ঢাকা, সোমবার ১৮, নভেম্বর ২০২৪ ১৪:৩৯:৩৩ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

নবজাতকের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা

ডা. কামরুল আহসান

উইমেননিউজ২৪.কম

প্রকাশিত : ১০:৩৩ পিএম, ২৩ আগস্ট ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১১:৩৩ এএম, ২৪ আগস্ট ২০১৮ শুক্রবার

মায়ের গর্ভে থাকাকালে শিশু প্রাকৃতিকভাবেই সুরক্ষিত থাকে। জন্মের পরই শিশুর রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কম থাকে, তাই নবজাতক পরিচর্যার সময় বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

যারা শিশুদের পরিচর্যা কাজে নিয়জিত, তারা অবশ্যই শিশু পরিচর্যার আগে ও পরে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিবেন। লক্ষ রাখুন শিশু কখন পায়খানা ও প্রস্রাব করে এবং সাথে সাথে তা পরিষ্কার করুন। পায়খানার পর নরম কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করুন এবং প্রয়োজনে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন।

এবার আসা যাক গোসলের ব্যাপারে, জন্মের ৭২ ঘণ্টা বা ৩ দিন শিশুকে গোসলের প্রয়োজন নেই। পরবর্তীতে প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিদিন বা ১ দিন পর পর গোসল করানো যেতে পারে। গোসলের পানি কুসুম গরম কিনা তা লক্ষ রাখুন। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা গরম পানি ব্যবহার করবেন না। অনেক সময় ধরে শিশুকে গোসল করাবেন না। গোসলের পানিতে জীবাণুনাশক মিশানো উচিত নয়। এতে শিশুর কোমল ও সংবেদনশীল ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। শীতকালে বা মেঘলা দিনে শিশুর গোসলের ব্যাপারে সর্তক থাকতে হবে।

জন্মের প্রথম ৩-৪ সপ্তাহ শরীরে তেল বা সাবান মাখানোর প্রয়োজন নেই। পরবর্তীতে তেল বা সাবান ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। তীব্র ক্ষার যুক্ত সাবান শিশুর ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। সাবান তেল বা শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হলে ভালো কোম্পানির বর্ণহীন, গন্ধহীন, হাইপো অ্যালার্জেনিক প্রডাক্ট ব্যবহার করুন।

গোসলের সময় বিশেষ নজর দিন চামড়ার ভাঁজ গুলোতে, বিশেষ করে বগলে, কনুই, হাতের আঙ্গুলের মাঝে, গলার চামড়ার ভাঁজে, কুঁচকিতে, যাতে কোনও ময়লা না জমে। কখনো সরাসরি শিশুর ত্বকে সাবান লাগাবেন না, প্রথমে হাতে সাবান মেখে ফেনা তুলে তাঁর পর গায়ে মাখুন। নবজাতকের মুখমণ্ডলে সাবান ব্যবহার করবেন না। গোসলের সময় শিশুর কানে যাতে পানি না যায় সেদিকে লক্ষ রাখুন।

গোসলের পর শিশুকে দ্রুত নরম তোয়ালে দিয়ে আলতোভাবে শরীর মুছিয়ে দিন। খুব জোরে ঘষে শরীর মুছবেন না। এতে শিশুর নরম কোমল ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। যত দিন পর্যন্ত শিশুর নাভি না পড়ে ততদিন পানিতে ডুবিয়ে গোসল করানোর চাইতে শরীর নরম কাপড় দিয়ে স্পঞ্জ করাই ভালো। গরমের সময় অনেকে গোসলের পর ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করেন। যদিও এতে কোনও বাড়তি সুবিধা নেই। পাউডার যদিও ব্যবহার করেন, তবে হাতে বা পায়ে ব্যবহার করুন। উপর থেকে ছিটিয়ে পাউডার ব্যবহার করলে নাকে বা চোখে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

জন্মের পরপরই অনেকে শিশুর মাথার চুল কাটার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। যার কোনও প্রয়োজন নেই। অনেক সময় তাড়াহুড়া করে চুল কাটার সময় মাথার নরম ত্বক কেটে যেতে পারে। তাছাড়া জন্মের পরপরই মাথার চুল কাটলে নবজাতকের শরীরে তাপমাত্রা কমে যাওয়ার আশংকা থাকে।

নবজাতকের চোখের যত্ন নিন, প্রতিদিন ভেজা কটন বাড বা পরিষ্কার তুলো দিয়ে চোখ পরিষ্কার করুন। এক চোখের ব্যবহার করা কটন বাড বা তুলা অন্য চোখে ব্যবহার করবেন না। এতে করে কোনও চোখে সংক্রমণ থাকলে তা অন্য চোখে সংক্রমিত হতে পারে।

অনেকে শখ করে বাচ্চার চোখে কাজল দেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা শিশুর চোখে কাজল ব্যবহার না করারই পরামর্শ দেন। কাজল থেকে ট্রকোমা ইনফেকশন এবং লেড পয়জনিংয়ের সম্ভাবনা থাকে। ট্রকোমা সংক্রমণ অন্ধত্বের প্রধান কারণ। সুতরাং শিশুর চোখে কাজল ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।

লিখেছেন : ডা. কামরুল আহসান, শিশু বিশেষজ্ঞ, সরকারি কর্মচারি হাসপাতাল, ঢাকা।