শানম্যান, নিজ পরিবারে সুপারহিরো
সালেহীন বাবু
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ১২:৪৯ এএম, ২১ আগস্ট ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ০১:১৪ এএম, ২২ আগস্ট ২০১৮ বুধবার
স্পাইডারম্যান,সুপারম্যান,ব্যা
আসলে শানম্যান হল আমাদের মতই সাধারণ মানুষ। সারাবছর তাদের খুব একটা দেখা না গেলেও কোরবানির ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই প্রতিদিন খুব সকাল থেকেই এদের হাাঁকডাক শোনা যায়। সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত দেখা মিলছে তাদের।
দা-বটি ধার দেবেন...দা-বটি...। এলাকায় প্রবেশ করেই শানম্যান জোরে আওয়াজ তুলছেন, দা-বটি ধার দেবেন...দা বটি...। শুধু দা-বটিই নয়, সঙ্গে রয়েছে শীলপাটাও।
শ্রমজীবী মানুষের হাজার পেশার ভিড়ে আরেকটি পেশা শানম্যান। পুরোনো দা, বটি, শীলপাটা, ছুরিতে শান দেয়া তাদের কাজ। কাঁধে শান মেশিন নিয়ে পাড়ায় মহল্লায় ঘুরতে দেখা যাচ্ছে শানম্যানদের। অনেকে হ্যান্ড মাইকও ব্যবহার করছেন।
রাজধানীতে প্রায় দুইশরও বেশি শানম্যান রয়েছে। বছরজুড়ে তারা অবহেলিত থাকলেও, কোরবানির ঈদের আগে গৃহিণীদের কাছে তাদের কদর বেড়ে যায়। কারণ এই ঈদে গরু জবাইয়ের জন্য দা, ছুরি, চাপাতিতে ধার থাকা জরুরি।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার শমসের আলী। বয়স ৫৫। ১২ বছর ধরে তিনি এ পেশায় রয়েছেন। থাকেন রাজধানীর সিপাইবাগ এলাকায়। মালিবাগে গৃহিণী সোমার বাসায় বটি ধার করছেন তার মেশিন দিয়ে। শমসেরকে ঘিরে এক ধরনের জটলা শুরু হয়েছে। তার সামনে বেশ কয়েকটি বটি, দা, ছুরি দেখা গেল। ব্যস্ততার সাথে একের পর এক মেশিনে ধার দিচ্ছেন।
এ সময় কথা হয় গৃহিণী সোমার সাথে। তিনি বলেন, এখানে শুধু আমার বাসার দা, বটি না আরও ১০টি পরিবারের দা-বটিও রয়েছে। আমার বাসায় ধার করাচ্ছি বলে অন্য সবাই শমসেরের কাছ থেকে এখান থেকেই ধার করিয়ে নিচ্ছে।
সবগুলো ধার দেয়া শেষ হলে শমসের কথা বলার সময় পেলেন। বলেন, আমি রাজধানীর সেগুন বাগিচা, মালিবাগ, গুলশান, বনানীতে মানুষের বাসায় বাসায় গিয়ে দা-বটিতে শান দেই। মাত্র ৩৫০০ টাকায় শান দেয়ার মেশিনটি কিনেছিলাম। বর্তমানে শান দিয়ে আমি প্রতি মাসে আয় করি প্রায় এগার হাজার টাকা। এই টাকায় আমার পাঁচ সদস্যের পরিবার কোনমতে চলে।
শেরপুর এলাকার আরেক শান ম্যান মুক্তাদির ফকির। থাকেন হাজারীবাগে। তিনি আগে কাঠমিস্ত্রীর কাজ করলেও, গত ছয় বছর ধরে ঢাকায় দা, বটি, শীলপাটা ধার দিচ্ছেন। তিনি জানান, তার বন্ধুর কাছ থেকে ছয় দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি মেশিন চালানো শিখেছেন। পরে তিনি নিজেই তৈরি করে নিয়েছেন শান মেশিন। শান মেশিন তৈরিতে তিনি ব্যবহার করেছেন সাইকেলের হ্যান্ডেল, চেইন, সিট এবং পাথার ও কাঠ। শান মেশিন তৈরিতে তার খরচ পড়েছে প্রায় আড়াই হাজার টাকা।
মুক্তাদির ফকির মানুষের বাসায় বাসায় গিয়ে কাজ করেন। নিজের উপস্থিতি জানান দেন হ্যান্ড মাইকে। তিনি সাধারণত ধানমন্ডি, কলাবাগান, আজিমপুর, পুরোনো ঢাকায় কাজ করেন। তিনি বলেন, তিন সময়ে আমাদের চাহিদা বেশি- রমজানের ঈদ, কোরবানির ঈদ ও গ্রামে ধান কাটার মৌসুমে। কোরবানির ঈদের দুইদিন আগে শান ম্যানদের কদর বেড়ে যায়। তখন অনেকে লাইন দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়। এ সময় তার আয় দৈনিক দুই-তিন হাজার টাকা পর্যন্ত হয়।
শান ম্যানরা বটি শান দিতে নেন ৫০ টাকা, দা ৭০ টাকা, ছুরি ২০ টাকা, চাপাতি ৬০ টাকা, শীলপাটা ১০০ টাকা। তবে স্থানভেদে টাকার অঙ্কের পার্থক্য হতে পারে।
শানম্যানরা কোন সুপারপাওয়ার হিরো নয়। তারা খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। তাদের আয়ের উপর ভরসা করে তাদের পরিবার চলে। আমাদের কাছে তারা সাধারণ হলেও নিজেদের পরিবারের কাছে এই শানম্যানরাই প্রকৃত সুপারহিরো।