নারীদের অবদানকে সম্মান জানিয়ে প্রকাশিত হলো ‘তুমি যেমন’
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১০:৪৬ এএম, ১৮ মার্চ ২০২৫ মঙ্গলবার

সংগৃহীত ছবি
সমাজে নারীদের অসামান্য অবদানকে সম্মান জানিয়ে প্রকাশিত হলো ‘তুমি যেমন’ শিরোনামের একটি চিঠি সংকলন গ্রন্থ । এই প্রকাশনার মাধ্যমে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ শ্রদ্ধা জানিয়েছে বিশ্বের প্রতিটি নারীকে। যারা অসমতাপূর্ণ পৃথিবীর মধ্যে বসবাস করেও মানব সভ্যতাকে পরিপূর্ণতা দিয়েছেন। নিজেকে উজাড় করে রাঙিয়েছেন পৃথিবী, সাজিয়েছেন বিশ্বসংসার।
সোমবার (১৭ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ঢাকায় এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের মিশন প্রধান আন্দ্রে কার্স্টেন্স, কানাডিয়ান হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি (ডেভেলপমেন্ট-জেন্ডার ইকুয়ালিটি) স্টেফানি সেন্ট-লরেন্ট ব্রাসার্ড, এসিআই কনজ্যুমার ব্র্যান্ডের চিফ বিজনেস অফিসার কামরুল হাসান, প্রথম আলোর সহ-সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী , বিশিষ্ট সাংবাদিক শাহনাজ মুন্নী প্রমুখ ।
এ বছরের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ,“অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন নারী ও কন্যার উন্নয়ন”। এই প্রতিপাদ্যের আলোকে, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, গণমাধ্যমকর্মী এবং বিভিন্ন খাতের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা একত্রিত হয়ে জেন্ডার সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং ভবিষ্যৎ নির্মাণে নারীদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস স্বাগত বক্তব্যে নারী ও কন্যা শিশুদের ক্ষমতায়নের কথা তুলে ধরেন ।
বক্তারা নারীরা পরিবার ও সমাজে যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় এবং যা তাদের অগ্রগতি ও অধিকার রক্ষার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, সে বিষয়গুলো তুলে ধরেন। বিশেষভাবে, নারীদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে জরুরি ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
তারা জেন্ডার সমতা, নারী কন্যা শিশুর ক্ষমতায়ন এবং ভবিষ্যৎ গঠনে কন্যা শিশু ও নারীদের ভূমিকা নিয়েও আলোচনা করেন।
স্টেফানি সেন্ট-লরেন্ট ব্রাসার্ড তাঁর মূল্যবান বক্তব্য প্রদান করেন, তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক নারী দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, নারীরা অনেক দূর এগিয়ে গেলেও এখনো সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। বিশেষ করে, এমন একটি সমাজ গড়ে তোলা জরুরি যেখানে সবাই নিরাপদ থাকে। আমরা নারীদের জন্য আরও সুযোগ তৈরি করতে এবং তাদের জন্য একটি টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে কাজ করছি। ন্যায়বিচারের পক্ষে কথা বলা এবং যারা নিজেদের কথা বলতে পারে না, তাদের জন্য আওয়াজ তোলা আমাদের সবার দায়িত্ব। জেন্ডার সমতায় স্থায়ী পরিবর্তন আনতে হলে নারীদের অর্জন উদযাপন করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আন্দ্রে কার্স্টেন্স বলেন, আমরা শুধু একটি দিনের জন্য নারী দিবস উদযাপন করবোনা, প্রতিদিনই নারী দিবস পালন করা উচিত। জেন্ডার সমতার সংস্কৃতি যদি আমরা প্রতিদিন চর্চা করি, তবেই এটি অর্থবহ হবে।
এই বইটি একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে, যেখানে তরুণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাতে জেন্ডার সমতা আরও বিকশিত হয়। শিক্ষা ও নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে নারীরা তাদের দক্ষতা অসাধারণভাবে প্রমাণ করেছেন। আর এই বইটিতে সেই প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, শব্দের শক্তি রয়েছে মানুষকে সুস্থ করার, দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করার এবং ক্ষমতায়নের টেকসই পথে এগিয়ে যাওয়ার।আসুন, এই বইটিকে নারীদের কণ্ঠস্বর প্রকাশের সেতু হিসেবে গ্রহণ করি’।
সাংবাদিক শাহনাজ মুন্নী বলেন, ‘ধর্ষণের শিকার হয়ে মৃত্যু বরণ করেছে আছিয়া। ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যাধি। এটি দূর করতে হলে আমাদের প্রয়োজন সাংস্কৃতিক পরিবর্তন। তাদের বাধা নিয়ে আমাদের কথা বলতে হবে। তাদের নিরব অবদান কে স্বকৃীতি দিতে হবে। তাহলেই সমাজে পরিবর্তন আসবে’।
কামরুল হাসান বলেন, ‘দেশের যেখানে ৫০% নারী সেখানে তাদের অবদান তার তুলনায় অনেক বেশি। একটি নারীকে আমরা গৃহিণী বলি, তাদের কাছ থেকেই আমরা সব কিছু শিখি, কিন্তু গৃহিণী হিসেবে আমরা কখনোই তাদের অবদান কে স্বীকার করি না। কর্ম ক্ষেত্রেও নারীদের অংশ গ্রহণ কম’।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ‘তুমি যেমন’ প্রকাশনার উদ্যোগ মূলত বাংলাদেশের নারীদের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে। এটি এমন এক সংকলন যেখানে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সহকর্মী ও যুব অংশীদারদের লেখা চিঠি সংকলিত হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের বেশ কয়েকজন যুব ও যুব নারীদের তাঁদের নিজস্ব ভাষায় জানিয়েছেন নারীর প্রতি তাদের সম্মান আর ভালোবাসার কথা। এসব চিঠির মাধ্যমে তারা সেই অসাধারণ নারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন, যারা তাদের জীবনকে অনুপ্রাণিত করেছেন।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ নারীদের ক্ষমতায়ন, তাদের কণ্ঠস্বরকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং এমন একটি বিশ্ব গঠনের জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যেন কন্যা শিশু ও নারীরা তাদের নিজস্ব পরিচয়ে এগিয়ে যেতে পারে এবং কাজ করে তাদের সমান অধিকার, ক্ষমতায়ন এবং সুযোগ নিশ্চিত করতে যাতে কেউ পিছিয়ে না থাকে। এই প্রতিষ্ঠানটি শুধু মেয়েদের ক্ষমতায়নকেই অগ্রাধিকার দেয় না, বরং দেশে নারী ও কন্যাশিশুর অধিকার এবং জেন্ডার সমতার পক্ষে সকলের প্রতিশ্রুতিকে আরও সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করে।