আরিথা ফ্র্যাংকলিন : দ্য কুইন অফ সোল
সালেহীন বাবু
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ০৩:৫০ পিএম, ১৭ আগস্ট ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ১২:২৫ এএম, ২০ আগস্ট ২০১৮ সোমবার
আরিথা লুইস ফ্র্যাংকলিন শুধু আমেরিকায় নয় সারা বিশ্বেই গায়ক, গীতিকার ও পিয়ানোবাদক হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন। দ্য কুইন অফ সোল নামেই তার সর্বাধিক পরিচিতি। সুরের ব্যতিক্রমধারার সাথে মানুষের আত্মার অভিন্ন সম্পর্ককেই তিনি গানের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছিলেন।
বৃহস্পতিবার ৭৬ বছর বয়সে ডেট্রয়েটে তার মৃত্যু হয়। অ্যাডভান্স প্যানক্রিয়েটিক ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
ব্যতিক্রমী এ শিল্পী ১৯৪২ সালের ২৫ মার্চ আমেরিকার মেমফিস টেনেসিতে জন্মগ্রহণ করেন। আরিথা মাত্র আঠারো বছর বয়সে চার্চে কর্মজীবন শুরু করেন। অথচ সে সময় তার বাবা সি.এল ফ্র্যাংকলিন ছিলেন মন্ত্রী। চার্চে থেকেই গানের প্রাথমিক বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন।
সেই বয়সে তার প্রথম একক মুক্তি পায়। কলম্বিয়া রেকর্ডস থেকে বের হওয়া গানটি বিলবোর্ড চার্টের দশ নম্বর স্থানে পৌঁছে । তার প্রথম রেকর্ডটি ১৯৬১ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। সে সময় আরিথার আরও দুটি গানের ট্র্যাক বের হয়। ১৯৬৭ সালে আটলান্টিক রেকর্ডের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। আটলান্টিক থেকে মুক্তি পাওয়া রেসপেক্ট,থিণক, (ইউ মেক মি ফিল লাইক) এ নেচারাল ওমেন, ডন্ট প্লে দেট সং (ইউ লাইড), স্প্যানিশ হার্লম গানগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। পাশাপাশি গানগুলো ব্যবসাসফল হয়। যা লুইসকে রাতারাতি তারকাখ্যাতি এনে দেয়।
এরপর থেকেই দ্য কুইন অব সোল বা আত্মার রানী হিসবেই তার পরিচিতি ঘটে। ধারাবাহিকভাবে একের পর গানের এলবাম হিট হতে থাকে। যার মধ্যে রয়েছে আই নেভার লাভড এ মেন দ্য ওয়ে আই লাভ ইউ (১৯৬৭),লেডি সোল (১৯৬৮),ইয়াং গিফটেড এন্ড ব্লাড (১৯৭৬),ব্লাক (১৯৭২),এমজিং গ্রেস (১৯৭২)।
১৯৭৯ সালে লুইসের বাবাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি আটলান্টিক ছেড়ে চলে যান এবং আরিষ্টা রেকর্ডসের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। এখানেও ব্যবসাসফল হন তিনি। আরিষ্টার ব্যানারে জাম্প টু ইট (১৯৮২), হুজ জুম ইন হু (১৯৮৫) এলবামগুলো সুপারহিট হয়।
১৯৯৮ সালে, ফ্রাঙ্কলিন নিসুন দোর্মা গানটির জন্য গ্র্যামি পুরষ্কার পান। সেই বছর তার চল্লিশটি গান নিয়ে বের করেন এলবাম রোজ ইজ স্টিল এ রোজ।
ফ্র্যাংকলিনের গাওয়া ১১২ টি গান বিলবোর্ডে জায়গা করে নেয়। এ পর্যন্ত তার রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারেনি। সেইসঙ্গে ইউএস বিলবোর্ড হট ১০০-তে ৭৭ বার এসেছিল তার নাম। আরঅ্যান্ডবি চার্টেও ২০ বার এসেছিলেন তিনি।
১৯৬৮ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সেরা নারী আর ও বি ভোকাল পারফরমেন্সের জন্য আটটি পুরস্কারসহ মোট ১৮বার গ্র্যামি পুরস্কার লাভ করেন ।
বিশ্বব্যাপী ফ্র্যাংকলিনের ৭৫ মিলিয়নেরও বেশি রেকর্ড বিক্রি হয়েছে যা সর্বকালের সেরা ব্যবসাসফল গায়িকাদের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
তার আলোচিত গানগুলোর মধ্যে রক স্ট্যাডি,জাম্প টু ইট, ফ্রি ওয়ে অফ লাইফ,হুজ জুম ইন হু,চেইন অফ ফুলস,আনটিল ইউ কাম বেক টু মি,সামথিঙ হি কেন ফিল,আই নো ইউ আর ওয়েটিং ফর মি,জাম্প ইন জেক ফ্ল্যাাশ।
ফ্র্যাংকলিন তার সংগীত জীবনে অনেক সম্মাননা পেয়েছেন। ১৯৮৭ সালে প্রথম নারী পারফর্মার হিসেবে রক এবং রোল হল অফ ফেম নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের মিউজিক হল অফ ফেমে ভূষিত হন। ২০১২ সালে তিনি জিএমএ গসপেল মিউজিক হলের অফ ফেমে ভূষিত হন।
২০১০ সালে তার ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর চিকিৎসা শেষে আবার মঞ্চে ফেরেন। চিকিৎসকেরা বারবার তাকে মঞ্চে গান না গাইতে অনুরোধ করেন। তিনি তা না শুনে ২০১৭ সাল থেকে আবার মঞ্চে গান গাইতে শুরু করেন। গত বছর নভেম্বরে সর্বশেষ অনুষ্ঠান করেছিলেন তিনি। এরপর অবসরে যান। শেষ পর্যন্ত ৭৬ বছর বয়সে আরিথা বৃহস্পতিবার মারা যান।
তিনি ছিলেন সর্বকালের সবচেয়ে প্রভাবশালী গায়িকা। একজন সক্রিয় সংগীত কর্মী যিনি তার সংগীতের মাধ্যমে বিশ্বে ন্যায়ের কথা তুলে ধরেছিলেন। সততা, ন্যায়বিচার ও আত্মার প্রশান্তির হাতিয়ার হিসেবে সংগীতকে ব্যবহার করেছিলেন লুইস। তাইতো দ্য কুইন অব সোল হিসেবেই ছিল তার ব্যাপ্তিময়তা।