ঢাকা, শনিবার ২৩, নভেম্বর ২০২৪ ১০:০৩:৫৬ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
ঢাকায় আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল সাতক্ষীরায় সাফজয়ী তিন নারী ফুটবলারের গণসংবর্ধনা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পঞ্চগড়ে, বাড়ছে শীতের তীব্রতা পেঁয়াজ-সবজি-মুরগির দাম কমলেও আলুর দাম বাড়তি রাজধানীতে মা-মেয়েকে এসিড নিক্ষেপ করে ছিনতাই

‘গুজব’, শেয়ারের আগে যাচাই করবেন যেভাবে

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৩২ পিএম, ১১ আগস্ট ২০২৪ রবিবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

যেকোনো তথ্য অন্যকে জানানোর আগে অন্তত একবার যাচাই করে নেওয়া উচিত। আপনার শেয়ার করা আবেগঘন একটি মিথ্যা সংবাদের কারণে একজন নির্দোষ মানুষের প্রাণ চলে যেতে পারে! বিস্তারিত জানাচ্ছেন এস এম তাহমিদ।

২০১৯ সালে একবার অনলাইনে গুজব ছড়িয়েছিল, ‘পদ্মা সেতুর জন্য মাথা লাগবে’। এই গুজবের কারণে ঢাকাসহ কয়েকটি এলাকায় এক দিনেই (২০ জুলাই) নারীসহ চারজনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।


এর মধ্যে একজন তাসলিমা বেগম রেনু, মেয়েকে স্কুলে ভর্তির জন্য খোঁজ নিতে বের হয়েছিলেন। জাতীয় সংকটের সময় গুজব ছড়ালে বিশৃঙ্খলতা বৃদ্ধি পায় আরো বেশি। এ সময়ে গুজব ছড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফরম এবং নানাবিধ চ্যাটিং সেবা। চটকদার বা ভয়াবহ কোনো সংবাদ দেখলে তাই সবার আগে উচিত অন্তত বিশ্বাসযোগ্য আরেকটি সূত্র থেকে সেটা যাচাই করে নেওয়া।

এতে করে শুধু যে নির্দোষ মানুষের প্রাণ বাঁচবে তা-ই নয়, সঠিক খবরটিও বেরিয়ে আসার সুযোগ তৈরি হবে।

যেভাবে গুজব তৈরি হয়
► গুজব ছড়ানোর জন্য হাতিয়ার করা হয় মানুষের আবেগকে। জনতার ভেতরের আবেগ এবং সেটাকে পুঁজি করে জনমত তৈরি করাই গুজব রটানোর মূল লক্ষ্য। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ উপায় ধর্মানুভূতিকে কাজে লাগানো।


কখনো ধর্মানুভূতিকে আঘাত করে, আবার কখনো ধর্মের প্রতি প্রাণভরা শ্রদ্ধাকে কাজে লাগিয়েও এসব গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে করে লাভ হয় দুটি—অনেক শেয়ার ও কমেন্টের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রিচ বাড়ে, আর সঙ্গে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জনমত তৈরি তো আছেই।
এরপর আছে প্যারানয়া বা হুমকিমূলক ষড়যন্ত্রের বিশ্বাস থেকে তৈরি উদ্বেগ বা ভয়ের আবেগ। ‘পদ্মা সেতুর জন্য মাথা লাগবে’ সেটারই উত্কৃষ্ট উদাহরণ। আমাদের দেশীয় কুসংস্কারকে কাজে লাগিয়ে সফলভাবে গুজবটি ছড়ানো হয়েছে, মৃত্যু হয় অন্তত ২০ জনের বেশি নারী-পুরুষের।


একই আবেগ কাজে লাগিয়ে মহামারি, নির্যাতন, হামলা, চুরি, অপহরণ এবং অপমৃত্যুর গুজবও তৈরি করা হয়। ফলে চারদিকে সৃষ্টি হয় আতঙ্ক।

► মানুষের লোভ পুঁজি করে ছড়ানো গুজবের কথা দ্রুত সবাই ভুলে যায়। ফলে একই ধরনের গুজব কিছুদিন পর পর রটতে থাকে। যেমন—এ বছরের মে মাসে ছড়িয়ে পড়ে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলের আরবিবি ইটভাটায় মাটি খুঁড়ে স্বর্ণ পাওয়া যাচ্ছে। হাজারো মানুষ রাতে বাতি জ্বালিয়ে স্বর্ণের খোঁজে খুঁড়তে থাকে ইটভাটার সব মাটি। এভাবেই একবার সোনালি রঙের এক টাকার কয়েন ও সীমান্তের পিলারের অস্বাভাবিক মূল্য নিয়েও ছড়িয়েছিল গুজব। এসব গুজবের হোতারা এভাবেই মানুষকে ভুয়া সমিতি ও নানাবিধ স্কিমে টাকা বিনিয়োগের জন্যও গুজব ছড়িয়ে থাকে। এসবের কল্যাণে কামিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা।

