ঢাকা, শুক্রবার ২৭, ডিসেম্বর ২০২৪ ১৩:০১:১৩ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি একসঙ্গে চলবে: ড. ইউনূস সবজিতে স্বস্তি, চাল ও মাছের দাম ঊর্ধ্বমুখী টেকনাফে দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজের ৭২ যাত্রীকে উদ্ধার কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের নেত্রী কাবেরী আটক ‘ঐক্য, সংস্কার, নির্বাচন’ নিয়ে জাতীয় সংলাপ শুরু আজ গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৫ সাংবাদিক নিহত লামায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার নিন্দা

ঘরে-বাইরে নারী-শিশু নির্যাতন বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:৫২ পিএম, ২৭ নভেম্বর ২০১৯ বুধবার

‘ধর্ষণ ও সকল যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা’  শীর্ষক প্রতীকী অনশন কর্মসূচি

‘ধর্ষণ ও সকল যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা’ শীর্ষক প্রতীকী অনশন কর্মসূচি

সম্প্রতি আশঙ্কাজনক হারে নারী ও শিশুদের প্রতি নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে চলেছে। ঘরে-বাইরে ধর্ষণ, হত্যা ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তারা। অনেক ক্ষেত্রে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলাও হচ্ছে না। আবার মামলা হলেও তার সুষ্ঠু বিচার হচ্ছে না।

‘ধর্ষণ ও সকল যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা’  শীর্ষক প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে বক্তারা এসব কথা বলেন।

নারী ও শিশু ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বিক্ষুব্ধ, হতাশ এবং উদ্বিঘ্ন বিভিন্ন মানবাধিকার, নারী অধিকার, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, উন্নয়ন সংগঠন ও সচেতন মানুষ এক জোট হয়ে সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে প্রতীকী অনশন কর্মসূচির আয়োজন করে।

দিনব্যাপী আয়োজিত এ অনশনে আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের চেয়ারপার্সন সুলতানা কামাল বলেন, গত দশ মাসে প্রায় দেড় হাজারের মত নারী ও শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি, যা বিচার চাওয়ার মানসিকতাকে দিন দিন লোপ করে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা আজ বিক্ষুব্ধ, ক্ষুব্ধ, শোকাহত, মর্মাহত হৃদয় নিয়ে প্রতীকী অনশন করছি প্রতিকার, প্রতিরোধ, প্রতিবাদ করতে। নারীর হয়ত ক্ষমতায়ন হয়েছে কিন্তু নারীর সমতায়ন হয়েছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়। প্রতিনিয়ত ক্ষমতার অপব্যবহার ঘটছে, যাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে নারী ও শিশু। অথচ নির্যাতকরা পার পেয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আজ সমাজে নারীকে মুখ লুকিয়ে চলতে হচ্ছে। আমরা এক এক করে এগারো হবো, হাজারো হয়ে নারী নির্যাতন মুক্ত সমাজ গড়তে পারি। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ করতে পারি। প্রতিটি দিন হোক নারী নির্যাতন মুক্ত।

একশন এ্যাইড-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, নাগরিক হিসেবে বিচার পাওয়া আমাদের অধিকার। কিন্তু আমরা বিচার পাচ্ছি না, বিচারের জন্য আকুল আবেদনও আজ কাজে দিচ্ছে না। যা নারীর প্রতি সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেয়ার সমতুল্য। আমরা আর সহ্য করবো না, সংঘবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করবোই এবং কোনভাবেই এই অন্যায় মেনে নিব না।

নারী পক্ষ প্রতিষ্ঠাতা শিরীন হক বলেন, আসুন আমরা অঙ্গিকার করি নারী ও শিশুর উপর যে কোন ধরনের নির্যাতন ও সহিংসতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ও সোচ্চার হবো। এই অপরাধের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবো। ভীত হবো না, পিছু হটবো না। নির্যাতনকারী ও ধর্ষণকারীকে সামাজিকভাবে বয়কট করবো।

তিনি বলেন, আসুন সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধ হই, জোরালো অবস্থান নেই এবং আওয়াজ তুলি। যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ নারীর জন্য লজ্জার বিষয় নয় বরং এ লজ্জা নির্যাতনকারী ও ধর্ষণকারীর।

আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের নির্বাহী সমন্বয়কারী জিনাত আরা হক দ্রুততম সময়ে প্রতিটি নারী ও শিশু নির্যাতনের ন্যায্য বিচার দাবি করেন এবং বিশেষ বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা পরিচালনার প্রতি জোর গুরুত্ব দেন।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, নারীপক্ষ, নেটস বাংলাদেশ, অ্যাকশন এইড, ডেমোক্রেসি ওয়াচ, ব্রতী, বিএনপিএস, মুক্তি, ডাসকো, পল্লীশ্রী, নারীমৈত্রী, এএসএফ, নাগরিক উদ্যোগ,পাবনা সিরাজগঞ্জ রাজশাহী দিনাজপুরের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ব্যক্তিবর্গ, আমরাই পারি জোটের মোহাম্মদপুর এলাকার চেঞ্জমেকারসহ আরো অনেকে অনশনে সংহতি ও সহমত প্রকাশ করেন। তারা সকল নারী ও শিশু ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতা ও পারিবারিক নির্যাতন বন্ধে সরকারকে আরো কঠোর হওয়ার প্রতি আহবান জানান।

এ অনশনে একাত্মতা প্রকাশ করতে শহীদ মিনারে উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালির সুবর্ণচরে নির্যাতনের শিকার পারুল, সিরাজগঞ্জের রূপা গণপরিবহনে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার রূপার ভাই, ঢাকার শ্বশুর বাড়িতে নিহত পিংকির পরিবার, আশুলিয়ার শ্বশুর বাড়িতে নিহত সাতক্ষীরার মুক্তির ভাই, দিনাজপুরে নিহত আঁখি মনির বাবা।

অনশন শেষে উপস্থিত সকলের স্বাক্ষরসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর একটি স্বারক লিপি প্রদান করা হয়। স্বারকলিপিতে নারী ও শিশু ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতা বন্ধকরা, দ্রুত ও ন্যায্য বিচারের জন্য নয় দফা দাবি করা হয়।

দাবিগুলো হলো, দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালকে বিশেষ ট্রাইবুনালে রূপান্তর করতে হবে। উচ্চ আদালতে চূড়ান্ত বিচার নিশ্চিত করতে বিচারের দীর্ঘ সূত্রিতা কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নারী নির্যাতনের মামলায় সাক্ষী প্রদান বিধি যুগোপযোগী করতে হবে। পারিবারিক নির্যাতন (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০-এর উপর সরকারের প্রচারণা অব্যাহত রাখতে হবে। বিচার চলাকালেি নর্যাতনের শিকার নারী ও তার পরিবারের জন্য নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। হাইকোর্টের দেয়া ২০০৯ সালের নির্দেশনা অনুযায়ী যৌন হয়রানি প্রতিরোধ নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কার্যকর ব্যবস্থা করতে হবে। নারী ও শিশুর উপর ধর্ষণ ও সকল প্রকার যৌন সহিংসতা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে জিরোটলারেন্স নীতি ঘোষণা করতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের মতো নারী ও শিশুর উপর ধর্ষণ ও নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান ঘোষণা ও বাস্তবায়ন করতে হবে এবং সকল প্রকার বৈষম্যমূলক আইন ও নারী নির্যাতন বিরোধী আইনকে সংশোধন করে সময়োপযোগী করতে হবে।