তাসলিমার ঘুরে দাঁড়ানোর সাতকথা
শারমিন সুলতানা
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১২:৩৪ এএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ মঙ্গলবার
তসলিমা বেগম, ছবি : উইমেননিউজ২৪.কম
খুব ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছিলেন তাসলিমা বেগম। বয়সটা তখন ঠিক কত মনে নেই তাসলিমার, শুধু মনে আছে মায়ের সেই হাড়ভাঙা পরিশ্রমের দিনগুলোর কথা। তাদের চার বোন আর দুই ভাইকে বড় করতে গিয়ে মা চাকরি নিয়েছিলেন ঢাকা মেডিকেলে। ভাই-বোনদের মধ্যে সবার ছোট তাসলিমা সেই তখনই পরিশ্রমী মাকে দেখেই শিখেছিলেন, মেয়েরাও পারে। শুধু দরকার লক্ষ্যটাকে স্থির করা, সাথে পরিশ্রমের তো কোনো বিকল্পই নেই।
দিন চলে গেছে, তাসলিমাও হয়েছেন সংসারী। এখন তিনি চার সন্তানের মা। কাঁধে তুলে নিয়েছেন নিজ সংসারের দায়িত্ব। নিজ হাতে গড়া ব্যবসার প্রায় পুরো দায়িত্বটাই তিনি পালন করেন। তবে এ ব্যাপারে পূর্ণ সহযোগিতা পাচ্ছেন স্বামীর। যে তাসলিমার কথা বলছি তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের ফুটপাতে হাতেগোনা যে ক’জন নারী ব্যবসায়ী মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী নিয়ে বসেন তাদের একজন। রোগী বা রোগীর সাথে থাকা আত্মীয়স্বজনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব ধরণের পণ্যসামগ্রীই বিক্রি করেন তাসলিমা। পাটি, বলিশ, গামছা, বিছানার চাদর থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকমের প্লাস্টিক সামগ্রী যেমন, চাকু, মগ, হাত পাখা, বেডপ্যান ইত্যাদি নানা ধরণের পণ্য মিলবে তাসলিমার দোকানে।
এই ব্যবসাটা তাসলিমা শুরু করেছিলেন আজ থেকে প্রায় ছয় বছর আগে। শুরুতে সিএনজি চালক স্বামীই চালাতেন সংসার। তখন চার সন্তান নিয়ে ভালোই ছিলেন তাসলিমা। হঠাতই একদিন তার স্বামী মধ্যরাতে যাত্রীসহ পড়েন ছিনতাইকারীর কবলে। প্রচন্ড ভয় পেয়ে যান তার স্বামী। পরবর্তীতে তিনি আর সেই ভয় কাটিয়ে উঠতে না পেরে সিএনজি চালানো বন্ধ করে দেন। চার সন্তানের খাওয়া-পড়ার খরচ, বাসা ভাড়া চালাতে গিয়ে তাসলিমা পড়েন বিপাকে। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশিসহ বিভিন্ন জায়গাতে ধারকর্জ হয়ে যায় তার। তখন ভাই-বোনদের পরামর্শে মাত্র দুই হাজার টাকা দিয়ে শুরু করেন ব্যবসা। পরবর্তীতে তিনি ব্রাক থেকে ষাট হাজার টাকা লোন নিয়ে আরেকটু বড় করেন ব্যবসাটা। এই ব্যবসার লাভের টাকা দিয়েই বর্তমানে চলছে পুরো সংসার। নিজে পড়ালেখা না করতে পারলেও বড় মেয়েটাকে ডিগ্রি পাশ করিয়েছেন। ছোট মেয়েটা এখন কলেজে পড়ছে। তবে তাসলিমার আফসোস মেয়ে দুটো পড়ালেখা করলেও ছেলে দুটো তার বেশি দূর পড়লো না।
ব্যবসা কেমন চলছে জানতে চাইলে বলেন, বর্তমানে ১২ হাজার টাকা বাসা ভাড়া, খাওয়া-পড়ার খরচ আর সপ্তাহে সতেরশ পঞ্চাশ টাকা কিস্তি দিয়ে সঞ্চয় তেমন কিছুই থাকে না হাতে। তারপরও মাসে গড়ে সব খরচ বাদে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ হয় তার। তবে লোনের কিস্তি শোধ হয়ে গেলে কিছু টাকা সঞ্চয় হবে বলে তিনি আশা করেন।
ব্যবসা করতে গিয়ে কোন ধরণের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তাসলিমার কথা থেকে বোঝা গেলো, একই পণ্যের ব্যবসায়ীদের মধ্যে পণ্যের বিক্রয়মূল্যের অসমতাটাই হলো সবচেয়ে বড় সমস্যা। সব বিক্রেতা যদি একই ধরণের পণ্য সমমূল্যে বিক্রয় করতো তাহলে পণ্য বিক্রি বাড়তো।
বর্তমানে পুরোন ঢাকার ফুলবাড়িয়ায় বসবাসকারি তাসলিমা মনে করেন রোগীদের জন্য বিভিন্ন ধরণের পণ্য বিক্রির মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে না হোক পরোক্ষভাবে তো তিনি রোগীদের সেবা করে যাচ্ছেন, সেটাই বা কম কি। তিনি স্বপ্ন দেখেন, ফুটপাত ছেড়ে একদিন স্থায়ী কোন দোকানে তার পণ্য সাজাবেন, এই নগরের বুকেই গড়ে তুলবেন স্থায়ী ঠিকানাও।
তাসলিমা দেখিযে দিয়েছেন নারীরাও পারে। তাকে দেখে এগিয়ে আসুক অন্য নারীরাও। পূরণ হোক তাসলিমার মতো সব নারীদের স্বপ্ন।