► লোভ থেকে তৈরি গুজবের আরেকটি ধরন আছে। অসৎ ব্যবসায়ীরা বাজার মূল্য নিয়ে তৈরি করে নানা গুজব। উৎপাদন সংকট, সরবরাহে ঘাটতির মতো সংবাদ ছড়িয়ে দিয়ে মুহূর্তেই তাঁরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় সচেষ্ট থাকেন। এর সঙ্গে আছে উচ্চ মূল্যে বিক্রির জন্য মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া। যেমন—এক লাখ টাকার ছাগলকে বিদেশি বলে ১৫ লাখে বিক্রির চেষ্টা করা, যা কি না ‘মতিউরের ছাগল কাণ্ডে’ দেখা গেছে।

► হিংসা, জিঘাংসাকে কাজে লাগিয়ে ছড়ানো হয় উদ্দেশ্যমূলকভাবে মানহানির জন্য তৈরি গুজব। তারকাদের বিষয়ে নানাবিধ গুজব রটিয়ে কাটতি বাড়ানোর কৌশলটি ইন্টারনেট যুগের আগেও ছিল। এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতি সাধারণ ব্যক্তির নামেও মূহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে একই ধরনের গুজব।

--রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তৈরি গুজব হতে পারে ওপরের প্রতিটি ধরনের। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মানহানিকর গুজব থেকে শুরু করে প্যারানয়া, ধর্মানুভূতি, এমনকি লোভকে কাজে লাগিয়েও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সহজেই হাসিল করা যায়। এমনই একটি গুজব, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন। এই গুজবটি যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বের প্রতিটি কোনায় পৌঁছে গিয়েছিল।

গুজব যেভাব ভাইরাল হয়
গুজবের মূল কাজ জনমনে আবেগ তৈরি করা। আবেগের বশবর্তী হয়ে বেশির ভাগ মানুষ যাচাই-বাছাই না করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ‘শেয়ার’ বাটনটি চেপে ধরে। কেউ কেউ মনে করে, গুজবের পোস্টটি শেয়ার দিয়ে অন্যদের গুজবটি সম্পর্কে সতর্ক করবে। আসলে হয় তার উল্টো, পোস্টটিই বেশির ভাগ মানুষ দেখবে, আবেগের কাছে ক্যাপশন পড়ার ধৈর্য হারিয়ে যায় দ্রুতই।

যেসব প্রযুক্তি গুজব তৈরিতে কাজে লাগে
সম্পাদিত বা এডিট করা ছবি ও ভিডিওর যুগ বলা যায় শেষ। এখন সময় এআইয়ের মাধ্যমে তৈরি করা ছবি ও ভিডিওর। বিখ্যাত ব্যক্তিদের অশালীন ছবি, পুরনো বা অন্য দেশের ঘটনার ছবি ও ভিডিও বিকৃত করে নতুন ভুয়া ক্যাপশন, পুরনো সংবাদ বা বানোয়াট পোস্টের স্ক্রিনশট—এমন হাজারো উদাহরণ রয়েছে ইন্টারনেটজুড়ে। কিছু গুজব আরো নিখুঁত, খবরে প্রচারিত রিপোর্টের বিশেষ অংশগুলো রেকর্ড করে সেটা প্রয়োজনমাফিক সাজিয়ে পুরো খবরের অর্থই বদলে দেওয়া হয়। এখন গুজব ছড়ানোর বড় হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে ফটো বা ভিডিও এডিট করার সফটওয়্যার, এআই জেনারেটর ব্যবহার করে ডিপফেক তৈরি, ব্রাউজারের ইন্সপেক্ট এলিমেন্ট ব্যবহার করে পোস্টের লেখা বদলে তারপর নেওয়া স্ক্রিনশট।

