৮৫ ভাগ নারী পোশাক শ্রমিক যৌন হয়রানির শিকার
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ০১:২৫ পিএম, ২৮ আগস্ট ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৬:৪০ পিএম, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সোমবার
কর্মক্ষেত্রে ৮৫ শতাংশ পোশাক শ্রমিক যৌন হয়রানির শিকার হয় বলে এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে। পোশাক কারখানার সুপারভাইজার থেকে শুরু করে মধ্যম সারির কর্মকর্তারা গার্মেন্টস শ্রমিকদের এই যৌন হয়রানির জন্য দায়ী।
সোমবার রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টারে আয়োজিত বাংলাদেশ ‘পোশাক শিল্পে নারীর প্রতি সহিংসতা’ শীর্ষক সেমিনারে এ পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়।
নারীদের নিয়ে কাজ করা পাঁচটি সংগঠন, ব্ল্যাস্ট, ব্র্যাক, ক্রিশ্চিয়ান এইড, নারীপক্ষ ও এসএনভির যৌথ উদ্যোগে সজাগ এই সেমিনারের আয়োজন করে। সজাগ-এর প্রকল্প পরিচালক রওশন আরা সেমিনারে পরিসংখ্যান উপস্থাপন করেন। পরিসংখ্যানের ওপর আলোচনা করেন সজাগ কোয়ালিশনের দলনেতা মাহীন সুলতান।
চলতি বছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুর এলাকার ৮টি কারখানার ৩৮২ নারী পোশাক শ্রমিকের সঙ্গে ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন ও সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এ পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়।
পরিসংখ্যানে আসা প্রত্যেকটি কারখানা কমপ্লায়েন্সভুক্ত এবং এর মধ্যে অর্ধেক সজাগ কোয়ালিশনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। কমপ্লায়েন্সের তালিকার বাইরের কারখানাগুলোর পরিসংখ্যান করলে এ হয়রানির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হয়।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, শ্রমিকদের ২২ শতাংশ বলেছেন তারা কারখানার ভেতরে অথবা বাইরে শারীরিক, মানসিক ও যৌন হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন। ৬৬ শতাংশ শ্রমিক বলেছেন, তারা কারখানার কমিটির কাছে কোনও সহযোগিতা বা প্রতিকার চান না। কারণ কমিটির কাছে কোনও বিচার পাওয়া যায় না। ১১ শতাংশ নারী শ্রমিক মনে করেন, তারা কর্মক্ষেত্রে অনিরাপদ। ৮৩ শতাংশ মনে করেন, কর্মক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে অশালীন বা অকথ্য ভাষায় কথা বলা, কারখানায় প্রবেশের সময় নিরাপত্তা কর্মীর অস্বস্তিকর চেকিং, পুরুষ সহকর্মীর অপ্রত্যাশিত স্পর্শ, যৌন সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা এগুলো হয়রানি। আর ৬৮ শতাংশ বলেন, কর্মক্ষেত্রে তেমন কোনও কার্যকর যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি নেই।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (আইন) বেগম মোরশেদা হাই বলেন, পোশাক কারখানায় নারী শ্রমিকের কর্মপরিবেশ পুরোপুরি হয়রানিমুক্ত করতে সচেতনতা তৈরির কোনো বিকল্প নেই। গার্মেন্টস সেক্টরে নারী শ্রমিকদের উপযোগী পরিবেশ তৈরির জন্য কাজ করছে সরকার। শিশুশ্রম বন্ধ, শিল্প সেক্টরের কর্মপরিবেশ উন্নয়ন, ডে কেয়ার এবং মাতৃত্বকালীন সুবিধাসহ সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন কারখানায় ৪ হাজার ২২৪টি ডে কেয়ার স্থাপন করেছে।
ডেভলপমেন্ট অব ইন্সপেকশন ফর ফ্যাক্টরিস অ্যান্ড এস্টাবলিশমেন্ট-এর যৌথ পরিদর্শক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শ্রমিকদের বেশি বেশি কাজের চাপ দিলেই উৎপাদন বাড়বে এমন চিন্তা ভাবনা থেকে মালিকদের বেরিয়ে আসা উচিৎ। কারণ অতিরিক্ত চাপের ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় না।
এ ছাড়াও নারীদের কর্মপরিবেশ তৈরির জন্য পরিবহন ব্যবস্থা, অভিযোগ ব্যবস্থা সহজীকরণ এবং মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর উপর জোর দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন খ্রিস্টান এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর শাকিব নবী, বাংলাদেশ এসএনভি নেদারল্যান্ডস ডেভলপমেন্ট অরগানাইজেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর জেস বেলানগর, নারী পক্ষের প্রকল্প পরিচালক রওশন আরা প্রমুখ।