সাবধান! ‘মাগুর মাছ’ চুরি করে আপনার অনলাইন পরিচয়!
অনলাইন ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৬:০৪ পিএম, ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ সোমবার
ছবি : সংগ্রহ করা
মাগুর মাছের ইংরেজি নাম ক্যাটফিশ। কিন্তু অনলাইন জগতে এই শব্দটির রয়েছে ভিন্ন একটি মানে। সামাজিক মাধ্যমে আরেকজনের ছবি ও ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে, সেসব দিয়ে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা টিনডারে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারণা করাকেই ইংরেজিতে বলে ক্যাটফিশিং।
বিবিসির রিপোর্টার জেনিফার মিরেন্স সম্প্রতি খেয়াল করেন, তার মেসেঞ্জারে অপরিচিত একজন ব্যক্তি দাবি করেন, প্রাপ্ত বয়স্কদের চ্যাট রুমে তাদের অন্তরঙ্গ কথাবার্তা হয়েছে। সেই ভদ্রলোক জেনের প্রেমে পড়েছেন।
এরপর বিষয়টি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। অনুসন্ধানে নেমে জেনিফার দুটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার জানতে পারলেন,
১. জেনিফারের মত হাজারো নারী-পুরুষের অ্যাকাউন্টের মত ভুয়া অ্যাকাউন্ট রোজ তৈরি হচ্ছে।
২. এই অন্যের অ্যাকাউন্টের ছবি ও তথ্য নিয়ে ভুয়া অ্যাকাউন্ট বানানো আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ নয়।
অনুসন্ধানে নেমে জেনিফার বোঙ্গি মেসিমাঙ্গা এবং জো রিচার্ডস নামে দুইজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে পরিচিত হন, যারা দুইজনই অনলাইনে 'ক্যাটফিশিং' এর শিকার হয়েছেন।
মেসিমাঙ্গা হঠাৎ একদিন আবিষ্কার করেন, ইনস্টাগ্রামে কেউ একজন তার নামে অ্যাকাউন্ট চালাচ্ছেন।
মানে ঐ অ্যাকাউন্টের নাম তার, সেখান ব্যবহার করা প্রোফাইল ছবি তার, ব্যক্তিগত তথ্য সব তারই। কিন্তু অ্যাকাউন্ট তো তিনি চালাচ্ছেন না। তখন তিনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর শরণাপন্ন হন।
আর জো রিচার্ডসের ছবি ব্যবহার করে ভুয়া টিনডার প্রোফাইল চালাচ্ছিল কেউ। তিনিও পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন।
কিন্তু তাকে লন্ডনের পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, 'ক্যাটফিশিং' আইনত অপরাধ নয়। কিন্তু এর ফলে ভুক্তভোগীরা প্রতারণার মামলা করতে পারবেন।
তবে এখনো পর্যন্ত অন্যের ছবি চুরি করে সামাজিক মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট তৈরি ও চালানোকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় না।
ব্রিটিশ আইন প্রণেতারা বছরের আরো পরের দিকে একটি নতুন আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছেন, যেখানে 'ক্যাটফিশিং'কে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার আহ্বান জানাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
'ক্যাটফিশিং' থেকে বাঁচতে কী করবেন?
পাসওয়ার্ড যেন কখনওই সহজ না হয়। স্পেশাল ক্যারেক্টার, ডিজিটস, ক্যারেক্টার মিলিয়ে পাসওয়ার্ড বেশ বড় রাখা জরুরি। কিছুদিন অন্তর অন্তর নিজের পাসওয়ার্ড বদলাতে থাকুন। একই পাসওয়ার্ড বেশিদিন ব্যবহার না করা ভালো
ফেসবুক, ই-মেইল, অ্যামাজন, টুইটারের মতো পরিষেবা ব্যবহার করার সময়ে সব সময় সাইন আপ নোটিফিকেশন চালু রাখতে হবে। তাহলে আপনি ছাড়া অন্য কেউ যদি আপনার এই সমস্ত অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে চায়, তাহলে আপনার কাছে সঙ্গে সঙ্গে নোটিফিকেশন চলে আসবে।
পাবলিক ওয়াই-ফাই থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করা এড়িয়ে গেলেই ভালো হয়। কারণ, বেশিরভাগ পাবলিক ওয়াইফাইতেই হ্যাকাররা ওঁত পেতে বসে থাকে।
লোভনীয় ই-মেইল দেখলে বুঝেশুনে পা বাড়ান। বিশেষ করে পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া মেইলগুলি না খুলে ডিলিট করে দেওয়াই ভাল। ইন্টারনেটের বিপদ থেকে বাঁচার জন্য অ্যান্টি ভাইরাস অ্যাক্টিভেট এবং আপডেট থাকা জরুরি।
শিকার হলে কী করণীয়?
ক্যাটফিশিংয়ের শিকার হলে তৎক্ষণাৎ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীককে জানাতে হবে।
আইনের দৃষ্টিতে ক্যাটফিশিং অপরাধ না হলেও সব দেশেই এখন পুলিশের সাইবার ইউনিট কাজ করে।
এই ইউনিটের অন্যান্য কাজের মধ্যে একটি হচ্ছে, অনলাইনে প্রতারণার কারণে ক্ষতির শিকার হলে তা প্রতিকারে কাজ করে এই বাহিনী।
সূত্র : বিবিসি বাংলা অনলাইন