বদলেছে প্ল্যাটফরর্ম
ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে গুজব ছড়ানো এখন পুরনো পন্থা। গুজব ছড়ানোর জন্য হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রামের মতো চ্যাটিং অ্যাপগুলোতে তৈরি করা গ্রুপগুলো এখন বেশি জনপ্রিয়। পরিচয় গোপন রেখে সহজেই আইডি তৈরি করার সুবিধা থাকায় এসব প্ল্যাটফরমের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। গ্রুপ চ্যাট কিছুটা গোপন হওয়ায় মানুষ সেসবে থাকা পোস্টে বিশ্বাসও রাখে বেশি, যেগুলো নিজেকে খুঁজে বের করতে হয়। কিন্তু এই বাড়তি কষ্ট যেহেতু করতে হয় না, তাই মনের সন্দেহপ্রবণতা কমিয়ে দিতে সাহায্য করে গ্রুপ চ্যাট। ‘গোপন সংবাদ পেয়ে গেছি’—এই আবেগটা তৈরি করার জন্য এসব প্ল্যাটফরম চমৎকার।

ইনস্টাগ্রাম বা টিকটকের মতো প্ল্যাটফরমগুলোকে কিছুটা বাড়তি বিশ্বাসের চোখে দেখে থাকে কিশোর-তরুণরা। একই খবর পত্রিকার পাতায় না দেখে ইনস্টাগ্রাম স্টোরি বা টিভি চ্যানেলের বদলে টিকটকে দেখলে সেটাকে দর্শক দ্রুত বিশ্বাস করে। এ বিষয়ে এর মধ্যেই অনেক গবেষণাও হয়েছে।

স্বল্পশিক্ষিত এবং বয়স্কদের মধ্যে গুজব ছড়ানোর জন্য আজ সবচেয়ে কার্যকর প্ল্যাটফরম ইউটিউব এবং ফেসবুক রিলস। গুজব রচয়িতারা চটকদার নামে ‘সংবাদ’ চ্যানেল তৈরি করে। যেমন‘অমুক টিভি’ বা ‘তমুক নিউজ ২৪’। এসব চ্যানেলের হোতারা পেশাদার সেট ডিজাইন, সংবাদ পাঠক ও রিপোর্টারদের মতো পোশাক এবং যন্ত্রপাতি নিয়ে রিপোর্টের আদলে আদতে গুজব প্রচার করে, যা সহজেই বিশ্বাস করে মানুষ।

গুজব যাচাই করা
ছবিভিত্তিক গুজব সহজেই যাচাই করা যায়। ছবিটি গুগল ইমেজ সার্চে বসিয়ে বের করা যায় একই ছবি অন্য কোথাও ব্যবহৃত হয়েছে কি না। টিন আই (tineye.com), ফটো ফরেনজিকস (fotoforensics.com) এর মতো ওয়েবসাইটগুলোতে ছবিটি আপলোড করে জানা যায় সেটা সম্পাদনা বা এডিট করা কি না। ছবিতে কোনো মেটা, ডাটা, যেমন—ক্যামেরার মডেল, কবে তোলা, জিপিএস ডাটা আছে কি না—সেটাও বের করা সম্ভব। এআই জেনারেটেড ছবি বের করার সবচেয়ে সহজ উপায় ছবিতে যেসব ব্যক্তি আছে তাদের হাতে কয়টি আঙুল বা অন্য কোনো অসংগতি আছে কি না, সেটা বের করা। সাইট ইঞ্জিন (sightengine.com)-এর মতো কিছু সাইটে ছবিটি আপলোড করেও এসব বের করা সম্ভব। লিখিত গুজবের ক্ষেত্রে গুগল বা ফেসবুকে লেখা বা তার বিষয়বস্তু সার্চ করেই সেটির সূত্র যাচাই করা সম্ভব। ভিডিওর ক্ষেত্রে বিষয়টি কিছুটা কঠিন। তবু ডিপওয়্যার (deepware.ai) দিয়ে যাচাই করা যায় এটি এআই দিয়ে তৈরি করা ভিডিও কি না। অতিরিক্ত ঘোলা ভিডিও, ভিডিওর মানুষগুলোর অসংগতিপূর্ণ চালচলন, ভিডিওর গতি বদলেও দেখা যেতে পারে।

এ ছাড়া যেকোনো জিনিস শেয়ার করার আগে অন্তত একবার ফ্যাক্ট চেকার ওয়েবসাইট যেমন—যাচাই (jachai.org), এএফপি-এর ফ্যাক্টচেক ওয়েবসাইট (factcheck.afp.com) বা স্নোপস (snopes.com) ঘুরে আসা উচিত। এ ছাড়া সত্য ঘটনাটি জানার জন্য সাধারণ একটি গুগল সার্চই অনেক সময় যথেষ্ট।