ভোটের লড়াইয়ে এমপি হতে চান যে সব নারী
অনলাইন ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১২:৫২ এএম, ২২ নভেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার
আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধান দুই দলের মনোনয়ন চেয়ে ফরম নিয়েছেন শতাধিক নারী। নির্ধারিত নারী আসন নয়, বরং পুরুষদের পাশাপাশি প্রতিযোগিতা করেই নির্বাচিত হতে চান তারা।
তারা বলছেন, তাদের অভিজ্ঞতায় একটা বড় সমস্যা হলো স্থানীয় অন্য নেতাদের মধ্যে 'পিছন থেকে আটকে রাখার' প্রবণতা। আর 'নারীরা সত্যি এমপির দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম কিনা' তা নিয়ে একটা সংশয়।
দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বলছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে পরিমাণ নারী মনোনয়নপ্রার্থী হয়েছেন - তার সংখ্যা শতাধিক হতে পারে।
যশোর-২ আসনে এবারে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ১৪ জন। এর মধ্যে ১২ জন পুরুষ এবং দুই জন নারী। এই দু'জনের একজন মঞ্জু নাহার নাজনীন সোনালী। যশোর-২ আসনের নির্বাচনী এলাকা হচ্ছে ঝিকরগাছা-চৌগাছা।
সোনালী বলেন, ফরম জমা দেবার পর এখন দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে মনোনয়ন পাবেন কিনা সেটা জানার অপেক্ষা করছেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, "যদি আমাকে নমিনেশন দেয় তাহলে সবকিছুর উর্দ্ধে থেকে এখানকার মানুষ আমার জন্য নির্বাচন করবে। কিন্তু সমস্যা করেন যারা উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে নেতা আছেন - তারা।"
"তারা আমাদের টেনে ধরেন। তারা মনে করেন, যদি আমাকে টেনে ধরা না হয় - তাহলে নেত্রী তাকে চিনে ফেলবে, বড় জায়গায় চলে যাবে বা সংসদ সদস্য হয়ে যাবে। কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে আমার ক্ষেত্রে কোন খারাপ মনোভাব নেই।"
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ৩৫০টি আসনের মধ্যে ৫০ টি আসন রয়েছে নারীদের জন্য সংরক্ষিত। বাকি ৩০০ আসনে রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী মনোনয়ন দেন। এবারে এই মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও রয়েছেন। তারা মনে করছেন, সংরক্ষিত আসন নয় বরং জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচন করার যোগ্যতা রাখেন তারা।
কুড়িগ্রাম ৪ নম্বর আসনে বিএনপি থেকে ১০ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। এদের মধ্যে নয়জন পুরুষ। নারী একজন হলেন মমতাজ হোসেন লিপি।
লিপি জানান, তার প্রতি জনমানুষের যে সমর্থন সেটাই তাকে আত্মবিশ্বাসী করছে বাকি নয়জনকে টপকিয়ে মনোনয়ন প্রার্থী হওয়ার।
মমতাজ হোসেন লিপি বলেন, "আমি ১০০% আত্মবিশ্বাসী। আমাকে নিয়ে এমন কোন সমস্যা নেই যে আমার এলাকায় আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি বের হয়ে আসতে পারবো না।"
বাংলাদেশে তিনটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি সব দলের মনোনয়ন ফরম কেনা এবং জমা দেয়ার কাজ শেষ হয়েছে। এখন তারা যাচাই-বাছাই এর কাজ করছেন।
নির্বাচনে প্রার্থী হতে গেলে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয় বলে জানান নারী রাজনৈতিক কর্মীরা। চট্টগ্রাম ৮ নম্বর আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রার্থী জোবাইদা নার্গিস খান। এখানে তার সাথে সাতজন পুরুষ মনোনয়ন প্রার্থী রয়েছেন।
তিনি বলেন, নারী হিসেবে তিনি এত বড় দায়িত্ব নিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে অনেকে সংশয় প্রকাশ করেন। তারা বলতে পারে উনি মহিলা মানুষ উনি কী করতে পারবেন? উনি কি এত বড় এলাকায় যেতে পারবেন।
জোবাইদা নার্গিস খান বলেন, তার যে একটা রাজনীতি করার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছেন সেটা তার দলের নেতাদের বোঝানোর চেষ্টা করবেন।
ত্রিশ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতি করছেন ফাতেমা বাদশা। তিনি চট্টগ্রাম-৯ আসনের নমিনেশন ফরম নিয়েছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের প্রধান যদি নারী হতে পারেন - তাহলে তিনি কেন একটি আসন চালাতে পারবেন না?
ফাতেমা বাদশা বলেন, "আমাকে প্রতিহিংসাতে পড়তে হয়েছে বিগত দিনে, প্রতিযোগিতাতে্ও আমি লড়েছি। পিছুটান, বসিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র - অনেক কিছু উৎরিয়ে আমি এই পর্যন্ত এসেছি।"
"আমি মনে করি, আমার প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী তারাও নারী ,তাদের যদি একটা দেশ চালাবার ক্ষমতা থাকতে পারে তাহলে আমার একটা আসন চালানোর ক্ষমতা থাকবে না কেন?"
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী নারীদের জন্য সংসদে সংরক্ষিত আসন আরো ২৫ বছরের জন্য বহাল রাখার আইন রয়েছে। কিন্তু এখন অনেক নারীই বলছেন, অনেক প্রতিকূলতা থাকা সত্বেও তারা চান, দলের মনোনয়ন নিয়ে সরাসরি নির্বাচনে মাধ্যমেই সংসদ সদস্য হতে।
মূত্র : বিবিসি বাংলা