আয়ানা প্রিসলি, এক কৃষ্ণাঙ্গ নারীর বিজয়গাঁথা
সালেহীন বাবু
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ০২:৫৭ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ১২:৫৭ পিএম, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সোমবার
আয়ানা প্রিসলি
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের কংগ্রেসে ইতহাস রচনা করে প্রথমবারের মত আফ্রিকান-আমেরিকান নারী হিসেবে ঠাঁই পেতে যাচ্ছেন আয়ানা প্রিসলি।
সম্প্রতি ম্যাসাচুসেটসের ডাকসাইটে ডেমোক্র্যাট নেতা মাইকেল কাপুয়ানোকে হারিয়ে তিনি রীতিমত সবাইকে অবাক করে দেন। ৪৪ বছর বয়সী বোস্টন সিটি কাউন্সিলর আয়ানা প্রিসলি হচ্ছেন একজন ডাকসাইটে কৃষ্ণাঙ্গ নারী রাজনীতিক।
বিজয়ের দিনটি ছিল তার কাছে ঐতিহাসিক। জয়ের পর তিনি সবার সাথে নেচেছেন,গেয়েছেন। প্রিয় জনতার কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে ভুলেননি।
জয়ের পর সাংবাদিক সম্মেলনে আয়ানা সবাইকে ধন্যবাদ জানান তাকে জয়যুক্ত করার জন্য। তিনি বলেন, এই জয় আপনাদের সবার জয় এবং আমাদের গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের জন্য একটি যুদ্ধ।
আজকে আমরা একসাথে জিতেছি। সারা সময়ের পরিশ্রমের জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ। আমরা একসাথে অনেক শক্তিশালী। যারা সবকিছুুর জন্য পরিবর্তন চান আমি কথা দিচ্ছি আমি পরিবর্তন করবো। থাকবো আপনাদের সাথে। খালি এটাই চাওয়া আমার পাশে আপনারা থাকবেন।
অবশ্য এত বড় অবস্থানে যেতে আয়ানাকে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। ছোটবেলা থেকে এ পর্যন্ত প্রতি পদে পদে সংগ্রাম করেছেন তিনি। কখনও পারিবারিক অশান্তি,কখনও অর্থনৈতিক সমস্যা। কখনও আবার বর্ণ বৈষম্য কিংবা দারিদ্রতা। একটা না একটা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জীবন চলেছে তার। তারপরেও কখনও হার মানেননি। এগিয়ে চলেছেন এবং সফলতা পেয়েছেন।
আয়ানা প্রিসলি ১৯৭৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি আমেরিকার শিকাগোতে জন্মগ্রহণ করেন । তার মার নাম সেন্ড্রা প্রিসলি বাবা মার্টিন প্রিসলি। সেন্ড্রা বিভিন্ন ধরনের কাজ করতেন। মার্টিন ছিলেন একটি কলেজের অধ্যাপক। আয়ানা যখন ছোট তখনই তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। প্রিসলি শিকাগোর নর্থ সাউথে বড় হন এবং সেখানের ফ্রেন্সিস ডব্লিউ পার্কার স্কুলে পড়াশোনা করেন।
পরে তার মা ব্রুকলিনে চলে আসেন এবং আবার বিয়ে করেন। এদিকে প্রিসলি স্কুল পাস করে কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু সেখানেও বাধা আসে। তার মার চাকরি চলে যায়। তার সৎ বাবাও ঠিকমত সাহায্য করতোনা। ১৯৯৪ সালে আয়ানা বাধ্য হয়ে পড়াশোনা বাদ দিয়ে চাকরি করা শুরু করেন।
প্রিসলি যখন বোস্টন সিটি কাউন্সিলর নির্বাচিত হন, তার মা প্রায়শই জনসভাতে যোগদান করতেন। সবাই তাকে আদর করে মামা প্রিসলি বলত।
প্রিসলি তার কর্মজীবন শুরু করেন যুক্তরাষ্ট্রের একটি জেলা প্রতিনিধি হিসাবে । সে সময় অনেক গরীব,অসহায় আর অক্ষম ব্যাক্তিদের সাথে তিনি কাজ করেন। তাদের কষ্ট উপলদ্ধি করেন।
পরে তিনি কেনেডি এর নির্ধারক হয়ে যান, তারপর সিনেটর কেনেডির রাজনৈতিক পরিচালক এবং জ্যেষ্ঠ সহকারী নির্বাচিত হন।
২০০৯ সালে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর জন কেরির (ডি-মেস) রাজনৈতিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তার পক্ষে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের সব কাজ করতেন।
২০০৯ সালের নভেম্বরে প্রথমবারের মত বোস্টনে সিটি কাউন্সিলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। ইতিহাস গড়ে জয়ী হয়ে ৪ জানুয়ারী ২০১০ তারিখে শপথ গ্রহণ করেন । তিনি বোস্টন সিটি কাউন্সিলের ১০০ বছরের ইতিহাসে প্রথম নারী হিসেবে এ শপথ গ্রহণ করেন। ১৫ জন প্রার্থীর ক্ষেত্রে প্রিসলি ছিলেন একমাত্র নারী প্রার্থী যিনি ৪২,০০০ ভোটের মধ্যে বেশিরভাগ ভোটই পান।
নভেম্বর ২০১১ বোস্টন সিটি কাউন্সিলের নির্বাচনে শহরের ২২ টি ওয়ার্ডের ১৩ টি জিতেছেন এবং তিনজনের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। নভেম্বর ২০১৩ এবং নভেম্বর ২০১৫ তে প্রিসলি শীর্ষে চলে আসেন।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে প্রিসলি জানান তিনি ৪ ই সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ম্যাসাচুসেটসের ৭ ম কংগ্রেস জেলার ২০১৮ নির্বাচন করবেন। ডেমোক্রেটিক প্রাথমিক মনোনয়নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিনিধিত্বকারী মাইকেল কাপুয়ানোকে তিনি তার চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করেন। কাপুয়ানো একজন ডাকসাইটে, অধিকার ত্যাগী অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা। তাকে হারানো এত সহজ ছিলনা।
কিন্তু এই অসাধ্য সাধন করে দেখালেন প্রিসলি। বর্তমানে তিনি তার স্বামী কনান হেরিসের সাথে ডরচেস্টারে বসবাস করেন। তাদের একটা সৎ মেয়েও আছে।
প্রিসলি তার কাজের সম্মাননা স্বরুপ এ পর্যন্ত অনেক পুরষ্কার পেয়েছেন। যার মধ্যে পাবলিক লিডারশিপ (২০১২),লিডারশিপ (২০১৪), রাইজিং স্টার পুরষ্কার (২০১৫), বোস্টন ম্যাগাজিনের জরিপে সেরা অনুকরণীয় নেতা হিসেবে পরিচিতি। ২০১৬ তে নিউওয়র্ক টাইমসের জরিপে সেরা ১৪ জন নেতার মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম এবং একমাত্র নারী নেত্রী।
প্রিসলি প্রমাণ করেছেন যোগ্যতার কাছে গাযের রং, বর্ণবৈষ্যমতা কিছুই নয়। সব ঠিক থাকলে তিনিই হবেন ভবিষ্যত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস।