নিউ মার্কেট-গাউছিয়া-চাঁদনী চক : ভীড় বাড়ছে
আসমা আলমগীর
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৪:০৭ পিএম, ২১ মে ২০১৯ মঙ্গলবার
গৃহিণী ও তরুণী ঈদের কেনাকাটায় পছন্দের জায়গাটি বরাবরই বিশেষ অবস্থান ধরে রেখেছে রাজধানীর নিউ মার্কেট-গাউছিয়া-চাঁদনী চক। ঈদকে সামনে রেখে নিজের ও প্রিয়জনের জন্য কেনাকাটায় তার ভীড় করতে শুরু করেছেন এই মার্কেটগুলোতে।
প্রচুর দোকান থাকায় এখানে যাচাই-বাছাইয়ের রয়েছে বড় সুযোগ। এখানে ক্রেতার ব্যাপক ভিড় হওয়ার আরেকটি বড় কারণ, সাধ্যের মধ্যে পছন্দের জিনিসটি পাওয়ার নিশ্চয়তা।
মূলত নিউ মার্কেট, গাউছিয়া ও চাঁদনী চক কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি বড় মার্কেট। নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত সবার চাহিদা পূরণের জন্য এ তিনটি মার্কেট যেন সব সময় প্রস্তুত।
এখানে ১০ টাকায় গহনা, দেড় শ টাকায় জুতা, আড়াই শ টাকায় সালোয়ার-কামিজ, তিন শ টাকায় শাড়ি পাওয়া যায়। আবার ব্র্যান্ডের প্রসাধনী, দামি গহনা, হাজার টাকায় সালোয়ার-কামিজ, লাখ টাকার লেহেঙ্গা, শাড়িও বিক্রি হয়।
শিশু-কিশোর, বয়স্ক, তরুণদের চাহিদামতো জিনিস মিলছে দোকানে দোকানে। একই সঙ্গে ঘর-গৃহস্থালির সব পণ্যও বিক্রি হচ্ছে। আর সে সুবাদে রমজানের শুরু থেকেই এই এলাকার বিপণিবিতানে ঈদকেন্দ্রিক কেনাকাটা শুরু হয়ে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
আজ মঙ্গলবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেল, ক্রেতার সমাগম বাড়ছে। বরাবরের মত দেখা গেল,পুরুষের তুলনায় এখানে নারী ক্রেতার আধিক্য। আগতদের মধ্যে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তের সংখ্যাটা বেশি। নিম্নবিত্তও কম নয়।
সকাল থেকেই ঢাকা কলেজের সামনের এলাকা থেকে শুরু করে রাস্তা ও গলির দুই পাশে এবং নিউ মার্কেট-গাউছিয়া সংযোগকারী ওভারব্রিজের ওপরে হকারদের হাঁকডাক শুরু হয়ে গেছে। এক খন্ড কাপড় বা চৌকির ওপর পণ্য সাজিয়ে বসে যান ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা।
দুপুরের রোদ মাথায় নিয়ে বিভিন্ন ডিজাইনের জুতা-স্যান্ডেল সামনে রেখে চাঁদনী চকের চত্বরে হকার মনসুর আলী বেশ শব্দ করে সুর করে বলে যাচ্ছিলেন, `এমন জুতা-স্যান্ডেল আর পাইবেন না। দেখলেই মন লাগব। যা নিবেন দুইশ। যেটা নিবেন দুইশ।`
ইদ্রিস আলীর কাছ থেকে তিন জোড়া স্যান্ডেল কিনলেন মুমু হোসেন। তার মন্তব্য, `স্যান্ডেলগুলো দেখতে সুন্দর। ঈদের পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে পরলে বোঝার উপায় নেই এসবের দাম মাত্র দেড় শ টাকা।`
ইদ্রিস আলীর পাশেই বড় একটি চাদরের ওপর জর্জেট, সুতিসহ বিভিন্ন ধরনের শাড়ি বিক্রি করছেন হকার শাহেদ ইসলাম।
শাহেদ বলেন, মাশা আল্লাহ ব্যবসা ভালোই। শাড়ি দুই শ টাকা থেকে পাঁচ শ টাকার মধ্যে বিক্রি করতাছি। রোজা শুরু তো। এখনই জমে নাই,আর কয়দিন যাক ঠিকই জমবো।
হকারদের পার হয়ে বড় দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, চাঁদনী চক ও গাউছিয়ার মধ্যে সেলাই ছাড়া সালোয়ার-কামিজ, ওড়না, গজ কাপড়ের যেন মেলা বসেছে। এসব দোকানে পাকিস্তানি সুতির থ্রিপিস ও ভারতীয় জর্জেট ও সুতির থ্রিপিস বেশি। এসবে রয়েছে সুতা, জরি, প্রিন্টের কাজ করা। দাম এক হাজার ২০০ থেকে ১২ হাজার টাকা। ক্ষেত্রবিশেষে তারও বেশি। হাজার টাকার মধ্যে গজ কাপড়ের সুন্দর থ্রি-পিস মিলছে।
