ঢাকা, শুক্রবার ২২, নভেম্বর ২০২৪ ৩:১৮:৪০ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

বন্ধ হোক পারিবারিক নির্যাতন

আলফা আরজু

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:২৪ পিএম, ২৪ জুলাই ২০১৯ বুধবার

দুইদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত এক সহকর্মীর স্বামী কতৃক নির্যাতনের ঘটনার বর্ণনা পড়ছি আর ভাবছি - কি দারুন সমাজ সংসার!

কাবিননামার মত বৈধ একটি দলিল হাতে নিয়ে স্বামীরা (সবাই না, আবার বলছি শুধু নির্যাতক স্বামীদের কথা বলেছি) কি সুন্দর-নিপুন ভাবেই না নারীদেরকে অত্যাচার করে চলেছেন। আমরা দেখছি, পড়ছি, কেও কেও আহা-উহু করছি। আবার কেও নির্যাতিতের হাত ধরছি - শক্ত হবার আহবান করছি।

খুব শক্ত হতে হয় - এই সব ক্ষেত্রে। অনেক বেশি মানসিক, আর্থিক, সামাজিক ও পারিবারিক শক্তি লাগে। যাই হউক, আমার অন্তর থেকে সেইসব নির্যাতিতের জন্য শুভ কামনা ও ভালোবাসা। আশীর্বাদ করার সাহস আমার নেই - আমি ধার্মিক নই।

স্বামী অথবা পুরুষ পার্টনারের হাতে নির্যাতনের ঘটনা সারা দুনিয়াতেই আছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষপটটা একটু অন্যরকম।

ধরুন, আপনি নারী - সুন্দরী। আপনাকে পুরুষ পেটাবে অথবা মানসিক নির্যাতন করবে, এই কথা বলে,"চেহারা সুরত থাকলেই হয় না, ভালো (এইটা কি জানা নেই) বৌ হওন লাগে"।

আপনি অসুন্দর। আপনাকে পেটানোর জন্য বলা হবে "যেমন চেহারা সুরত খারাপ সেইরকম মন মানসিকতাও খারাপ", তাই মারি।

আপনি প্রতিষ্ঠিত। আপনাকে পেটানো হবে এই বলে "অফিসে বসদের সাথে কি করিস জানি না"।

আপনি শিক্ষিত। আপনাকে পেটাতে হবে "পড়ালেখা কইরা কি শিখছস।"

আপনার পুত্র সন্তান হয় নাই - স্বামী মারবেন। কন্যা সন্তান হয় কেন?- মার খাবেন।

শশুড়-শাশুড়ি-ননদ-দেবর- সবার হাতে মার খাবেন, অপমানিত হবেন।

শশুড়বাড়ির কারোর কথার পিঠে যৌক্তিক কোন কথা বলেছেন - মার খাবেন, মানসিকভাবে নির্যাতিত হবেন।

স্বামীর কু-কীর্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন? - মার খাবেন।

আপনি খুব বন্ধুবাৎসল্য। মার খাবেন - "তোর বাইরের মানুষের লগে এতো উঠাবসা কেন?"

আমার পরিচিত এক নারী প্রতিদিন তার শিক্ষিত স্বামী কতৃক মার খান - একদিন স্বামী মারেন - তরকারিতে লবন কম হওয়ার জন্য, আরেকদিন মারেন তরকারিতে ঝোল বেশি দেয়ার জন্য, কখনো মারেন - তাদের সন্তানের পরীক্ষার ফলাফল খারাপের জন্য। এইরকম কারণের অভাব হয় না - স্বামীদের মারার জন্য।

কিন্তু আপনি যদি একদিন প্রতিবাদ করেন - শেষ। দফারফা সেইদিনই - এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক।

আপনি মার খাবেন, আপনার মা-বাবা-দাদা-দাদি-নানা-নানী-ভাই-বোন কেও বাদ যাবে না - শশুড়বাড়ির লোকজনের কটু কথা থেকে।

তাই সংসার করতে হলে - বোবা, বধির, বয়রা, আত্মসম্মানহীন হয়ে উঠার চর্চা করুন।

কোনো কথা শুনবেননা, শুনলেও বুঝতে পারবেন না। আপনার কণ্ঠস্বর যত মধুর হউক না কেন - কোনো কথা বলা যাবে না। আপনি যত বুদ্বিমতিই হউন না কেন - তার চর্চা করা যাবে না।

বাংলাদেশের সকল নারী যেইদিন বোবা, বধির, বয়রা, আত্মসম্মানহীন হয়ে উঠবেন - সেদিন দেখবেন - স্বামী কতৃক নারী নির্যাতন বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ, আমাদের পুরুষ ভাই-ব্রাদাররা পাল্টাবেননা। এতদিনের মাইর-পিট করার অধিকার হঠাৎ করে উনারা পাল্টাতে পারবেন না- তাই সংসার নামক অশান্তির ঘরে যদি থাকতেই হয় - তাইলে বোবা, বধির, বয়রা ও আত্মসম্মানহীন হয়ে উঠুন।

"মৌ সুন্দর কেন? - মারো
মৌ অসুন্দর কেন? - মারো
মৌ’য়ের ছেলে সন্তান হয় না কেন?- মারো
মৌ’য়ের মেয়ে হয় কেন? -মারো
মৌ প্রতিষ্ঠিত কেন?- মারো
মৌ শিক্ষিত কেন?-মারো
মৌ নির্যাতনের প্রতিবাদ করে কেন?- মারো
মৌ বুদ্বিমতি কেন?- মারো".....

মৌ'দের নির্যাতনের জন্য অজুহাতের কোন অভাব নেই। তাই মারতে থাকুন, শুধু মনে রাখবেন -
আজ মৌ
কাল তনয়া
পরশু আপনার আদরের সুনয়না

গৃহে বা বাইরে নির্যাতনের (মানসিক ও শারীরিক) শিকার হলে - পুলিশে রিপোর্ট করুন, সচেতন হউন ও সকলে নিরাপদে থাকুন।

লেখক : প্রবাসি সাংবাদিক
(লেখাটি ফেসবুক থেকে নেয়া)