ঢাকা, শুক্রবার ২২, নভেম্বর ২০২৪ ১০:১৫:২৯ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

বাবা মায়েরা মেয়েদের এতো অসহায় বানিয়ে দিচ্ছে কেন!

জেনিফার কামাল

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৪:০১ পিএম, ৩ মে ২০১৯ শুক্রবার

শিরোনামটা মাথায় আসলো আমার এক সহকর্মীর ফেসবুক পোস্ট দেখে। সেখানে তিনি লিখেছেন, তার সরকারি চাকুরিজীবী এক রুমমেটকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। প্রেমের বিয়ে হওয়া স্বত্ত্বেও যৌতুক ও স্বামীর পরকিয়ার জেরেই প্রাণ দিতে হল একজন শিক্ষিত নারীকে।    

শিক্ষকতার সুবাদে মেয়ে শিক্ষার্থীদের নানান সমস্যা শোনার সুযোগ হয়েছে। ঘুরে-ফিরে সবার সমস্যাই এক। বাবা-মাকে মানসিক শান্তি দিতে কিংবা তাদের থেকে পাওয়া মানসিক অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পেতে কেউ কেউ বিয়ে করে ফেলেছে কিন্তু সুখে নেই কেউবা বিয়ে করতে চাচ্ছে তবে মনমত জীবনসঙ্গী পাচ্ছে না; খুঁজে পাওয়ার সময়টুকু দিতে নারাজ বাবা-মা। যেন বিবাহই জীবনের সব সমস্যার সমাধান এবং সকল সুখের মূল!    

সেদিন ফেসবুকে একটি মিম দেখলাম- মেয়ে তার মাকে বলছে মা, আমি সুইসাইড করতে যাচ্ছি; মা উত্তরে বললেন, বিয়ের পরে স্বামীর সাথে যেও। মরলেও এখন একজন স্বামী প্রয়োজন না হলে স্বয়ং বিধাতাও সে মৃত্যু মেনে নেবেন না।                    

ভাবতেই অবাক লাগে, আমরা মেয়েরাও তো বাবা-মার কোলজুড়ে কত আনন্দ নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলাম, অন্তত আমরা জাহেলিয়াত যুগের বাচ্চা ছিলাম না যেখানে কন্যাসন্তানকে পুঁতে ফেলা হতো। এতো আদর সোহাগে বড় করা মেয়েকে কেন একুশ বাইশ বছর বয়স হলেই বিয়ের জন্য মানসিক চাপ দেওয়া শুরু হয়!  এ চাপ সে নিতে পারছে কিনা সেবিষয়ে বাবা-মার একদমই খেয়াল নেই। কি বিস্ময়কর!  বাবা-মার চাপে হয়তো কেউ কেউ না পারতে একজনকে বিয়ে করে সারা জীবন সমঝোতার সম্পর্কে বেঁচে থাকছে আবার কেউ ‘না পারতে একজনকে’ বিয়ে করতে চায় না বলে এবিউসিভ বয়ফ্রেন্ডকে বিয়ে করে ফেলছে এই ভেবে যে অন্তত কষ্ট যা-ই আসুক আমার চেনা জানা মানুষ থেকেই আসুক। কিন্তু এও কি কাম্য!!

কেইস স্টাডি হিসেবে একটা ঘটনা উল্লেখ করি। পরিচিত একজন শিক্ষিত মেয়ে তার তিন বছরের সম্পর্কে প্রতারিত এবং অপমানিত হবার পরেও সেই ছেলের সাথেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখছে এবং ভবিষ্যতে তাকেই বিয়ে করার পরিকল্পনা করছে এবং সে ছেলে একবার প্রতারণা করার পরও মেয়েটি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে, এ দৃশ্যের বর্ণনা দেওয়া যেতে পারে জীবনানন্দ দাশের সেই কবিতার মতো করে ‘কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে’ কিংবা শিল্পী ফেরদৌসী রহমানের গানের মতো ‘আমি অভাগিনী শুধু যে তোমারই যতই ব্যথা দিবে সইবো'।  অথচ এতোকিছুর পরেও সেই প্রেমিক তার সাথে যাচ্ছে-তাই ব্যবহার করে তাকে মানসিকভাবে দুর্বল বানিয়ে নিজের পৌরুষ টিকিয়ে রাখছে!     

