জেন্ডার সমতায় জেন্ডার বাজেট গুরুত্বপূর্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০১:৩১ পিএম, ২৬ জুন ২০১৯ বুধবার

নারী- পুরুষের বৈষম্য হ্রাস এবং নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে কর্মসূচি গ্রহণ এবং বিনিয়োগই হলো জেন্ডার বাজেটের মূল লক্ষ্য। বিগত কয়েক বছর যাবত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে জেন্ডার বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। কিন্তু এই বাজেট কতটা জেন্ডার সংবেদনশীল, নারীর ক্ষমতায়নে কতটা ভূমিকা রাখছে তা বিবেচনার দাবি রাখে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত ‘জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেটের (২০১৯-২০) বাস্তবায়ন পর্যালোচনা’ শীর্ষক বাজেট পরবর্তি এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সংগঠনের আনোয়ারা বেগম-মুনিরা খান মিলনায়তনে মঙ্গলবার এ সভা অনুষ্ঠিত হয় ।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আয়শা খানম। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষে আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, ড. নাজনীন আহমেদ, সিনিয়ির রিসার্চ ফেলো, বিআইডিএস, ইউএন ইউমেন এর প্রোগ্রাম এনালিস্ট সোহেল রানা। সভায় জেন্ডার বাজেট এর প্রেক্ষিতে সুপারিশসমূহ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষে কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত আন্দোলন সম্পাদক রেখা চৌধুরী। সভাটি পরিচালনা করেন সংগঠনের আন্দোলন উপপরিষদ এর অ্যাভোকেসি অ্যান্ড লবি শাখার পরিচালক জনা গোস্বামী।
সভার সভাপতি আয়শা খানম বলেন, নারীর জন্য, নারী পুরুষের সমতার জন্য বিশেষ বরাদ্দ হলো জেন্ডার বাজেট। এটি একটি বিষয়ভিত্তিক খাতওয়ারি বরাদ্দ। জেন্ডার সমতার জন্য জেন্ডার বাজেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর পেছনে নারী আন্দোলনের প্রচুর অবদান রয়েছে। জাতিসংঘ বিশ্ব নারী আন্দোলন ২০-২৫ বছরের কর্মযজ্ঞ আলোচনা করছে। জাতিসংঘ , ইউ এন উইমেন এর নেতৃত্বে হবে এই রিভিউ। জেন্ডার বাজেটের মাধ্যমে অর্থনীতিতে নারীর অবদান, অর্থনীতির মূল স্রোতধারায় নারীর দৃশ্যমানতা, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নকে দৃশ্যমান করা দরকার। কারণ বেইজিং কর্মপরিকল্পনার সাথেও এটি যুক্ত।
তিনি আরও বলেন, ১৯৯৪ সাল থেকে মূলত খাতওয়ারি বরাদ্দের বরাদ্দ এর বিষয়টি এসেছে। যার জন্য নারীবাদী, নারী আন্দোলনের এক্টিভিস্ট এটি নিয়ে কাজ শুরু করেন। দীর্ঘ সংগ্রামের পর বাংলাদেশ সরকার এটি গ্রহণ করে। প্রথমে চারটি মন্ত্রণালয় জেন্ডার বাজেট ইস্যূটি গ্রহণ করে, তারা এটি নিয়ে কর্মপরিকল্পনা করেছে। এখন প্রতিটি মন্ত্রণালয় জেন্ডার বাজেট প্রণয়ন করেছে। এখন গুরুত্ব দেয়ার বিষয় হলো জেন্ডার বাজেটের এই বরাদ্দ সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা? নারীর জীবনের গুনগত মান পরিবর্তন হচ্ছে কিনা? তাদের জীবনের ইতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে কিনা? কারণ ‘‘সকল পরিবর্তনই কিন্তু উন্নয়ন নয়’’।
