ঢাকা, রবিবার ২৪, নভেম্বর ২০২৪ ৬:০৩:২০ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

কবরস্থানে কাজ করে ইয়েমেনের শিশুরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৭:৩২ পিএম, ২৫ মার্চ ২০১৯ সোমবার

নীল রঙের ডোরাকাটা শার্ট পরে খালি পায়ে আহমেদ আল-হামাদি স্কুল থেকে কবরস্থানে কাজ করতে যাচ্ছে। ১৩ বছর বয়সী শিশুটি কবরস্থানের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। সেখানে কবরগুলো পরস্পরের কাছ ঘেঁষে আছে এবং প্রায় প্রতিদিনই সেখানে থাকে শোকার্ত মানুষের ভিড়।

যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইয়েমেনে হামাদির মতো অনেক শিশুই স্কুল শেষে কবরস্থানে কাজ করে। দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত পরিবারগুলোর শিশুরা বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এই কাজ করছে।
খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।

ছোট কাঁধে পানির গ্যালন বহন করে আহমেদ চারাগাছে পানি দেয়। কবরের নামফলক থেকে ধুলো মুছে ফেলার বিনিময়ে মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে যা অর্থ পায় তা দিয়ে পরিবারকে সে সহায়তা করে।

আহমেদ বলে, ‘আমরা সাধারণত দাফনের জন্য অপেক্ষা করি। যদি কেউ মারা না যায় তবে আমরা গোরস্থানে ঘুরাঘুরি ও খেলাধূলা করি।’

ইয়েমেনের লাখ লাখ শিশুর মতো আহমেদ স্কুলে টিকে থাকার জন্য লড়ে যাচ্ছে। যুদ্ধ, দারিদ্র ও মহামারি আরব বিশ্বের দরিদ্রতম দেশটিতে চরম বিপর্যয় ডেকে এনেছে।

প্রেসিডেন্ট আব্দেরাব্বো মানসুর হাদির পক্ষে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ইয়েমেন যুদ্ধে যোগ দিলে পরিস্থিতি প্রকট আকার ধারণ করে। ইরান সমর্থিত উত্তরাঞ্চলীয় হুতি বিদ্রোহীরা সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ও হাদির অনুগত সৈন্যদের সঙ্গে প্রাণপণে লড়ে যাচ্ছে। এর ফলে যুদ্ধে তীব্রতা ও রক্তপাত বহুগুণে বেড়ে দেশটিতে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ডেকে এনেছে।

কাল ২৬ মার্চ হুতি বিদ্রোহীদের উচ্ছেদ করতে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের ইয়েমেনে হামলার শুরুর চার বছর পূর্ণ হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আরব বিশ্বের মধ্যে ইয়েমেনে শিশু শ্রম সবচেয়ে বেশি। শিশুদের জন্য দেশটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মেয়ে শিশুদের বাধ্য হয়ে বাল্য বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেয়া হচ্ছে এবং ছেলে শিশুদের যোদ্ধা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ ইয়েমেনকে ‘শিশুদের জন্য দোজখ’ হিসেবে অভিহিত করেছে। ২০১৮ সালে দেশটির ৮০ শতাংশ শিশুর ত্রাণ সহায়তার প্রয়োজন দেখা দেয়।
সংস্থাটি জানায়, ইয়েমেনে আনুমানিক ২০ লাখ শিশু তাদের শিক্ষালাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছে। দেশটিতে পাঁচ বছর ধরে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ চলছে।

বিশ্বব্যাংক জানায়, ২০১৫ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইয়েমেনের অর্থনীতি ৫০ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে।
দেশটিতে চলমান অর্থনৈতিক মন্দা ও মুদ্রাস্ফীতি দারিদ্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে। চরম দরিদ্র পরিবারগুলো উপার্জনের জন্য তাদের শিশু সদস্যদের উপর নির্ভরশীল হতে বাধ্য হচ্ছে।

তিন বছর আগে আতিকা মুহাম্মাদ ইয়েমেনের সামরিক বাহিনীর একজন সদস্য ছিলেন। আজ তিনি একটি ছোট মুদি দোকান চালাচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘এই গৃহযুদ্ধ সবকিছু শেষ করে দিয়েছে।’
সাবেক এই যোদ্ধা আরো বলেন, ‘আমি খুব বেশি কিছু চাই না। রুটি আর চা-ই আমার জন্য যথেষ্ট।’ আমি সৎভাবে জীবনযাপন করি।’

জাতিসংঘ জানায়, ইয়েমেনের ২ কোটি ৯০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে চার-তৃতীয়াংশ মানুষেরই মানবিক সহায়তার প্রয়োজন। ১ কোটি লোক অনাহারে মারা যাবার ঝুঁকিতে রয়েছে।

কোন কোন এলাকার স্কুলের শিক্ষকরা ২০১৬ সাল থেকে তাদের বেতন পায় না। এই অবস্থা সরকার ও বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দুই এলাকায়ই চলছে।

আহমেদ সৌভাগ্যবানদের একজন। সানায় তার স্কুলটি এখনো বন্ধ হয়ে যায়নি। এলাকাটি হুতি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
২০১৪ সাল থেকে বিদ্রোহীরা এই অঞ্চলটি দখল করে আছে।
কিন্তু যখন তার বাবা কোন কাজ পায় না, তখন পরিবারের দায়িত্ব তার কাঁধে এসে পড়ে।

১৫ বছর বয়সী ইয়াসির আল-আরবাহিও গোরস্থানে কাজ করে। তার বাবার মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হলে সে সংসারের হাল ধরতে বাধ্য হয়। তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়।

শিশুটি ঘুম থেকে উঠে স্কুলে যায়। দুপুর পর্যন্ত ক্লাশ করে। এরপর দুপুরের খাবার খেয়ে গোরস্থানে যায়।

ইয়াসির বলে, ‘যদি কোন কবর পরিস্কারের প্রয়োজন হয়, তবে আমি পানি ছিটিয়ে তা পরিস্কার করি। এরপর আমি শুক্রবার সেখানে যাই। আমি পানি নিয়ে যাই। মৃতের পরিবারের সদস্যদের কাছে আমি পানি বিক্রি করি।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিগত চার বছরে ইয়েমেনে প্রায় ১০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। যদিও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, মৃতের এই সংখ্যা আরো পাঁচ গুণ বাড়তে পারে।