ঢাকা, মঙ্গলবার ২৬, নভেম্বর ২০২৪ ১২:৩৫:০৯ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

চীনে রবীন্দ্রসাহিত্য

ইয়াং ওয়েই মিং স্বর্ণা

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:৩৬ পিএম, ২ নভেম্বর ২০১৮ শুক্রবার

বলাই বাহুল্য, পৃথিবীর দেশে দেশে মানুষের মনে বাংলা ভাষার অমর কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কালজয়ী কবিতা, গান ও অন্যান্য সাহিত্যসৃষ্টির অনবদ্য ও শতাব্দি-উত্তর প্রভাব রয়েছে। কবিও তা জানতেন। নইলে তিনি অমন অভ্রভেদী উচ্চারণ করলেন কী করে, সেই ‘১৪০০ সাল’ কবিতায়:
‘আজি হতে শতবর্ষ পরে
কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি
কৌতুহলভরে,
আজি হতে শতবর্ষ পরে!
আজি নববসন্তের প্রভাতের আনন্দের
লেশমাত্র ভাগ
আজিকার কোনো ফুল, বিহঙ্গের কোনো গান,
আজিকার কোন রক্তরাগ-
অনুরাগে সিক্ত করি পারিব কি পাঠাইতে
তোমাদের করে,
আজি হতে শতবর্ষ পরে?’

 

শতাধিক বছর পরে এসে আজ অসংখ্য চীনা পাঠকদের মতো আমিও বিস্ময়াভিভূত হয়ে পড়ি এশিয়ার প্রথম নোবেল বিজয়ী রবীঠাকুরের অমূল্য কবিতা ও গান। আমার বিশেষ সৌভাগ্য এই যে, আমি তাঁরই ভাষায়, অর্থাৎ সুমধুর বাংলা ভাষায়, তাঁর সাহিত্যের রূপ-রস-গন্ধ মেখে নিতে পারছি আমার অনুভবের তারে তারে। লোকান্তরিত সেই মহা-মনীষীকে আমিও বাংলা ভাষার আরেক দিকপাল কবি কাজী নজরুল ইসলামের মতো তাঁর সাহিত্যের অফুরান রত্ন-ভাণ্ডারে দেখতে পাই:
‘আজি হতে শতবর্ষ আগে
কে কবি করেছিলে গান...
শত অনুরাগে,
আজি হতে শতবর্ষ আগে!’

 

একই জবাবী কবিতায় নজরুল আমাদের অর্থাৎ শতবর্ষ পরের পাঠকদের মনের কথাই লিখেছেন চমৎকারভাবে:
‘হায় মোরা আজ,
মমতাজে দেখিনি, দেখিতেছি তাজ’

 

বলতে দ্বিধা নেই, বিষয়বস্তুর আকার ও বৈচিত্র্যের বিচারে চীনে রবীন্দ্রসাহিত্য সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ লেখা ‘সিন্ধুতে বিন্দু’ বললে ভুল হবে না। তিনি এমন একজন মহামনীষী, যিনি নিজেই একই মহাবিশ্বে তাঁর অবস্থান চিহ্ণিত করে গিয়েছেন একটি গানের চরণে:
‘আকাশ-ভরা সূর্য-তারা, বিশ্বভরা প্রাণ
তাহারি মাঝখানে আমি পেয়েছি মোর স্থান
বিস্ময়ে তাই জাগে, জাগে আমার গান’

 

একজন রবীন্দ্রপ্রেমী চীনা হিসেবে আমি এ প্রবন্ধে কেবল চেষ্টা করছি রবীন্দ্রসাহিত্যের চীনে প্রভাব তুলে ধরা এবং দুই-একটির ওপর সামান্য আলোকপাত করার।

 

