লক্ষ্য ঠিক রেখে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হয়: কবি ও প্রকাশক লিলি হক
শারমিন সুলতানা
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৪:২৬ পিএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সোমবার
লিলি হক, ছবি: উইমেননিউজ২৪.কম
একুশের বইমেলা শুরু হয়েছে প্রায় তিন সপ্তাহ হতে চললো। প্রতিবারের মতো এবারেও পুরুষ প্রকাশকদের পাশাপাশি মেলায় স্টল বরাদ্দ পেয়েছেন বেশকিছু নারী প্রকাশক। একটা সময় ছিল যখন নারীরা এই চ্যালেঞ্জিং ব্যবসায় আসতে কিছুটা ইতস্তত বোধ করতেন। শুরুর দিকে নানা প্রতিবন্ধকতারও সম্মুখীন হতে হয়েছে তাদের। তবে সময় পাল্টেছে। নেই আর সেই আগের দিন। এখন তাই সহজেই অনেক নারী তাদের এই পছন্দের ব্যবসাটিকে বেছে নিতে পারছেন।
শুরুর দিকে হাতে গোনা যে কয়েকজন নারী প্রকাশক ছিলেন তাদের মধ্যে কবি লিলি হক অন্যতম। মেলা প্রাঙ্গণে কথা হলো চয়ন প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী লিলি হকের সঙ্গে।
উইমেননিউজ২৪.কম’কে তিনি জানান সেই শুরুর দিনগুলোর কথা। শুরুর দিকে মানুষের কথার বাণে প্রতি মুহূর্তেই তাঁকে জর্জরিত হতে হতো। অনেকেই তাঁকে বলেছেন, পুরুষ প্রকাশকরাই যেখানে ঠোকর খাচ্ছে সেখানে আবার নারী হয়ে তিনি এই ব্যবসায় এসেছেন। একটা সময় নিঃস্ব হয়ে তাঁকে পথে বসতে হবে এমন মন্তব্যও করেছে কেউ কেউ। তবে এসব কথাকে তিনি পথের কাঁটা না মনে করে গলার হার ভেবেছেন। আর এই ভাবনাটাই তাঁকে সামনে এগোতে সহযোগিতা করেছে।
বই ব্যবসাতে আসার কারণ জানতে চাইলে কবি লিলি হক জানান, আমার নিজের কাছেই নিজের কমিটমেন্ট ছিল। খাদ্য যদি শিল্প হয়, পোশাক যদি শিল্প হয় তাহলে বই নয় কেন। তাছাড়া তিনি তো শুধু প্রকাশকই নন পাশাপাশি একজন লেখকও। প্রকাশকের আগেই বরং তিনি লেখক পরিচয়ে পরিচিত। তাই ছোটবেলা থেকেই রয়েছে বইয়ের প্রতি ভালোবাসা। এই ভালোবাসাটাও তাঁকে নিয়ে এসেছে এতোটা দূর।
লিলি হকের চয়ন প্রকাশন থেকে চয়ন ও দশদিগন্ত সাহিত্য ম্যাগাজিন দুটো বের হচ্ছে দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে। তিনি জানালেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও এই ম্যাগাজিনটির প্রকাশ বন্ধ করেননি একবারের জন্যও।
এবারের বইমেলায় চয়ন প্রকাশন থেকে এরই মধ্যে বের হয়েছে ১৩টি বই। বের হওয়ার অপেক্ষায় আছে আরো ৪০টি বই। এর মধ্যে লেখক ও প্রকাশক কবি লিলি হকের নিজের লেখা বইও আছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, কবিতা, গল্প, উপন্যাসসহ সব ধরনের বই-এর বিক্রিই বেশ ভালো হচ্ছে। তবে আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ বিক্রি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে আনু মাহমুদেরে ‘আধুনিক পল্লীকবি জসীমউদদীন’ বইটি সবচেয়ে বেশি চলছে।
বর্তমানে চয়ন প্রকাশনের বই যাচ্ছে বিশ্বের ৩৪টি দেশে। এই প্রকাশনা সংস্থার লাভের একটি অংশ তিনি ব্যয় করছেন বিভিন্ন জনসেবামূলক কাজে। কৃষকের মুখে হাসি ফোটানও এই সংস্থার একটি উদ্দেশ্য। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি শিখেছেন সবসময় হাসিখুশি থাকতে হবে আর ভালোবাসতে হবে সবাইকে।
সমাজসেবায় নিবেদিতপ্রাণ কবি ও প্রকাশক লিলি হক নিজ চেষ্টায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। পাশাপাশি নারীদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে গড়ে তুলেছেন সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সেখান থেকে বিনামূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় দুস্থ নারীদের।
তাঁর নিজের প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, অরণ্য আমার অরণ্য, মধ্যরাতের খোলাচিঠি, আকাশ আমি ভালো নেই, তোমরা সবাই কেমন আছো, আধো ফোটা গোলাপ আমার, সিলেক্টেড পোয়েমস বাই লিলি হক ইত্যাদি।
কবি ও প্রকাশক লিলি হক শুধু সমাজসেবায় অবদান রাখছেন না। পাশাপাশি তিনি দেশে নতুন লেখক তৈরিতেও সমানভাবে অবদান রেখে চলেছেন। তার প্রতিষ্ঠান চয়ন সাহিত্য ক্লাব নিয়মিত একটি সাহিত্য আসর পরিচালনা করে আসছে। যেখান থেকে সদ্য লেখালেখি শুরু করা সম্ভাবনাময় লেখকদের বই প্রকাশিত হয়। পাশাপাশি চয়ন ও দশদিগন্ত সাহিত্য পত্রিকা দুটোতে লেখালেখি করেও অনেক লেখক হাত পাকাচ্ছেন।
কথায় কথায় তিনি জানান বিয়ের বালা বিক্রি করে তিনি শুরু করেন এই ব্যবসা। তারপর অনেক চড়াই-উৎড়াই পেড়িয়ে আজকের অবস্থানে আসা।
কবি লিলি হক বলেন, সবসময় আমাদের লক্ষ্যটাকে ঠিক রেখে স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাওয়া উচিৎ।