সেলাই ছাড়া কাপড় কিনে চাঁদনী চক, গাউছিয়া, নিউ মার্কেটের মধ্যে দর্জির কাছে বানাতে দেওয়ার সুবিধা রয়েছে।
মোহাম্মদপুর থেকে ঈদ শপিং করতে এসেছেন বিন্তী ও তুষিণা । তারা বললেন, এখানে এসেছি গজ কাপড় কিনতে। দামে একটু বেশি হলেও এখানে দরদাম করে কেনা যায় এবং অনেক ধরনের কাপড় থাকে এখানে। তাছাড়া থ্রিপিসের জন্য চাঁদনীচকের তুলনা হয় না। সব ধরনের থ্রিপিচ চাঁদনীচক থেকে কিনে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। তবে আপাতত গজ কাপড়ই কিনছি।
চাঁদনী চকে সিঁড়ির পাশে মেশিনে বিভিন্ন কাপড় সেলাই করে চলেছেন মাসুদ মিঞা। কথা বলার ফুরসত নেই,এখন থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তারই ফাঁকে জানালেন, চাঁদনী চক, গাউছিয়া থেকে কাপড় কিনে তাঁর কাছে দিয়ে অন্য বাজার সারছে ক্রেতারা। এই ফাঁকে তিন ঘণ্টায় থ্রি-পিস সেলাই করে সরবরাহ করছেন। মজুরি অন্যান্য সময়ের তুলনায় এক শ টাকা বেশি নিচ্ছেন। তবে সময়ের অভাবে সব অর্ডার নিতে পারছেন না।
গাউছিয়ার নূর ম্যানসনে ঢুকলেই চোখ ধাঁধিয়ে যায় জমকালো তৈরি পোশাকের বিশাল সংগ্রহে। এসব পোশাকের অধিকাংশ আমদানি করা। দাম এক হাজার ২০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ছোট মেয়েদের বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে আটশ থেকে ২০০০ টাকায়।
নিউ মার্কেটে জুতা ও স্যান্ডেলের দোকানগুলো পর পর রয়েছে। এসব দোকানে আমদানি করা জুতা-স্যান্ডেল বেশি। মেয়েদের স্যান্ডেল তিনশ থেকে ১৬০০ টাকা। তবে মেয়েদের দোকানের বাইরের জুতা-স্যান্ডেলের দিকেই আকর্ষণ বেশি।
শাড়ির বড় বাজার রয়েছে গাউছিয়া, নিউ মার্কেট ও চাঁদনী চকে। গাউছিয়ার হকার্স মার্কেটে সুতি থেকে হাল ফ্যাশনের জর্জেট, জমকালো কাতান, জামদানি সবই পাওয়া যাচ্ছে এখানে। ঈদ উপলক্ষে নতুন ডিজাইন ও নামের শাড়ি এনেছেন বিক্রেতারা।
শাড়ির দোকানে হালকা ভীড় লক্ষ করা গেল।
ঈদ সামনে রেখে চাঁদনী চক ও গাউছিয়ায় গহনার দোকানগুলো সেজেছে নতুন করে। বাহারি ডিজাইনের গোল্ড প্লেটেড গহনায় রয়েছে পাথরের কাজ। এসবের চাহিদাও বেশ। তবে আজ দোকানগুলোতে তেমন একটা ভীড় চোখে পড়লনা।
এ ঈদেও ঘর-গৃহস্থালির বিভিন্ন জিনিস থালা-বাটি, গ্লাস, চামচ, হাঁড়ি, কড়াই, দরজা-জানালার পর্দা, কাপড়ের ফুল, বিছানার চাদর, সোফার কুশন, কুশন কভার ইত্যাদি ভালই বিক্রি হচ্ছে। কেননা ঈদ সামনে রেখে অনেক গৃহিণীই ঘরটাকেও নতুন আঙ্গিকে সাজানোর চেষ্টা করে।
ক্রেতা রাশিদা খাতুন বললেন, `বয়স ৫০ পার করেছি। ঢাকায় অনেক দোকান ও মার্কেট হয়েছে। কিন্তু বহুদিন থেকে ঈদের সব বাজার নিউ মার্কেট, গাউছিয়া ও চাঁদনী চকেই সেরে আসছি। এখান থেকেই সব সময় কেনাকাটা করি।`
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, মেয়েরা এখন রেডিমেট থ্রিপিস বেশি না। কিনে গজ কাপড়ই বেশি কিনছে। কয়েকদিন পর রেডিমেট কাপড়ের দোকানে ভীড় বাড়বে।
কথা হল, আমান সুলতানার সাথে। তিনি বলেন, আজ সালোয়ার-কামিজের জন্য গজ কাপড় কিনলাম। থ্রিপিসসহ অন্যান্য জিনিস পরে কিনবো।