রাত থেকে `অপারেশন ডেভিল হান্ট`, সুপ্রিম কোর্টে কড়া নিরাপত্তা
বিবিসি বাংলা অনলাইন
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৯:০৫ পিএম, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ শনিবার
![সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি](https://www.womennews24.com/media/imgAll/2019January/900jpg-02-2502081505.jpg)
সংগৃহীত ছবি
গত কয়েকদিনে ঢাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির বাড়িসহ সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর, স্থাপনায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার গাজীপুরে সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে শনিবার রাত থেকে সারাদেশে যৌথ অভিযান 'অপারেশন ডেভিল হান্ট' শুরুর ঘোষণা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এদিকে শনিবার সকাল থেকেই সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ কড়া নিরাপত্তা বলয়ে ঘিরে রাখে পুরো আদালত এলাকা।
পুলিশ বলছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঢাকাসহ সারাদেশেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র তালেবুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, "রাজধানী ঢাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে চেষ্টা করছি ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে, যাতে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো যায়।"
গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি-ঘরে হামলা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। শুক্রবার রাতে গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
এই পরিস্থিতিতে ঢাকার অদূরে গাজীপুরে বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।
পরে গাজীপুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে এখন পর্যন্ত ১৫জনকে আটক করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
যদিও শুক্রবার এক বিবৃতিতে অবিলম্বে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দেশের সকল নাগরিককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
'অপারেশন ডেভিল হান্ট'
ছাত্র সমাজের উদ্দেশে শেখ হাসিনার ভাষণের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন থেকে শুরু হয় হামলা-ভাঙচুর।
পরে এটি দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। দুই দিন ধরে চলমান এসব ঘটনায় সরকারের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন অনেকে।
ক্রমাগত হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের কারণে দেশজুড়ে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, সরকার তা নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা প্রকাশ করতে না পারলে রাষ্ট্র ও সরকারের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশের একটি বড় দল বিএনপি।
এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার বিকেলে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদদের কারো সম্পত্তিতে আর কোনো হামলা না করার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
অবিলম্বে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরিভাবে স্বাভাবিক করতে সকল নাগরিকের প্রতি আহ্বানও জানানো হয়। কোনো অজুহাতেই কোনো নাগরিকের উপর আর যেন আক্রমণ না করা হয়।
এমন অবস্থার মধ্যেই শুক্রবার রাতে সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে ভাঙচুর-হামলা ও এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সারা দেশে।
গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় শনিবার রাত থেকেই গাজীপুর এলাকাসহ সারাদেশে 'অপারেশন ডেভিল হান্ট' নামে একটি অভিযান শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।
সভা শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে "অপারেশন ডেভিল হান্ট" পরিচালনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, 'অপারেশন ডেভিল হান্ট' এর ব্যাপারে রোববার প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে।
সুপ্রিম কোর্টে কড়া নিরাপত্তা
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘর স্থাপনায় ভাঙচুরের পাশাপাশি দেশের কয়েকটি জায়গায় মুর্যাল ও ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।
এমন পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সবাইকে নির্দেশ দিলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি।
এর মধ্যেই শনিবার সকালে হঠাৎই সুপ্রিম কোর্টের জুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
পুরো সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ সদস্যদের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখা যায়।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মনসুর বিবিসি বাংলাকে বলেন, "দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।"
পুলিশ জানিয়েছে রাজধানী ঢাকায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
ডিএমপির মিডিয়া শাখার ডিসি তালেবুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, "রাজধানীর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে চেষ্টা করছি ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে।"
পুলিশ বলছে, ঢাকাসহ সারাদেশেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন জায়গায় বাড়তি ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।