ঢাকা, রবিবার ২৪, নভেম্বর ২০২৪ ৬:৫৪:৫০ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
সাময়িক বন্ধের পর খুললো যমুনা ফিউচার পার্ক ডেঙ্গুতে আরও ১০ জনের প্রাণ গেল ডেঙ্গুতে এ বছরেই ৫১ শিশুর প্রাণহানি মাকে হত্যা করে থানায় হাজির ছেলে আমদানির সাড়ে তিনগুণ দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে আলু ঢাকায় আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল সাতক্ষীরায় সাফজয়ী তিন নারী ফুটবলারের গণসংবর্ধনা

আফগান আলো ‘ব্রেসনা মুজাজাই’

সালেহীন বাবু | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ০৫:২৯ পিএম, ৩ জুলাই ২০১৮ মঙ্গলবার

ব্রেসনা মুজাজাই ‘আফগানিস্তানের মালালা’ নামেই যার পরিচিতি। ছোটবেলায় পোলিওতে এক পা অচল। অন্য পা তালেবানের গুলিতে ক্ষতবিক্ষত। তবে এসবের কিছুই দমাতে পারেনি তাকে। ঠিকই এগিয়ে গেছেন নিজের লক্ষ্যে।

 

গত ১১ মে কাবুলে আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব আফগানিস্তান থেকে তিনি আইন বিষয়ে স্নাতকের সনদ লাভ করেন। ১৩৯ জন শিক্ষার্থী ওই দিন এই ডিগ্রির অধিকারী হলেও সবার মধ্যমণি ছিলেন ব্রেসনা।

 

ইউনিসেফের এক হিসাবে দেখা যায়, আফগানিস্তানে ৭ থেকে ১৭ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের অর্ধেক স্কুলে যায় না। এর মধ্যে ৬০ শতাংশই মেয়ে। এমনকি সরকার নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোতেও স্কুল শেষ করে মেয়েদের কলেজে যাওয়ার হার খুব কম। অনেক রক্ষণশীল পরিবারই বয়ঃসন্ধির পর মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার চেয়ে বিয়ে দেয়াকে উপযুক্ত মনে করে। তালেবান হামলার হুমকির মুখে সম্প্রতি দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় নানগাহার প্রদেশে মেয়েদের প্রায় ৮০টি স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়।


এমন অবস্থায় ব্রেসনা যেন উজ্জীবিত এক তারকার নাম। সামাজিক, শারীরিক, মানসিক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে তার সাফল্যের গল্প যেন ইতিহাস হয়ে দাড়িয়েছে। আর তাই সবার কাছে ব্রেসনা যেন এক আশার নাম। এখন তিনি অন্য নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য এক সাহসের ছবি। আর আফগানিস্তানের কাছে এক আশার প্রদীপ।


মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম ব্রেসনার। বাবা সালেহ মোহাম্মদ মালাংয়ের স্বপ্ন ছিল মেয়ে শিক্ষিত হবে। কষ্ট করে মেয়ের পড়ার খরচ জুগিয়েছেন এই সাবেক সাংসদ। ক্রমাগত যুদ্ধ, হামলা সব মিলিয়ে অস্থিরতার হাত থেকে বাঁচতে ব্রেসনার জন্মের আগেই তার পরিবার পাকিস্তানে চলে যায়। ব্রেসনা সেখানেই তার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন। ২০১১ সালে নিজ দেশ আফগানিস্তানে পরিবারের সঙ্গে ফিরে যান ব্রেসনা। ভর্তি হন আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে আইন বিষয়ে। পোলিওর কারণে অচল পা নিয়ে হাঁটতে খুব কষ্ট হয় ব্রেসনার। তাদের বাড়িটি ছয়তলায়। লিফট নেই। প্রতিদিন তিনি সিঁড়ি ভাঙেন। শরীর টেনে তুলতে তুলতে কখনো কখনো বমি হয়ে যায় তার। পিঠ, পা ও মাথায় তীব্র ব্যথা হয়।

 

২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট তার জীবনটাকে আরও দুঃসহ করে তোলে এক হামলা। ক্যাম্পাসের মসজিদে বিকেলে নামাজ পড়তে যাচ্ছিলেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তালেবানেরা হামলা চালায়। ব্রেসনা কাছের একটি ভবনে আশ্রয় নিতে আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু অন্যদের মতো ছুটতে পারছিলেন না। শেষে ব্রেসনা মসজিদে ঠাঁই নেন। তালেবানরা যদি মসজিদে ঢুকে পড়ে, সে চিন্তা করে সেখান থেকে অন্য আরেকটি ভবনে যাওয়ার চেষ্টা করেন ব্রেসনা। কিন্তু মাঝপথে পুলিশের পোশাকে থাকা এক জঙ্গি তার পায়ে গুলি করে। খাড়া অবস্থা থেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। এরপর ওই দুর্বৃত্ত আবারও গুলি করে ব্রেসনাকে। তীব্র ব্যথা নিয়ে মড়ার মতো অসার হয়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা পড়ে ছিলেন তিনি। যাতে কোনোভাবেই সন্ত্রাসীরা টের না পায় তিনি বেঁচে আছেন।

 

মধ্যরাতে পুলিশ যখন তাকে উদ্ধার করে তখন তার এক পা ভাঙা আর দুই হাঁটু গুলিবিদ্ধ। প্রায় এক বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারেননি ব্রেসনা। হাঁটতে পারতেন না। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করতে হতো। এভাবে মানসিকভাবে একবারেই ভেঙে পড়েছিলেন ব্রেসনা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ট্রাস্ট্রি ডালাসের এক চিকিৎসক, নাম জন আলেকজান্ডার। তিনি ব্রেসনার চিকিৎসাকাজে যুক্তরাষ্ট্রে আসা-যাওয়ার খরচ বহন করেন। ছয় মাস চিকিৎসা শেষে ব্রেসনা আফগানিস্তানে ফিরে আসেন। বিদেশে ব্রেসনার পাশে ছিলেন তার বাগদত্তা। তিনি চেয়েছিলেন ব্রেসনাকে নিয়ে কানাডায় থেকে যাবেন। কিন্তু ব্রেসনা সাফ জবাবে বলেছিলেন, এটা ঠিক হবে না।

 

ছোট্টবেলায় প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হওয়ার ঘটনার কথা মনে করতে গিয়ে ব্রেসনা বলেন, ‘আমার অচল পা নিয়ে অনেক ছেলেমেয়ে খ্যাপাত। আমার খুব মন খারাপ হতো। হতাশা কাজ করত। মনে হতো, আমি অন্যদের মতো নই। কিন্তু আজ আমি আত্মবিশ্বাসী। কারণ, আমি শিক্ষিত।’

 

ব্রেসনা আরও বলেন, ‘শিক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার। জন্মের সময়ই আমরা এই অধিকার নিয়ে আসি। এর জন্য আমাদের লড়াই করতে হবে। আমাদের নিজের প্রতি আস্থা রাখতে হবে। আর আমি মনে করি, নিজের প্রতি বিশ্বাস ও শিক্ষা হলো নিজের স্বপ্নকে সত্যি করার গুরুত্বপূর্ণ দুই উপাদান, বিশেষ করে প্রতিবন্ধীদের জন্য।’


ব্রেসনা মনে করেন, তার এই স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের মধ্য দিয়ে তার পথচলা সবে শুরু হলো। দেশের বাইরে আইন বা মানবাধিকার বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিতে চান তিনি। উঠতে চান সাফল্যের চূড়ায়।