চীনে রবীন্দ্রসাহিত্যের অনুবাদ
বলে রাখা ভাল, বিশ্বকবির অনন্য লেখার ইংরেজি অনুবাদের হাত ধরেই বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে চীনের পাঠকদের আনুষ্ঠানিক পরিচয় ঘটেছে বিশ শতকের গোড়ার দিকে। ১৯১৩ সালের ১লা অক্টোবর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার পাওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে, চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আধুনিক সাময়িকী তংফাং জাজি (Dongfang zazhi, Eastern Miscellany)- তে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্ম চীনা মানুষের কাছে তুলে ধরে তাঁর প্রশংসা করা হয়। এই সময়ে এ সাময়িকীর সম্পাদক ছিয়ান জিশিউ (Qian Zhixiu) –এর লেখা থাইক্যআর ত্য রেনশেংকুয়ান (Tai’ge’er de renshengguan-The Worldview of Tagore) প্রকাশিত হয়। এই প্রবন্ধের সাথে রবীঠাকুরের একটি ছবিও ছাপানো হয়।

 


১৯১৫ সালে ছেন তুশিউ (Chen Duxiu) প্রথম বারের মত রবীন্দ্রনাথের কবিতা অনুবাদ করে সাময়িকী ছিংনিয়ান জাজিতে ছাপন। ছেন তুশিউ চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা (সিপিসি ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত), পিকিং ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং চীনের বামপন্থী সাময়িকী ছিংনিয়ান জাজি (Qingnian zazhi, Journal of the Youth)-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। তিনি ইংরেজি গীতাঞ্জলি থেকে চারটি কবিতা অনুবাদ করে প্রকাশ করেন।

 


রবীন্দ্রনাথ ১৯২৪ আর ১৯২৯ সালে চীন সফর করেছিলেন। তাঁর লেখা আর ভাষণ চীনা পাঠকদের মাঝে তুমুল আলোড়ন তোলে। আর সরাসরি বাংলা থেকে রবীন্দ্রসাহিত্যের চীনা ভাষায় রূপান্ত শুরু হয় গত শতকের সত্তুরের দশকে শি জেন (আসল নাম শি সু জেন, চীনের প্রথম বাংলা ভাষা অনুবাদক, বিশ্বভারতীতে বাংলা ভাষা শিখেছিলেন) এবং চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলাভাষী চৈনিকদের অনুবাদকর্মের মধ্য দিয়ে। চীনের প্রধান রবীন্দ্র অনুবাদকদের মধ্যে কবিগুরুর বন্ধু প্রয়াত কবি শ্যু জি মো ও লিন হুয়েই ইন, প্রয়াত লেখক বিং সিন ও জেং জেন তুও, প্রয়াত প্রফেসর লি ইউয়ান শান ও তাঁর স্ত্রী প্রফেসর লিও আই হাও, প্রফেসর লিউ আন উ, প্রফেসর পাই খাই ইউয়ান, প্রফেসর শি চিং উ, প্রফেসর তোং ইয়ৌ ছেন, মাদাম চুং শাও লি, মাদাম ফোং সিও ছিয়েন, প্রমূখ বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। মূলতঃ তাঁদের অনুবাদকর্মে রবীন্দ্রনাথের অসামান্য সাহিত্যকীর্তির সঙ্গে চীনা পাঠকদের পরিচয় ঘটে এবং চীনে দ্রুত সমাদৃত হয়।

 


১৯৬১ সালে কবির শতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে চি শিয়ানলিন-এর উত্সাহ পেয়ে লিউ আনউ(Liu Anwu) এবং অন্যান্য গবেষক ও অনুবাদকের চেষ্টায় ইংরেজি ও রাশিয়ান ভাষা থেকে অনুবাদ করে ১০ খণ্ডের থাইক্যআর জুওফিনচি (‘Tai’ge’er zuopinji’, ‘রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যকর্ম সংকলন’) চীনের পিপলস সাহিত্য প্রকাশনা কেন্দ্র (the People’s Publishing House, Beijing) থেকে প্রকাশিত হয়।

 


২০০০ সালে চীনের হ্যপেই শিক্ষা প্রকাশনা(Hebei Education Press) থেকে ২৪ খণ্ডের থাইক্যআর ছুয়ানচি (‘Tai’ge’er quanji’, অর্থাৎ রবীন্দ্র রচনাবলী) প্রকাশিত হয়। পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিউ আনউ এ রচনাবলীর প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বাংলা অনুবাদক দলে পাই খাইইউয়ান(Bai Kaiyuan), শি চিংউ(Shi Jingwu), তুং ইয়ৌছেন(Dong Youchen), হুয়াং জিখুন(Huang Zhikun) এবং লি ইউয়ানশান(Li Yuanshan) কাজ করেন। অন্যান্য অনুবাদক ইংরেজি, রাশিয়ান বা হিন্দি থেকে অনুবাদ করেন।

