সংরক্ষিত নারী আসন : প্রাধান্য পাবে নতুন মুখ
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০১:৪৫ পিএম, ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ সোমবার
ফাইল ছবি
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী (মহিলা) আসন নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। বিগত সংসদের সংরক্ষিত আসনের ৫০জনের কে বাদ পড়বেন আর কে থাকছেন এবং একাদশ সংসদে নতুন কে বা কারা আসছেন এ বিষয়টিও আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে। আগামী ৩০ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হবে। অধিবেশন শুরুর আগেই সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা গেছে, নতুন নেতৃত্ব তৈরি ও সুযোগ দিতে এবার সংরক্ষিত আসনে নতুন মুখ প্রাধান্য পাবে। অন্যদিকে দলের রাজপথের নেতাকর্মীর পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার সঙ্গে যুক্ত থেকে যারা দলের জন্য অবদান রাখছেন তাদের মধ্যে থেকেও সংরক্ষিত আসনের সদস্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত ৫০ নারী আসনের সদস্য (এমপি) হতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থক ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা দলগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের সমর্থন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে জাতীয় পার্টি (জাপা) তাদের তিন প্রার্থী চূড়ান্ত করে স্পিকারের কাছে নাম পাঠিয়েছে।
এ নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দশম সংসদের এক নারী সদস্য বলেছেন, সংরক্ষিত নারী আসনের বিষয়টি দলের মনোনয়ন বোর্ডের ওপর নির্ভর করছে। এক্ষেত্রে দলের দীর্ঘ দিনের কর্মী এবং অন্য পেশার নারীও প্রার্থী হতে পারেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কে বা কারা পাবেন তা ঠিক হবে মনোনয়ন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত আসন অনুযায়ী সংরক্ষিত ৫০টি আসনের জন্য আওয়ামী লীগ পাবে ৪৩টি আর চারটি পাবে বিরোধীদল জাতীয় পার্টি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট শপথ নিলে একটি আসন পাবে এবং স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল মিলে পাবে। দুইটি আসন।
নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ছয়টি আসনের বিপরীতে যে কোনো দল বা জোট একটি সংরক্ষিত আসন পায়। সে হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বিকল্পধারাসহ অন্যদের কোনো সংরক্ষিত আসন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে জোটের শরিক হিসেবে নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করা দলগুলোর জন্য আওয়ামী লীগ দুই-একটি আসন ছেড়ে দিতে পারে। তা নির্ভর করছে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের উপর।
এবার নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া (২৫৯টি) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সংরক্ষিত আসনের জন্য ইতোমধ্যেই দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় চেষ্টা চালাচ্ছেন। অনেকেই দলের সভানেত্রীর সাথে দেখা করতে গণভবনে যাচ্ছেন। অনেকে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতার সঙ্গে দেখা করে মনোনয়ন পেতে চেষ্টা করছেন।
পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার সঙ্গে যুক্ত নারীরা সংরক্ষিত আসনের সদস্য হওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন। তাদের অনেকে গণমাধ্যমে নিজেদের যোগ্যতা ও কর্মপরিকল্পনার কথাও জানাচ্ছেন।
দলের অঙ্গ-সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বিশেষ করে ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী, মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগের নেত্রীরাও থাকতে পারেন। এছাড়াও সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেত্রীরা মনোনয়নের জন্য জোর তৎপরতা শুরু করেছেন। পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত নারী নেত্রীরাও তৎপর রয়েছেন। দশম সংসদের অনেক সদস্য আবারও মনোনয়ন পেতে চেষ্টা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন ।
অন্যদিকে ঢাকার বাইরে তৃণমূল পর্যায়ে আ্ওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের কর্মীরাও সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন আশা করছেন। তারা মনে করেন, দলের দুঃসময়েও আন্দোলন করেছেন, কারাবরণ করছেন তাই দল তাদের মূল্যায়ন করবে। তারা বিশ্বাস করেন, সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা থাকলেও তারা বিভিন্ন কাজে যুক্ত থেকে সরকারের কাজকে এগিয়ে নিতে পারবেন।
জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন আইন অনুযায়ী গেজেট প্রকাশের পর ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে। সংসদের ৩০০ আসনে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত দল ও জোটের সংসদ সদস্যরা সংরক্ষিত আসনের ভোটার হবেন। ১ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদে ২৯৯ আসনে নির্বাচিত এমপিদের গ্রেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। (প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ার কারণে একটি আসনে পরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।)
এদিকে আগামীকাল মঙ্গলবার সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নপত্র বিতরণ করবে আওয়ামী লীগ।
উল্লেখ্য, দশম সংসদে ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ছয়টি আসনে নির্বাচিত হওয়ায় সংরক্ষিত আসন পায় একটি। জাসদ পাঁচটি আসনে নির্বাচিত হলেও আওয়ামী লীগ একটি সংরক্ষিত আসন ছেড়ে দেয়। এছাড়া ন্যাপের কোনো সংসদ সদস্য না থাকলেও আওয়ামী লীগের কোটায় এ দল থেকে একজনকে সংরক্ষিত এমপি করা হয়েছিলো। একাদশ জাতীয় সংসদে ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে তিনটি, জাসদ (ইনু) দুইটি এবং জোটের অন্যরা একটি করে আসনে নির্বাচিত হয়েছে। এছাড়া মহাজোটের শরিক বিকল্পধারা পেয়েছে তিনটি আসন।