রাজধানীর গরুর হাটে নারীদের ভিড় বাড়ছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ১১:০০ এএম, ১৯ আগস্ট ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ১২:২৫ এএম, ২৩ আগস্ট ২০১৮ বৃহস্পতিবার
ফাইল ছবি
কোরবানীর ঈদ কড়া নাড়ছে দরজায়। আর মাত্র তিনদিন পর ঈদ। আনুষ্ঠানিকভাবে রাজধানীতে হাট বসলেও ক্রেতার সংখ্যা এখনো কম। এ সুযোগে মানুষের ভিড় এড়াতে নারী ক্রেতারা যাচ্ছেন রাজধানীর কোরবানীর হাটগুলোতে। তারা দেখছেন, পছন্দ করছেন। কেউ কেউ কিনে ফেলছেন হাতে সময় রেখেই।
তারা বলছেন, ভিড় কম থাকার কারণে স্বাচ্ছন্দে ঘুরে দেখা যাচ্ছে। দামদর করতেও সুবিধা হচ্ছে। দামে মিললে পছন্দের পশুটি কিনতে দেরি করছেন না অনেকেই। আজ রোববার রাজধানীর গাবতলী, নয়াবাজার, মেরুল বাড্ডা, শাজাহানপুর, তেজগাঁও, আগারগাঁওসহ বেশ কয়েকটি হাট সরেজমিনে ঘুরে উল্লেখযোগ্য হারে নারী ক্রেতার দেখা মেলে। কিশোরী-তরুণী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী নারীরা হাটে আসছেন উৎসবের আমেজে। ঘুরে ঘুরে দেখছেন হাটগুলো।
হাট কর্তৃপক্ষ বলছেন, প্রতি বছরই পুরুষ ক্রেতাদের পাশাপাশি নারী ক্রেতারা হাটে আসেন। তারা কেউ কেউ দূরে নিজেদের গাড়ি রেখে হাটের ভেতরে চলে যান। পুরো হাট ঘুরে দেখেন তারা। এবছর তুলনামূলকভাবে নারী ক্রেতার সংখ্যা বেশি। তারা বলছেন, উচ্চবিত্ত নারীরাই তুলনামূলকভাবে হাটে আসেন বেশি। এসময়ে আবাহাওয়া ভালো হওয়ায় এবং রোদ বৃষ্টি না থাকায় নারী ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, নারী ক্রেতার কাছে পশু বিক্রি করার সুবিধা আছে। তারা এতো যাচাই-বাছাই করেন না। পছন্দ হলে পশু নিয়ে যান। পুরুষরা তো দশ দোকানে যান, এক গরুই দশবার দামাদামি করেন।
রোববার গাবতলীর হাটে গিয়ে দেখা যায়, সাভার বাজার থেকে গৃহিণী মুন্নী রহমান তার স্বামী কামাল রহমান ও ছেলে অপুকে নিয়ে এসেছেন গাবতলীর হাটে। মুন্নী বলেন, হাট এখনও জমে উঠেনি। আগে ভাগে এসেছি এখন ভিড় কম থাকে। দেখি একটা গরু আর দুইটা খাসি কিনবো। গরু পছন্দ হয়েছে । দাম ৭০ হাজার চাচ্ছে। আমরা ৬৫ হাজার বলেছি। খাসি কেনা হয়ে গেছে। দুইটা ২৫ হাজার নিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সেলিনা জানান, ভিড় এড়াতেই তিনি তিনদিন হাতে রেখে গরু কিনে ফেলেন। তিনি বলেন, গত প্রায় দশ বছর যাবত আমি নিয়মিত হাটে এসে কোরবানীর গরু কিনি। আমার স্বামী-সন্তানরাও সঙ্গে আসে। তবে আমি নিজে এসে গরু কিনতেই আনন্দ পাই। বলতে পারেন এটা আমার চরম সখ।
তিনি জানান, এবার তার বাজেট পঞ্চাশ হাজার টাকা। এ টাকায় যেমন পশু মিলবে তা নিয়েই খুশি মনে ঘরে ফিরবেন।
এদিকে নয়াবাজারের নারী ক্রেতারা বলছেন, বাজারে প্রচুর পশু থাকলেও ব্যবসায়ীরা চড়া দাম চাচ্ছে। তারা গরু ছাড়ছে না। শেষ দুদিনের জন্য অপেক্ষা করছে। এলিফ্যান্ট রোড থেকে স্বপরিবারে নয়াবাজার গরুও হাটে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী জেসমিন। তিনি বললেন, হাটে আসি গরু দেখতে। প্রতিবারই আসি। আমরা যেটা পছন্দ করি বাবা সেটাই কেনেন। বাবা-মার সঙ্গে হাটে আসতে খুব মজা লাগে। আমার দাদা-দাদিও গরু দেখতে হাটে আসে।