 


২০১৬ সালে সর্বশেষ এবং সম্পূর্ণ রবীন্দ্র রচনাবলী থাইক্যআর জুওফিং ছুয়ানচি (‘Tai’ge’er zuopin quanji’, রবীন্দ্র সাহিত্যকর্ম রচনাবলী) চীনা ভাষায় অনুবাদ করা হয়। অধ্যাপক তুং ইয়ৌছেন এ কাজের প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। চীনের পিপলস পাবলিশিং হাউস এ বিশাল অনুবাদকর্ম প্রকাশ করে। ৩৩ খণ্ডের এ অনুবাদকর্ম বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র রচনাবলী অনুসরণ করে বাংলা ভাষা থেকে চীনা ভাষায় অনুবাদ করা হয়। এ অনুবাদ কাজে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা বিভাগের প্রবীন অনুবাদক পাই খাই ইউয়ান, শি চিং উ, জুং শাও লি(Zhong Shaoli), ফেং শিউ ছিয়ান(Feng Xiuqian) এবং প্রয়াত অধ্যাপক লি ইউয়ান শান-এর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। তাঁরা চীনে বাংলা সাহিত্য চর্চা বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথের শিল্পকর্ম অনুবাদে অতুলনীয় অবদান রেখেছেন। বর্তমানে নবীন অনুবাদকের মধ্যে ইয়ু কুয়াং ইউয়ে(Yu Guangyue), ইয়াং ওয়েই মিং(Yang Weiming), ছাও ইয়ান হুয়া(Cao Yanhua) এবং ছাই ইউয়ে(Cai Yue) চীনে বাংলা সাহিত্য চর্চা সামনে এগিয়ে নেয়ার জন্য কাজ করছেন।

 


চীনে রবীন্দ্রসাহিত্যের প্রভাব
দূরপ্রাচ্যের জাপান থেকে পাশ্চাত্যের মার্কিন মুল্লুক পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ তাঁর অনন্য লেখার যে দ্যুতি ছড়িয়েছে, তার বেশ অনেকখানি চীনে গিয়ে পড়ার অনেক কারণের মধ্যে ঐতিহাসিক, সামাজিক ও মনস্তাত্বিক কারণও রয়েছে। কবিগুরু চীনের গণমানুষের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করেছিলেন। বিশেষ করে সামন্ত ও বহিঃশক্তির বিরুদ্ধে চীনাদের সংগ্রামে তাঁর ছিল প্রত্যক্ষ সমর্থন। যেমন চীনাদের আফিম বিরোধী সংগ্রামের পক্ষে কিংবা তৎকালিন জাপানি আগ্রাসীদের নানচিং হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে তিনি বলিষ্ঠভাবে কলম ধরেছিলেন।

 


১৯২৪ সালে শ্যু জি মোর নেতৃত্বাধীন নিখিল চীন লেখক সমিতির আমন্ত্রণে রবীন্দ্রনাথ প্রথম চীন ভ্রমণ করেন। সে সময় তাঁর ইংরেজিতে অনুদিত গীতাঞ্জলী চীনা কবি-সাহিত্যিক ও পাঠাকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে। সেই তখন থেকেই রবীন্দ্রসাহিত্য চীনা রাজনীতিক, কবি-সাহিত্যিক ও পাঠকদের মনের গভীরে শেকড় গাঁড়ে, যা ধীরে ধীরে ডালপালা ছড়িয়ে আজ বিশাল মহীরুহে পরিণত হয়েছে।

 


চীনের সাহিত্য উন্নয়নে রবীন্দ্রনাথ দুই দিক থেকে গভীর প্রভাব ফেলেছেন। এক দিকে, নব-জাগরিত ‘নতুন কবিতা’ প্রবণতার উন্নয়নে অনুপ্রেরণা দেওয়া, বিশেষ করে প্রতিভাবান কবি শ্যু জি মো-সুশিমার মাধ্যমে। অন্য দিকে শিশুসাহিত্যের বীজ চীনা সাহিত্যের ভূমিতে লাগিয়ে দেওয়া, বিশেষ করে তাঁর অন্যতম অনুরাগী বিং শিন(Bing Xin)-এর মাধ্যমে।

