়।
তবে কামারদের অভিযোগ, চিনের তৈরি ছুরিতে মার্কেট ছেয়ে যাওয়ায় হাতে তৈরি দা, বটি, চাকু, চাপাতি কিনতে চান না ক্রেতারা। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে এ শিল্প।
এ শিল্প রক্ষায় সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও আর্থিক সহযোগিতা চান এর সঙ্গে জড়িতরা।