একই হাটে কথা হয় চকবাজারের শেফালি আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, হাটে অনেক গরু আছে। ব্যবসায়ীদের বিক্রিরও তেমন তাগাদা দেখছি না। দাম মোটামুটি সহনশীল। গতবারের চেয়ে কমই মনে হলো। আজ দেখি কি হয়। বাসা তো কাছেই। প্রয়োজনে ঈদের আগের দিনই কিনবো। মেরুল বাড্ডায় সকালে ঘুরে দেখা গেলো অনেক নারী ক্রেতা ঘুরে ঘুরে পশু দেখছেন। অনেকেই যাচাই করছেন আজ। কিনবেন পরে।
ফারজানা শবনম বনানী থেকে গরু কিনতে এসেছেন মেরুল হাটে। পেশায় প্রকৌশলী ফারজানা জানালেন, স্বামী চাকরির প্রয়োজনে এবার ঈদে দেশের বাইরে থাকবেন। তাই তিনিই এসেছেন এবার গরু কিনতে। বললেন, একটা আগ্রহবোধ থেকেই আসলে আসা। আমার ছোট বোন এবং ননদও এসেছে আমার সঙ্গে। প্রতি বছর আমার স্বামী এবং ভাই হাটে আসে। এবার আমার স্বামী বাইরে থাকায় ভাবলাম আমরা মেয়েরাই যাই হাটে। ভাইটিকেও তাই এবছর রেষ্ট দিয়েছি।
তিনি জানান, এবছর প্রচুর গরু আমদানী হওয়ায় মনে হচ্ছে দাম তুলনামুলকভাবে কমই। তাই নিদিষ্ট বাজেটের মধ্যেই গরু পেয়ে যাবেন বলে আশা করছেন তিনি। এদিকে শাহজাহানপুর হাটে গরু কিনতে আসা রোকসানা আক্তার লুমা জানান, গরুও দাম কম হলেও খাসির দাম অনেক বেশি বলে মনে হচ্ছে তার কাছে।
তিনি বলেন, মিডিয়াম দামের একটি গরু এবং পনেরো হাজারের মধ্যে একটি খাসি কিনতে এসেছি। ধর্মীয় ব্যাপার। একটা নিয়ত আছে। ইচ্ছে করলেই তো বাজেট বাড়াতে পারবো না। দেখি ভালো পেলে আজকেই নিয়ে যাবো। আগে কিনলে নিশ্চিন্ত হওয়া যায়। বাচ্চারাও খুশিতে সময় কাটাতে পারে।
একই হাটে নিজের গাড়ির পাশে দাড়িয়ে একটি গরু দামাদামি করছিলেন ষাট বছরের নূরুন্নাহার বেগম। তার নাতনী নদী বললেন, জন্মের পর থেকেই দেখছি নানু কোরবানীর গরু কিনতে হাটে আসেন। আমরাও তার সাথে আসি। আমাদের ফ্যামেলিতে সবাই মিলে হাটে আসাটা উৎসবের মত। নানু পছন্দ করে একটা গরু নিয়ে নেবেন।
নূরুন্নাহার বেগম বলেন, এই গরুটাই আমার পছন্দ হয়েছে। ৭০ হাজার দাম চাচ্ছে। ৫০ হাজার বলেছি। দেখি কিনতে পারি কিনা। দোয়া করেন। তিনি বলেন, আমি প্রতি বছরই গরু কিনতে আসি। ভালো লাগে। আনন্দ পাই। এখন আর হাটের ভেতর ঢুকি না। বয়স হয়েছে তো। বাইরে থেকে দেখেই নিয়ে নেই।
খিলগাঁও থেকে আফতাবনগর পশুর হাটে সুলতানা বেগম এসেছেন তার স্বামী ইস্কান্দার আলী ও দুই মেয়েকে নিয়ে। সুলতানা বেগম জানান, তার স্বামী গতকাল এই হাটে গরু দেখতে এসেছিলেন। তার পছন্দের গরু কিনতেই আজ তারা পরিবারের সবাই এসেছেন। ৮৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনেছেন তারা। সুলতানা বেগম জানান, কোরবানির জন্য দেওয়া গরুটি যাতে পরিবারের সবার পছন্দ হয় তাই সবাই মিলে একসাথে হাটে এসেছেন।