 


১৯ শতাব্দীর ২০-এর দশকে চীনা সাহিত্য জগতে দুই ঘটনা প্রধান্য পেয়েছিলো। এক হলো রবীন্দ্রনাথের চীন সফর, আরেকটি হলো তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য সমিতির প্রতিষ্ঠা। ওয়েনশুয়ে ইয়েনচিউহুই (Wenxue yanjiuhui, Literature Study Association) প্রতিষ্ঠিত করেছেন জেং জেন তুও-যিনি রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্ম সুবিখ্যাত অনুবাদকের মধ্যে অন্যতম এবং শেন ইয়ান পিং(Shen Yanbing-সাহিত্যিক নাম মাও তুন (Mao Dun)। তারা রবীন্দ্রনাথের চীন সফরে উষ্ম স্বাগত জানিয়েছিলেন। ছুয়াং জাও শ্য (Chuangzaoshe, Creation Society) প্রতিষ্ঠা করেছেন কুও মো রুও(Guo Moruo)-রবীন্দ্রনাথের অন্যতম অনুরাগী পাঠক। শিন ইউয়ে শ্য (Xinyueshe, the Crescent Moon Society) প্রতিষ্ঠা করেছেন সুই জি মো-সুশিমা এবং অন্যান্য বিশিষ্ট লেখক হু শি(Hu Shi), ওয়েন ই তুও(Wen Yiduo)ও লিয়াং শি ছিউ(Liang Shiqiu) প্রমুখ। ‘শিন ইয়ুয়ে’ নামটিও রবীন্দ্রনাথের ‘the Crescent Moon’ থেকে অনুপ্রানিত হয়ে নেয়া হয়েছে। যদিও শিন ইয়ুয়ে সমিতি ১৯৩১ সালে সুশিমা মৃত্যুর পর বন্ধ হয়েছে, তবু এ সমিতি চীনের নতুন কবিতা আন্দোলনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলো।

 


তাছাড়া, রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্মের অনুবাদের ভিত্তিতে চীনের গবেষকরা দক্ষিণ এশিয়া গবেষণার আওতায় রবীন্দ্রচর্চার আরো সমৃদ্ধ ও বৈচিত্রপূর্ণ রূপ ধরে সামনে অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছেন। পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চি শিয়ান লিনের(Ji Xianlin) উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়া স্টাডিজ কেন্দ্রে অনেক গবেষণার কাজ করা হয়েছে। বর্তমানে অধ্যাপক জাং কুয়াং লিন(Zhang Guanglin), থাং রেন হু(Tang Renhu) এবং ওয়েই লি মিং(Wei Liming) এতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। অধ্যাপক ওয়েই লি মিং রবীন্দ্রচর্চা সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। অধ্যাপক ইয়ু লুং ইয়ু(Yu Longyu) শিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ভারত গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেখানেও রবীন্দ্রনাথ সংক্রান্ত চর্চা চলছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দিক থেকে রবীন্দ্রচর্চায় চীনের সামাজিক বিজ্ঞান একাডেমির গবেষক লিউ চিয়েন(Liu Jian) ও কুং চিং(Gong Jing), পেইচিং নর্মল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হ্য নাই ইং(He Naiying), শাংহাই থং চি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুন ই শুয়ে(Sun Yixue), পেইচিং ফরেন স্ট্যাডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তুং ইয়ৌ ছেন, শাংহাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তোং হোং চিউন(Dong Hongjun), চেচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আই তান(Ai Dan), ছিংতাও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হো ছুয়ান ওয়েন(Hou Chuanwen), থিয়েনচিন নর্মল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লি ইউয়ে চিন(Li Yuejin), সিছুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন শি নান(Yin Xinan) এবং লানচৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাও শি ছাং(Mao Shichang) প্রমুখ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।

 


১৯৭৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ২ হাজারেরও বেশি রবীন্দ্রচর্চা সংক্রান্ত গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

 


চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাহিত্য বিভাগ ছাড়াও চীনের স্কুল-কলেজে রবীন্দ্রসাহিত্য পাঠ্য বটে। স্কুল থেক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে রবীন্দ্রনাথের বহু কবিতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। চীনের অসংখ্য তরণ-যুবকদের আবেগময়তায় রবীন্দ্রনাথের অবস্থান পর্বতপ্রমাণ। তাদের সংগ্রহে মহা-মনীষীদের অমূল্য বাণীর তালিকায় রবীন্দ্রনাথ শীর্ষে। এ ছাড়াও চীনের প্রধান প্রধান গণমাধ্যমে রবীন্দ্রনাথের জীবন ও অমর কীর্তি নিয়ে নিয়মিত ও বিশেষ তথ্য ও তথ্যভিত্তিক প্রচারণার কাজ হয়েছে এবং হচ্ছে।

 


২০০৯ সালে চীন প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে চীনের হুয়ানছিউ শিপাও(Global Times) পত্রিকায় ‘আপনার মনে চীনের ওপরে সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী ৬০জন বিদেশী ব্যক্তি’ নামক একটি জরিপ করার সময় দেখা গেছে, সাহিত্যিক তালিকার মধ্যে রুশ লেখক টোলস্টোয়, গোর্কি ও ড্যানিশ শিশুসাহিত্যিক ও লোক্যসাহিত্যিক এ্যান্ডারসনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথও এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।

 


রবীন্দ্রনাথ তাঁর প্রবন্ধ বিশ্বসাহিত্যে লিখেছেন ‘আমাদের অন্তঃকরণে যত-কিছু বৃত্তি আছে সে কেবল সকলের সঙ্গে যোগস্থাপনের জন্য। এই যোগের দ্বারাই আমরা সত্য হয়, সত্যকে পাই।’ রবীন্দ্রনাথ চীনাদের আন্দোলিত করেছেন, কারণ তিনি প্রেমের কবি, সত্যের কবি এবং মানুষের কবি। আমরা তাঁরই দানে পরিপূর্ণ, তাঁরই কাছে ঋণী। তাই তাঁর ভাষাতেই বলি: ‘তোমারে যা দিয়েছিনু সে তোমারি দান, গ্রহণ করেছো যত, ঋণী তত করেছো আমায়।’

 

লেখক : ইয়াং ওয়েই মিং, বাংলা নাম স্বর্ণা, চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা বিভাগের সাংবাদিক ও অনুবাদক। বর্তমানে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশী ভাষা স্কুলের প্রাচ্য সাহিত্য বিষয়ে পিএইচডি করছেন। এছাড়া ইউননান সামাজিক বিজ্ঞান একাডেমীর বিশিষ্ট গবেষক।

 

গ্রন্থপঞ্জি
Stephen Hay, Ideas of East and West: Tagore and his Critics in Japan, China, and India’, Cambridge: Harvard University Press, 1970
Sisir Kumar Das, ‘Tagore in China’, Talks in China, Visva-Bharati, 1999
孙宜学,《泰戈尔:中国之旅》,中央编译出版社,2013年5月。Sun Yixue, Tagore: Visit to China, Central Compilation& Translation Press, May 2013.
主编:王邦维,谭中,译审:阿密亚•德武,副主编:魏丽明,《泰戈尔与中国》,中央编译出版社,2011年3月。Editor: Wang Bangwei, Tan Chung, English editor: Amiya Dev, Associate Editor: Wei Liming, Tagore and China, Central Compilation& Translation Press, March, 2011
魏丽明,《“万世的旅人”泰戈尔-从湿婆、耶稣、莎士比亚到中国》,中央编译出版社,2011年3月。Wei Liming, Chirajatri Tagore-From Shiva, Jesus, Shakespeare to China, Central Compilation& Translation Press, March, 2011.
主编:姜景奎,《中国学者论泰戈尔》(上、下),阳光出版社,2011年12月。Editor: Jiang Jingkui, Chinese Scholars on Raindranath Tagore, Yangguang Publishing House, December, 2011.
艾丹,《泰戈尔与五四时期的思想文化论争》,人民出版社,2013年。Ai Dan, Tagore and the Debate of Ideological Culture During May Fourth Movement, People’s Publishing House, 2013.
侯传文,《话语转型与诗学对话——泰戈尔诗学比较研究》,中国社会科学出版社,2010年5月。Hou Chuanwen, Transformation of Discourse and the Dialogue of Poetics, China Social Science Press, May, 2010.