প্রসঙ্গ: স্যানিটারি ন্যাপকিনে ভ্যাট
নাদিরা কিরণ
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১০:৫৪ পিএম, ১ জুলাই ২০১৯ সোমবার
স্যানিটারি ন্যাপকিনের ওপর ৪০% ভ্যাট গতবছরই আরোপ করা হয়। এবারও এ উচ্চকর অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এ নিয়েই বিতর্ক ও সমালোচনা উঠেছে। অনেকে ভাবছেন তা এবছরই। তবে তথ্যগত কিছুটা বিভ্রাট থাকলেও স্যানিটারি ন্যাপকিনের ওপর উচ্চকরারোপই ভুল সিদ্ধান্ত।
কারণ এটি বিলাসী পণ্য নয়? দেশীয় স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রস্তুতকারী ইন্ডাস্ট্রিকে টিকিয়ে রাখতে আমদানি পণ্যের ওপর করারোপের গড়পরতা হিসেব এখানে খাটেনা। এজন্য যে, দেশে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এ ব্যবহার্য পণ্যটি পর্যাপ্ত উৎপাদন করার সক্ষমতা এখনও অর্জন করেনি। সেদিক থেকে এবারের বাজেটে তা অপরিবর্তিত রাখা অবিবেচনার। একই সঙ্গে মাতৃমৃত্যু হার কমানোর পাশাপাশি নারীর স্বাস্থ্যসুরক্ষায় সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা-এসডিজি অর্জনের পরিকল্পনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একদিকে নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারের নানা উদ্যোগ, আরেক দিকে স্যানিটারি ন্যাপকিনে উচ্চহারে কর বহাল রাখা স্ববিরোধী অবস্থানই দৃশ্যমান।
সবচেয়ে বড় কথা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি স্বত্ত্বেও এ দেশের কত শতাংশ নারী স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন সেটা বিবেচনায় আনতে হবে। মাসিক চলাকালীন অস্বাস্থ্যকর পন্থা ব্যবহার নারীর নানা রোগব্যাধিসহ মাতৃমৃত্যু, অকাল মৃত্যুর কারণ। আধুনিক এ যুগে এজন্য কেবল অসচেতনতা দায়ী করার সুযোগ নেই। বরং আর্থ সামাজিক অবস্থার কারণে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পারেনি পরিচ্ছন্ন ও আরামদায়ক এ ব্যবস্থাটি। কারণ উচ্চমূল্য। দেশের বেশিরভাগ পরিবারের আর্থিক অবস্থান বিবেচনায় নিম্নবিত্তের ঘরের নারীদের কাছে এ পণ্যটি পৌঁছানোর কথা ভাবার অবকাশই তৈরি হয়নি।
দেশীয় পণ্যের বাজার সৃষ্টি করতে বিদেশী পণ্যে এ করারোপ এ যুক্তিও টেকেনা যখন এর কাঁচামালের ওপর ভ্যাট অব্যাহত থাকে। কারণ তাতে দেশীয় উৎপাদিত পণ্যের দাম সে হারে কমবে না।
আরেকটি বিষয় এদেশে উৎপাদিত পণ্যের মান, ব্যবহারের স্থায়িত্ব এবং আবহাওয়া উপযোগী তুলনামুলক স্বচ্ছন্দ কতটা তৈরি হয়েছে এমনটাও বলা যাবেনা। ফলে জনসংখ্যার বিশাল অংশ মধ্যবিত্ত পরিবারের নারীদের ব্যবহারের সুযোগটা বাড়িয়ে দেয়ার বিষয়টি বিবেচনায় আনা উচিৎ স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা ভেবেই।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এসব বিবেচনায় স্যানিটারি ন্যাপকিনের ওপর ভ্যাট কমিয়েছে। এদেশেও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়ে মাতৃ মৃত্যুহার সন্তোষজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। তবে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সকল এবং সব বয়সী নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরী।
সেদিক দিক বিবেচনায় দেশের অর্ধেকেরও বেশি নারীর মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে এবং আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে এ পণ্য যেখানে আরও সহজলভ্য করা উচিৎ, সেখানে এ বিষয় অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত বিবেচনা প্রসুত নয় বলেই মনে করি।
বরং দেশী বা বিদেশী সকল স্যানিটারি ন্যাপকিন এবং এর কাঁচামালের ওপর সকল ভ্যাট মওকুফ করা উচিৎ। তাই বিষয়টি অবশ্যই পুনঃবিবেচনার দাবি রাখে।
লেখক : বার্তা সম্পাদক, এটিএন বাংলা