ঢাকা, সোমবার ২৫, নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৫৩:৪৬ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

মিশিতার ‘বেবিস এন মাদারস স্টাফ’

সালেহীন বাবু

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৩৪ এএম, ২১ আগস্ট ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ১০:৪০ পিএম, ২৩ আগস্ট ২০১৮ বৃহস্পতিবার

বাংলাদেশে নারীরা বর্তমানে চাকরি ও ব্যবসাক্ষেত্রে সাফল্যের পরিচয় দিচ্ছেন। ব্যবসা ক্ষেত্রে নারীদের কাছে অনলাইন ব্যবসা একটা বড় মাকের্টপ্লেস হয়ে দাড়িয়েছে। দেশে অনেক নারীই এখন অনলাইন ব্যবসা করছেন। সফলতাও পাচ্ছেন। আবার অনেক নারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাল ফল করে ভাল চাকরিতে ঢুকে পড়ছেন। সেখানেও সফল হচ্ছেন। কিন্তু এমন যদি হয় একজন নারী একই সাথে চাকরি এবং অনলাইন ব্যবসা দুটোই করছেন। শুধু তাই নয় পরিবারও দেখছেন। বিষয়টা পুরোটা অসম্ভব বটে। বাস্তবে এ অসম্ভবকেই সম্ভব করেছেন বাংলাদেশের নারী মিশিতা নাজনীন।

 
মিশিতা নাজনীনের ‘বেবিস এন মাদারস স্টাফ’ অনলাইন সেলিং পোর্টালটি মার্কেটে খুবই জনপ্রিয়। এ ব্যবসার পাশাপাশি তিনি চাকরি করছেন পুরোদমে। সংসার ধর্ম তো আছেই। সব ব্যাপারেই পূর্ণ সহযোগিতা পাচ্ছেন স্বামী ইশতাক মোর্শেদের কাছ থেকে।


ছোটবেলা থেকেই ভাল ছাত্রী ছিলেন মিশিতা। উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর ইডেন কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হন। ২০১১ সালে স্নাতক পাস করেন। ২০১২ সালে একই কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করেন। উচ্চতর পড়াশোনার জন্য হিসাববিজ্ঞানের উপর আইসিএমএবিতে ভর্তি হন মিশিতা। ভর্তি হওয়ার পর পরই মিশিতার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পরও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকেন। পরে একটি বাচ্চা হওয়ার পর পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। হিসাববিজ্ঞানে প্রথম পার্ট পাস করার পর আর পড়ায় এগোতে পারেননি। বাচ্চাকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সারাদিন বাসায় বসে থাকতে থাকতে বিষন্নতা চেপে ধরে নাজনীনকে।

 

সে সময়টা নিজের জীবনের কষ্টকর সময় বলে উল্লেখ করেন মিশিতা। নিজেই ভেবে বের করেন কি করবেন। স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে বলেন, তখন আমি চিন্তা করলাম এমন কিছু করা যেত যা বাসায় বসেই করা সম্ভব। আমি যদি অফলাইন কোন ব্যবসা করতে চাই তাহলে আমাকে বাইরে বের হতেই হবে। যেটা আমার পক্ষে সম্ভব না। তাহলে কি দিয়ে শুরু করব। চিন্তা করলাম অনলাইনে ব্যবসা করব। বাচ্চাদের পোশাক অনলাইনে দিতে পারলে একদিকে আমার বাচ্চার পোশাক হয়ে যায়। অন্যদিকে ব্যবসাও দাড়িয়ে যায়। পরে বিষয়টি আমার স্বামীকে জানালে সে এ ব্যাপারে আমাকে পূর্ণ সমর্থন দেয়।

 