আয়শা খানম বলেন, তাই বরাদ্দর পর মনিটরিং এবং রিভিউ এরজন্য দরকার একটি মনিটরিং সেল গঠন করা। যেখানে জেন্ডার এক্সপার্ট থাকবেন। ১/২ বছর পর পর এটি রিভিউ হবে, যার দাবিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারী আন্দোলনের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরো প্রস্তাব রাখেন , নারীর ক্ষমতায়নে ইউএন উইমেন জাতিসংঘের অংশ হিসেবে কাজ করছে। তাই বাজ্টে বরাদ্দের মনিটরিং এর জন্য মনিটরিং সেল গঠনের জন্য তিনি ইউএন উইমেন কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। কারণ মনিটরিং সেল গঠনের পেছনে অনেক মেকানিজম থাকে, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব থাকে, জেন্ডার সংবেদনশীলতার অভাব থাকে।
তিনি বলেন, জেন্ডার বাজেটের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন বেইজিং+২৫ এর একটা অংশ, একইসাথে ২১ শতকের নারী আন্দোলনের একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আমাদের ভাবতে হবে, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদকেও কাজ করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, জেন্ডার বাজেটের মাধ্যমে জেন্ডার বৈষম্য দূর করতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে জেন্ডার সেল থাকা দরকার। এখানে বৈষম্য থাকতে পারে, মতানৈক্য থাকতে পারে। এটা জেন্ডার সংবেদনশীলতার বিষয়। এর জন্য জেন্ডার বিশেজ্ঞত এর মতামতের প্রয়োজন রয়েছে।
তিনি বলেন, এছাড়াও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীর উপস্থিতি বেশি হলে বরাদ্দের সুফল আসবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা এসব ক্ষেত্রে বরাদ্দ বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। আউটকাম ভিত্তিক ইন্ডিকেটর ঠিক করা প্রয়োজন যাতে নারীর জন্য গৃহীত কর্মসূচির ফলাফল মূল্যায়ন করার জন্য।
তিনি আরও বলেন, পাশাপাশি শ্রম বাজারে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য নারীর গৃহস্থালির কাজের চাপের প্রতিবন্ধকতা দূর করা, প্রচলিত জেন্ডার বৈষম্য দূর করতে কারিকুলামপরিবর্তন, মানসিকতার পরিবর্তন করা দরকার। এছাড়া শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র তৈরিতে সরকারের সাথে ব্যক্তিগত প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, প্রশিক্ষণগুলো নারীবান্ধব করা এবং শিল্পগুলোকে যে প্রণোদনা দেয়া হয় তা নারীদের দেয়া হলে সব শিল্প তার সুফল পাবে। যথাযথভাবে মাতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করা, নারীদের প্রযুক্তিভিক্তিক ট্রেনিং এবং মোটিভেশনাল ট্রেনিং এর বৃদ্ধি করা। এসব বিষয় বাজেটে উল্লেখ করা দরকার। একশো কোটি টাকার যে স্টার্ট আপ আছে সেখানে নারীদের অন্তর্ভূক্তি করার সুপারিশ করা জরুরী।
ইউএন উইমেন বাংলাদেশ এর প্রোগ্রাম এনালিস্ট সোহেল রানা বলেন, জেন্ডার বাজেট করার আগে মন্ত্রণালয়গুলোর জেন্ডার ইস্যূর ব্যাপারে সচেতন হওয়া দরকার। এখানে জেন্ডার সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। অন্যদিকে মনিটরিং সেল গঠন করার জন্য ইউএন উইমেন কাজ করছে বলে তিনি জানান।
আরো আলোচনা করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের কর্মকতা বনশ্রী মিত্র, ব্র্যাকের কর্মকতা নিশাত সুলতানা এবং হাঙ্গার প্রজেক্ট কর্মকতা দিলীপ কুমার সরকার।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাখী দাশ পুরকায়স্থ, সীমা মোসলেম, স্বাস্থ্য সম্পাদক নূরূল ওয়ারা বেগম, অর্থ সম্পাদক দিল আফরোজ বেগম, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ঢাকা মহানগর শাখার নেতৃবৃন্দ সহ সংগঠনের অন্যান্য সম্পাদক নেত্রী ও সংগঠকবৃন্দ।