ঢাকা, রবিবার ২৪, নভেম্বর ২০২৪ ৬:৫৭:৩০ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

কিশোরী তারামন : এক বীর মুক্তিযোদ্ধার সাতকাহণ

অনন্যা সরকার

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৭:১৮ পিএম, ২ ডিসেম্বর ২০১৮ রবিবার

দুর্ধর্ষ এক কিশোরীর অপরিমেয় সাহসিকতার জন্য তাকে বীর প্রতীক খেতাব দেওয়া হয়। অস্ত্র হাতে তিনি সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে দেশের জন্য লড়াই করেছেন। বয়স তখন কতই বা হবে ১৩ কিংবা ১৪! এই কিশোরী স্বাধীন বাংলাদেশ পেতে রেখেছেন অসাধারণ ভূমিকা। তিনি তারামন বিবি। দেশ স্বাধীন হলেও জীবন সংগ্রাম তার থেমে থাকেনি। আর সংগ্রাম করতে করতেই এই বিজয়ের মাসের প্রথম দিন তিনি প্রাণ হারালেন অসুখে ভুগে।


মুক্তিযুদ্ধের সময় ১১ নং সেক্টরের হয়ে তারামন বিবি মুক্তিবাহিনীদের রান্নাবান্না, তাদের অস্ত্র লুকিয়ে রাখা, পাকবাহিনীদের খবরাখবর সংগ্রহ করা এবং সম্মুখ যুদ্ধে পাকবাহিনীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। এ কারণে তাকে বীরপ্রতীক খেতাব প্রদান করা হয়েছে।


 
তার প্রকৃত নাম তারামন বেগম। তবে তিনি তারামন বিবি নামে অধিক পরিচিত। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তার বীরত্বভূষণ নম্বর ৩৯৪। গেজেটে নাম মোছাম্মৎ তারামন বেগম।


 
তারামন বিবি ১৯৫৭ সালে কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিবপুর উপজেলার শংকর মাধবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আবদুস সোহবান এবং মায়ের নাম কুলসুম বিবি।


 
তারামন বিবি ১১ নং সেক্টরে নিজ গ্রাম কুড়িগ্রাম জেলার শংকর মাধবপুরে ছিলেন। তখন ১১ নং সেক্টরের নেতৃত্বে ছিলেন সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের। মুহিব হাবিলদার নামে এক মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। যিনি তারামনের গ্রামের পাশের একটি ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি তারামনকে ক্যাম্পে রান্নাবান্নার জন্য নিয়ে আসেন। তখন তারামনের বয়স ছিলো মাত্র ১৩ কিংবা ১৪ বছর। কিন্তু পরবর্তিতে তারামনের সাহস ও শক্তির পরিচয় পেয়ে মুহিব হাবিলদার তাকে অস্ত্র চালনা শেখান।


 
পরবর্তীতে সহকর্মীদের কাছ থেকে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের সাথে অনেক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।


 
বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭৩ সালে তৎকালীন সরকার মুক্তিযুদ্ধে তারামন বিবিকে তার সাহসীকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য “বীর প্রতীক” উপাধিতে ভূষিত করেন। 

 

কিন্তু ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তাকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। ১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক বিমল কান্তি দে প্রথম তার সন্ধান পান। এ কাজে বিমল কান্তিকে সহায়তা করেন কুড়িগ্রামের রাজীবপুর কলেজের অধ্যাপক আবদুস সবুর ফারুকী।


 
এরপর নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ কার কয়েকটি সংগঠন তাকে ঢাকায় নিয়ে আসে। সেই সময় তাকে নিয়ে পত্রিকায় প্রচুর লেখালেখি হয়। অবশেষে ১৯৯৫ সালের ১৯শে ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার এক অনাড়ম্বর পরিবেশে আনুষ্ঠানিকভাবে তারামন বিবিকে বীরত্বের পুরস্কার তার হাতে তুলে দেন। তারামন বিবিকে নিয়ে আনিসুল হকের লেখা ‘বীর প্রতীকের খোঁজে’ নামক একটি বই রয়েছে। আনিসুল হক রচিত ‘করিমন বেওয়া’ নামক একটি বাংলা নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিলেন তারামন বিবি। 


 
তারামন বিবির স্বামীর নাম আবদুল মজিদ। এই দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তারামন বিবি কুড়িগ্রামের রাজিবপুরে স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন।


 
মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশে যে দুজন নারী মক্তিযোদ্ধাকে বীর প্রতীক খেতাব দেয়া হয়েছে তারামন বিবি তার একজন।