 
যেই ভাবা সেই কাজ। ২০১৬ সালের মার্চে মাত্র ২০ হাজার টাকা নিয়ে অনলাইন ব্যবসা শুরু করেন মিশিতা। অনলাইন সাইটের নাম দেন ‘বেবিস এন মাদারস স্টাফ’ । ব্যবসার প্রথমে অনেক প্রতিবন্ধকতার শিকার হন। সে সময় মিশিতার স্বামী ইশতাক মোর্শেদ স্ত্রীর পাশে এসে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। প্রথমে ডাইপার বিক্রি দিয়ে শুরু হয় ব্যবসা। এরপর বাচ্চাদের কসমেটিক্স, ড্রেসও এ সাইটে পাওয়া গেল। কাস্টমার ভাল সার্ভিস পাওয়ায় অন্যান্য পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। বর্তমানে বেবি এন মাদার স্টাফে ডাইপার, ওয়েট ওয়াইট, কসমেটিক্স, কিপার, রামপার, স্লিপসুট, জুতা, ব্যাগ, মেটারনিটি আাইটেম পাওয়া যায়। মোট কথা প্রেগনেন্সি টাইম থেকে শুরু করে ভূমিষ্ঠ বাচ্চার ৩ বছর বয়স পর্যন্ত যা যা লাগে তার সবকিছুই পাওয়া যায়।

 

বর্তমানে বেবি এন মাদার স্টাফে তিনজন লোক কর্মরত আছেন। তারা পণ্যগুলো সঠিক জায়গায় পৌঁছে দেন। এখন কেমন সাড়া পাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে মিশিতা বলেন, সাড়া ভাল পাচ্ছি। এমন অনেক ক্লায়েন্ট আছে যারা সদ্যজাত বাচ্চার পোশাক কিনেছে। যে বাচ্চার জন্য পোশাক কিনেছে সে বাচ্চার বয়স ২ বছর পার হয়ে গেছে। তারপরেও আমাদের এখান থেকে কিনছেন। নতুন ক্রেতা আসছেন।

 

দিনকে দিন অনলাইন মার্কেটগুলো কেন জনপ্রিয় হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে মিশিতা বলেন, আগে মানুষের কিছুু কিনতে হলে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হত। যেমন একজন মা তার সন্তানের জিনিস কেনার জন্য নিউমার্কেট, গুলশান বা অন্যান্য যে কোন মার্কেটে যেতে হত। একটি ছোট বাচ্চাকে নিয়ে একজন মার এত ভীড়ে যাওয়া সম্ভব নয়। বাড়ির কর্তা নিজের কাজ নিয়ে দৌড়াচ্ছেন। মার একাই থাকতে হচ্ছে। মা এখন কি করবে। ফলে বাধ্য হয়ে অনলাইনের দিকেই ধাবিত হয় সবাই। খরচ, সময়, কষ্ট-এ তিনটি কারণেই মানুষ অনলাইন থেকে পণ্য নেয়। বাজারদরের দামের সাথে অনলাইনের পণ্যের দামের তেমন কোন পার্থক্য থাকেনা। 



ব্যবসার পাশাপাশি ১ বছর ধরে কনফিডেন্স পাওয়ার হোল্ডিংস লিমিটেডে চাকরি করছেন মিশিতা। চাকরি করার ব্যাপারে মিশিতা বলেন, আমার স্বামী ইশতাক মোর্শেদ ই কমার্স নিয়ে কাজ করেন। সে ট্যুরিজম, ওয়েব ডেভলপমেন্টের সাথে আছে। আমার ওয়েবসাইটের বায়ার হ্যান্ডেলিং সে করে। পণ্য ডেলিভারির জন্য আলাদা লোক আছে। ফলে ব্যবসায় এখন আমার এত সময় দিতে হয় না। চাকরি করছি আমি যে বিষয়ে পড়েছি তার উপর। এতে আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে।

 

ব্যবসা, চাকরি দুটো একসাথে চালাতে পারবেন কিনা জানতে চাইলে মিশিতা বলেন,অবশ্যই পারব। ইশতাক আমাকে সব ব্যাপারে সহযোগিতা করে। সে স্বামী হিসেবে অসাধারণ। ও এভাবে পাশে থাকলে সব পারব।