থিয়েটার হলে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন আব্রাহাম লিংকন
অনলাইন ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০১:১১ এএম, ২৩ এপ্রিল ২০১৯ মঙ্গলবার
১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল। যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ওয়াশিংটনের ফোর্ডস থিয়েটারে ‘আওয়ার আমেরিকান কাজিন’ নাটকের অভিনয় দেখছিলেন। রাত ১০টা ১৫ মিনিটে নাট্যাভিনেতা জন উইলকেস বোথ প্রেসিডেন্ট বক্সে ঢুকে পিস্তল দিয়ে লিংকনের মাথার পেছনে গুলি করেন। প্রেসিডেন্টকে বাঁচাতে সেনা কর্তা রাথবন এগিয়ে এলে তাকেও বোথ ছুরিকাঘাত করে লাফ দিয়ে মঞ্চে উঠে যান এবং পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। পরের দিন অর্থাৎ ১৫ এপ্রিল সকাল সাতটা ২২ মিনিটে আব্রাহাম লিংকনের মৃত্যু হয়৷
১৮০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি আব্রাহাম লিংকন-এর জন্ম হয়েছিল কেন্টাকি প্রদেশের হার্ডিং কাউন্টিতে । প্রেসিডেন্ট হবার আগে তিনি ছিলেন একজন সুবক্তা ও স্বশিক্ষিত আইন ব্যবসায়ী।১৮৬০ সালে লিংকন রিপাবলিকানদের প্রেসিন্ডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ১৮৬১ সালে বিপুল ভোটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন।
প্রেসিডেন্টে হওয়ার পরই লিংকন সে দেশে দাশপ্রথা নিধনে কাজ শুরু করেন।কিন্তু সাদা চামড়ার মার্কিনরা কৃষ্ণাঙ্গদের দাশপ্রথা থেকে মুক্তি দিতে রাজি ছিল না। বিশেষত দক্ষিণের প্রদেশগুলো একজন উত্তরের নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে এমন কাজ মেনে নিতে পারছিল না। তাই দক্ষিণের ৭টি প্রদেশ যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিয়ন ত্যাগ করে কনফেডারেট স্টেট অফ আমেরিকা গঠন করে।পরবর্তীকালে যুক্তরাষ্ট্র ইউনিয়ন নৌবহরে কনফেডারেটদের আক্রমণ যুক্তরাষ্ট্রকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়।
লিংকন নিজেকে একজন ভাল সামরিক কুশলী হিসেবেও প্রমান করেন।লিংকন দক্ষতার সঙ্গে কনফেডারেটদের পরাজিত করেন এবং ১১ এপ্রিল ১৮৬৫ সালে ৪ বছরব্যাপী চলা গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হলেও লিংকন এর বিপদের ইতি ঘটেনি। যুদ্ধ সমাপ্তির মাত্র ৩ দিন পরে ১৪ এপ্রিল ,১৮৬৫ সালে লিংকন তার স্ত্রী’র সঙ্গে নাটক দেখতে গিয়েছিলেন৷ তখন সেখানে উইলকেস বোথ একজন অভিনেতা তার সিঙ্গেল শটে পয়েন্ট ৪৫ ক্যালিবার পিস্তল থেকে পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জে লিংকনের মাথায় গুলি করে এবং পরের দিন প্রথম প্রহরে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু কে করেছিল লিংকনকে হত্যা? এর পিছনের কারণই বা কী ছিল তা আজও ধোঁয়াশা৷
ওই সময় উইলকেস বোথ এর সঙ্গে আরও তিন আততায়ী ছিল। এর মধ্যে লিউইস পাওয়াল ও ডেভিড হেরোল্ডের দায়িত্ব ছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম সিউয়ার্ডকে হত্যা করা। জর্জ এডজার্ডের দায়িত্ব ছিল ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসনকে হত্যা করার। তবে তাদের সেই হত্যা প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
লিংকন হত্যাকারীর জন উইকিলিস বুথ জন্মগতভাবে দক্ষিণের হলেও জন বসবাস করতেন উত্তরে। গৃহযুদ্ধের সময় জন তার পেশাগত কারণে যুদ্ধে যোগ দেয়নি।জন্মগতভাবেই তিনি কনফেডারেটদের সমর্থক ছিলেন। তাই শেষ দিকে যুদ্ধের মোড় ঘুরাতে জন এবং তার ৬ জন সহযোগী প্রেসিডেন্টকে অপহরণের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন।এর জন্য তারা ২০ মার্চ ১৮৬৫ সাল ঠিক করেন।কিন্তু তারা যেখান থেকে লিংকনকে অপহরণ করবেন বলে ঠিক করেন লিংকন সেখানে উপস্থিত হন না। ফলে তাদের সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায় এবং এর দু’দিন পরেই ইউনিয়ন সৈন্যদের হাতে রিচমন্ডের পতন হয়।অবশেষে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে জন লিংকনকে হত্যা করেন।
এটা ঘটনা ফোর্ড থিয়েটারে নিজে খুন হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে তিনি আমেরিকান সিক্রেট সার্ভিস তৈরির জন্য আইন প্রণয়ন করেন। অবশ্য যদি আরও আগেও এই সিক্রেট সার্ভিস গঠন করা হলেও তাঁর খুন হওয়া আটকাতে পারা যেত না কেননা তখন সিক্রেট সার্ভিসের কাজ ছিল ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়া মুদ্রা জালিয়াতি বন্ধ করা। লিংকনের পর আরও দুইজন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট খুন হওয়ার পর ১৯০১ সালে আমেরিকান সিক্রেট সার্ভিস কে আনুষ্ঠানিক ভাবে রাষ্ট্র প্রধানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য মোতায়েন করা হয়।