স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, এ অবস্থায় সেই মেয়ের বাবা মা কোথায়! বাবা-মা আদৌ জানেন কি, যে মেয়ের এ বয়সে প্রেমিককে নিয়ে রঙিন স্বপ্ন দেখার কথা সেখানে সে মেয়ে প্রেমিকের চূড়ান্ত প্রতারণা আর অপমান দেখেছে! জানবার কথা না। কারণ তারা তাদের শিক্ষিত মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য পাত্র খোঁজায় ব্যস্ত। হয়তো বাবা মার পছন্দে বিয়ে করার ভয়ে কোনদিন কেইস স্টাডির মেয়েটি তার প্রতারক এবং এবিউসিভ প্রেমিকই বিয়ে করবেন তারপর হয়তো একদিন সংবাদের শিরোনাম হবেন স্বামীর পরকিয়ায় বাধা দিয়ে খুন হলেন অমুক কিংবা প্রতারণা সহ্য না করতে পেরে আত্মহত্যা করলেন তমুক। যেই বাবা-মার মেয়েকে ত্রিশ বছর বয়সে অবিবাহিত দেখে মরে যাওয়ার অবস্থা হয়, সেই বাবা মা এবিউসিভ বিবাহিত সম্পর্কে মেয়েকে স্ট্রাগল করতে দেখেও বেঁচে থাকে এই ভেবে; যাক বাবা! মেয়েকে অন্তত একটি বিয়ে দিয়েছি!         

আমি খুব অসহায়বোধ করি, কারণ সামগ্রিক পরিস্থিতি বলছে শিক্ষা কোন পার্থক্য আনতে পারছে না। দেশের সবচেয়ে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, ভালো চাকরি করে, ভালো অবস্থানে থেকেও মেয়েরা স্বামী, প্রেমিকের মানসিক, শারীরিক অত্যাচার মেনে নিচ্ছে। এতোটা স্যাক্রিফাইসিং সমাজ কি আমরা চেয়েছি?     

আমার পুরো লেখায় প্রতারক প্রেমিক কিংবা পুরুষ সমাজকে নিয়ে কোন বিশ্লেষণ আমি করিনি। সে বিতর্কে আমি যেতেও চাই না। সমস্যা পরিবারে। সমস্যা বাবা-মার চাওয়া-তে। আপনার কন্যার জন্য একজন পুরুষসঙ্গী নয়; সুখ কামনা করুন। একজন মেয়ে হিসেবে মেয়ের বাবা-মায়েদের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ আপনার কন্যা সন্তানকে এতোটা অসহায় বানিয়ে ফেলবেন না যাতে করে এ অসহায়ত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কোন পুরুষের দারস্ত হতে হয়। আপনাদের সহযোগিতা এবং বিশ্বাসই একজন মেয়ে সন্তানকে সমাজের ‘কাঙ্ক্ষিত ছেলে সন্তান’ থেকে কোন অংশে কম নয় বরং বেশি অবদান রাখতে অনুপ্রেরনা দেবে।  একবার ভাবুন বিয়ের জন্য চাপ না দিয়ে উচ্চশিক্ষা এবং ক্যারিয়ারে সহযোগিতা করলে কেমন হতে পারে আপনার সন্তানের জীবন! বিয়ে আপনার সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখবে না; মানসিকভাবে সুখে আছে কিনা তা-ই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি এ সমাজকে একজন বিবাহিত মানুষ নয় একজন সুখী মানুষ দিতে পারেন। পরিবর্তন আসুক নিজের কাছে থেকেই।