ঢাকা, রবিবার ২৪, নভেম্বর ২০২৪ ৬:১২:৪৩ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
সাময়িক বন্ধের পর খুললো যমুনা ফিউচার পার্ক ডেঙ্গুতে আরও ১০ জনের প্রাণ গেল ডেঙ্গুতে এ বছরেই ৫১ শিশুর প্রাণহানি মাকে হত্যা করে থানায় হাজির ছেলে আমদানির সাড়ে তিনগুণ দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে আলু ঢাকায় আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল সাতক্ষীরায় সাফজয়ী তিন নারী ফুটবলারের গণসংবর্ধনা

আজও মেয়েদের বেড়ে ওঠায় অনেক বাঁধা

সাহজাদা পারভীন সাজু   | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:৪৪ পিএম, ২১ মার্চ ২০১৯ বৃহস্পতিবার

সাহজাদা পারভীন সাজু  

সাহজাদা পারভীন সাজু  

সমাজের বদলটা খাতা কলমে যেমন আছে তেমনি বাস্তবে দেখতে পাই নিজেকে দিয়ে। বলছিলাম নারীদের বিষয় নিয়ে। আমাদের পরিবারগুলো এখনও মেয়েদের একজন মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠার পথে অনেক বাঁধা। সক্ষম মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠার যে স্বপ্ন তা থেকে একটি মেয়েকে দূরে রাখা হয় এখনও। তাদের সব সময় একটাই চেষ্টা কিভাবে মেয়েটি শ্বশুর বাড়ি যাবে কেমন বর, ঘর এসব তার মাথায় ঢোকানো। পারলে পাড়ার সবই মিলে ছোট্ট কোমল মনটাকে বিষিয়ে দেয়। এখন থেকে এটা করা যাবে না ওটা করা যাবে না। প্রতি পদে পদে তাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হয়, তুমি মেয়ে এসব তোমার কাজ না।

মেয়েটি এ সংসারে আপন কেউ না। একটু বড় হলে সে অন্যের ঘরে চলে যাবে, এমন ধারনার মধ্যেই একটি মেয়ে বেড়ে ওঠে। মেয়েটি তখন খুব একা হয়ে পড়ে। তখন থেকে সে আসলে দ্বীধান্বিত হয়ে যায়। প্রচন্ড অসহায় একটা পরিবেশে সে বড় হতে থাকে। জন্মদাতা বাবা-মা তার আপন কেউ নন। অন্য কোন পরিবারের সদস্যরা তার আপন। একবার ভাবুনতো নিজের ছোট্টবেলার সেই সময়টার কথা!

একটি ছেলে সন্তান যেমন সবার সহযোগিতা পায় তার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পেছনে। তেমনি একটা মেয়ে কি সেই সাপোর্ট পায় সবার কাছ থেকে? তারপরও মেয়েরা শত প্রতিকূলতা পেড়িয়ে আজ স্ব স্ব ক্ষেত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সফলতা দেখাচ্ছে। চ্যালেঞ্জিং পেশায় সততা ও নিষ্ঠার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। কিন্তু সে সংখ্যা নিতান্ত কম। 

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, দেশে এক কোটি ৬৮ লাখ নারী কর্মক্ষেত্রে রয়েছেন। তবে দেশের মোট জনসংখ্যার তুলনায় তা নগণ্য বলেই মনে করেন সমাজে প্রতিষ্ঠিত নারী উদ্যোক্তারা।

দেশে তৈরি পোশাক খাতের বিকাশের সাথে সাথেই বেড়েছে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ। তবে শ্রমভিত্তিক খাতেই এখন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ অর্থনীতিতে নারীর অবদান।

খাত ভিত্তিক নারীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে দেখা যায়, কৃষি খাতে ৯০ লাখ নারী, বিভিন্ন শিল্প খাতে ৪০ লাখ নারী, সেবা খাতে ৩৭ লাখ নারী, ব্যাংক-বীমার মত আর্থিক খাতে ৭০ হাজার নারী রয়েছে।

তাই উন্নত দেশের স্বপ্ন পূরণে অর্থনীতির মূল ধারায় নারীর সম্পৃক্ততা বাড়ানের কোন বিকল্প নেই বলেই মনে করেন নারী অর্থনীতিবিদরা। তবে গ্রামীণ অর্থনীতিতে পুরুষের তুলনায় নারীর অংশগ্রহণ বেশি।

গবেষণা বলছে, গ্রামীণ অর্থনীতিতে নারীর অবদান ৫৩ শতাংশ। বিপরীতে পুরুষের অবদান ৪৭ শতাংশ।

