ঢাকা, সোমবার ১৭, মার্চ ২০২৫ ১২:৪১:৫১ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

কাপ্তাইয়ের স্তম্ভহীন বড় মসজিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:১৩ পিএম, ১৬ মার্চ ২০২৫ রবিবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ, এর পাশের টিলাতেই ১৩ হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে চোখ জুড়ানো নান্দনিক স্থাপনা। যার অনন্য নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করে আগতদের। দৃষ্টিনন্দন ও সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়েছে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী পেপার মিলের (কেপিএম) মসজিদ নির্মাণ। স্বাধীনতার আগে প্রতিষ্ঠিত মসজিদটি দেশের সবচেয়ে বড় স্তম্ভবিহীন মসজিদ। ১৯৬৭ সালে এটি নির্মাণ করা হয়, যেখানে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন চার হাজার মুসল্লি।

মসজিদটির নির্মাণশৈলীতে রয়েছে মুসলিম ঐতিহ্যের বিভিন্ন নিদর্শন। মসজিদের চার দেয়াল ছাড়া মাঝে কোনো স্তম্ভ নেই। তিন পাশে রয়েছে ২৩টি জানালা, ৯টি দরজা। এ ছাড়া উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব দিক দিয়ে রয়েছে প্রবেশপথ।

সচরাচর দালান নির্মাণে সমান ছাদ ব্যবহার করা হলেও এটি নির্মাণে বিম থেকে আড়াআড়িভাবে ঢেউটিন আকৃতিতে ছাদ তৈরি করা হয়েছে। ধারণা করা হয়, এ কারণে ছাদের চাপ কমে যাওয়ায় স্তম্ভের প্রয়োজন পড়েনি। এই মসজিদে মুসল্লিরা যেখানেই দাঁড়ান, প্রত্যেকেই খতিব বা ইমামকে দেখতে পান। এতে প্রাকৃতিকভাবে বাতাস প্রবেশের পথ আছে তাই ভেতরটা শীতল। মসজিদের ভেতর কাঠের ফ্রেমের ওপর হার্ডবোর্ড দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে সিলিং। রয়েছে বারান্দাসহ ১৭টি কাতার। প্রতিটি কাতারে অনায়াসে দাঁড়াতে পারেন দুই শতাধিক মুসল্লি। মসজিদে দৃষ্টিনন্দন ঝাড়বাতি রয়েছে ৩৮টি।

জানা যায়, ১৯৫৯ সালে পাকিস্তানের দাউদ গ্রুপ কর্ণফুলী পেপার মিলের (কেপিএম) দায়িত্ব নেওয়ার পর মসজিদটি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। ১৯৬৭ সালের ৮ ডিসেম্বর কেপিএমের আবাসিক এলাকায় মসজিদটির ভিত্তি স্থাপন করেন দাউদ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান আহমেদ দাউদ এইচ কের মা হাজিয়ানী হানিফা বাঈ। মসজিদটির নাম রাখা হয় কেপিএম কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। তবে তা স্থানীয়দের কাছে ‘কেপিএম বড় মসজিদ’ নামে পরিচিত।

মসজিদটি যুগ যুগ ধরে অনেক ঐতিহ্য, ইতিহাসের সাক্ষী বহন করছে। মসজিদ নির্মাণের প্রত্যক্ষদর্শী বশির খান জানান, মসজিদ নির্মাণে নির্মাণসমাগ্রী আনা হয়েছিল করাচি থেকে। পুরো এক বছর ধরে নির্মাণকাজ করেছেন ভারতের প্রকৌশলীরা।

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী নজরুল ইসলাম লাভলু বলেন, ছোটবেলা থেকেই এই মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় করি। এটি তুরস্কের একটি মসজিদের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে। পিলারবিহীন এমন বিশাল মসজিদ বাংলাদেশে দ্বিতীয়টি নেই। ঐতিহাসিক মসজিদকে হেরিটেজ ঘোষণা করে সরকারি তত্ত্বাবধানে নেওয়ার দাবি জানাই।

স্থানীয় সাকিব হোসেন বলেন, ভাবতেই পারছি না ৫৮ বছর আগের প্রকৌশলীরা কীভাবে এটা তৈরি করলেন।

জানা যায়, স্বাধীনতার পর মসজিদটির পরিচালনার দায়িত্ব পায় কেপিএম কর্তৃপক্ষ। এখন ঋণের ভারে জর্জরিত কেপিএম। তাই মসজিদটিরও হচ্ছে না দেখভাল। বৃষ্টির পানি ঢুকে কোথাও কোথাও ঝরে পড়েছে সিলিং। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে মসজিদটি। মিল কর্তৃপক্ষ মসজিদ পরিচালনায় কমিটি করে দিয়েছে। আপাতত স্থানীয়দের দানেই চলছে মসজিদটির কার্যক্রম।

চট্টগ্রামের রাউজান থেকে নামাজ আদায় করতে আসা শফিকুল ইসলাম বলেন, খুব সুন্দর মসজিদ, তবে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাটির এমন করুণ অবস্থা দেখব ভাবতে পারিনি। সিলিং ভাঙা, ওপরে তাকালেই বোঝা যায় ছাদ বেয়ে পানি পড়ে। এখনই এর সঠিক সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।

মসজিদ নির্মাণের সময় কেপিএমে চাকরি করতেন আবু হানিফ মজিদ। তিনি বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সৌন্দর্য হারাতে বসেছে মসজিদটি। পলেস্তারা খসে পড়েছে অনেক জায়গায়। ছাদের নিচের ফলস সিলিংগুলোও ভেঙে গেছে।

ফজলুল হক নামে আরেক মুসল্লি বলেন, ১৯৭২ সাল থেকে এখানে নামাজ পড়ি। তখন মসজিদটি দৃষ্টিনন্দন ছিল। মুসল্লির চাপে জায়গা হতো না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মসজিদটি নষ্ট হওয়ার পথে। বর্ষাকালে মসজিদে পানি ঢুকে, তখন আমাদের নামাজ পড়তে কষ্ট হয়। আমরা অনেকবার কেপিএম ম্যানেজমেন্টের কাছে বিষয়টি জানিয়েছি, কিন্তু তারা আমলে নেয়নি। এখন মসজিদের দানবাক্সের টাকায় টুকটাক সংস্কারকাজ চলছে।

মসজিদের ইমাম ও খতিব এ টি এম আবদুল্লাহ বলেন, পিলারবিহীন হওয়ার কারণে দূরদূরান্ত থেকে অনেকে এটি দেখতে আসেন। বর্তমানে সংস্কারের অভাবে মসজিদটি সৌন্দর্য হারাতে বসেছে।

মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য আবদুল আজিজ ভূঁইয়া বলেন, কেপিএমের অবস্থায় আগের মতো ভালো না থাকায় বর্তমানে মসজিদের সংস্কারকাজ কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। মসজিদটির সংস্কারে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।