তবে গ্রামীণ অর্থনীতিতে নারীর অবদান বেশি তা আর দেখতে চাই না। আমার মত এর বিপরীতেই কারণ নারীরা এই জায়গায় আটকে থাকুক সেটা কাম্য না। মূলধারায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। 

কর্মক্ষেত্র নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে এনজিওগুলো কাজ করছে। উন্নয়ন কার্যক্রমসহ প্রতিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর কার্যকরী অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে এবং এজন্য নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন আরও বেশি প্রয়োজন। পাশাপাশি নারী যদি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয় তাহলে সিদ্ধান্ত গ্রহণসহ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নে সে অবদান রাখতে পারে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহ সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। সরকারের রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নে বিশেষ করে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য মাত্রা-এমডিজি’র লক্ষ্যার্জনে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বা এনজিওসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। নারীর আয়-উর্পাজন দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছে। বিশেষ করে ক্ষুুদ্র নারী-উদ্যোক্তা উন্নয়ন দেশের উন্নয়নের অংশীদার।

নারীর প্রতি নির্যাতন-বৈষম্য কমিয়ে আনতে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন প্রয়োজন। দেশের উন্নয়নে নারীর অবদানকে আমাদের স্বীকার করতে হবে।

আর একটা ব্যাপার খুব লক্ষ্যনীয় খুব কম প্রতিষ্ঠানে নারীরা লিডিং পজিশনে আছে। মিড লেভেল পর্যন্ত মোটামুটি সন্তোষজনক সংখ্যক মেয়ে কাজ করছে। কিন্তু প্রতিবন্ধকতার শেষ নেই। তারপরও প্রতিবন্ধকতা দূর করে যাতে লিডিং পজিশনে আসতে পারে সে দিকে খেয়াল করতে হবে। এটা ঠিক জায়গা কেউ কাউকে দেয় না অর্জন করতে হয় । আমাদের মেয়েদের সে কথা মাথায় রেখেই এগুতে হবে আরো পরিকল্পনা নিয়ে। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে পুরুষ সহকর্মীদের শত্রু না করে বা না ভেরে তাদেরও আস্থায় রাখতে হবে। সবাইকে নিয়েই সমাজ, অতএব সবার গুরুত্ব সমান। কাউকে ছোট করে আসলে বড় হওয়া যায় না। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের নারীর প্রতি সুদৃষ্টি রয়েছে। তার কারণে আগে যেসব ক্ষেত্রে মেয়েদের কাজ করার সুযোগ ছিল না সে সব সেক্টর প্রধানমন্ত্রী উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। শেখ হাসিনা নারীর কার্যকর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এর মধ্যে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উদ্যোগ, মাতৃত্ব ও স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১, নারীর প্রতি সহিংসতা দমন, অকাল এবং বাল্যবিয়ের সমাপ্তি, রাজনীতি, প্রশাসন এবং নিরাপত্তায় প্রভৃতিতে নারীরা উল্লেখযোগ্য।

নারীর অগ্রগতির অন্যতম বড় বাঁধা শ্বশুর বাড়ি এটা নতুন করে আর বলার অপেক্ষা রাখে না । তারপরও বলছি স্বামী নামক ব্যক্তিটির দৃষ্টিভঙ্গির ওপর অনেকাংশেই নির্ভর করে একটি মেয়ের চলার পথ কতটা মসৃণ হবে। বেশির ভাগ মেয়েই এই সাপোর্ট পায় না। এই অসহযোগিতাকে সঙ্গি করেই এগুচ্ছেন মেয়েরা। পরিবারের শ্বশুর শ্বাশুড়ি, দেবর-ননদ তো আছেই। এছাড়া তাদের বন্ধু-বান্ধব, স্বামী নামক ব্যক্তিটির বন্ধু বান্ধবও কোন অংশে কম না। তাদের নেতিবাচক কথাবার্তা আজেবাজে ইঙ্গিতও সহ্য করে চলতে হয়। এটা এক ধরনের মানসিক পীড়া । আমি অনেককে দেখেছি এ কারণে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়তে। একটি মেয়ে সে একটা মানুষ, তাকে এত কিছুকে সামাল দিয়েই একটি ছেলের সাথে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হয়। একটি ছেলেকে এসবের ধার ধারতে হয় না।

আবারো বলবো নারীর অগ্রগতির জন্য সবচেয়ে আগে পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। প্রথমে উদার হতে হবে পরিবারকেই।

লেখক : বিশেষ প্রতিনিধি, জিটিভি