ঘরের বাইরে নারী কেন এত প্রশ্নের মুখে!
বিবিসি বাংলা অনলাইন | উইমেননিউজ২৪.কমআপডেট: ১২:০২ পিএম, ৩ নভেম্বর ২০১৮ শনিবার
শামিমা শামিম প্রতিদিন কর্মস্থলে যান নিজের স্কুটিতে করে। নিজেই চালান। আজ আমি তার সঙ্গী হলাম।লক্ষ্য করলাম, রাজধানী শহর ঢাকার রাস্তায় একটা মেয়ে স্কুটি চালিয়ে যাচ্ছে এটা যেন কারো নজর এড়াচ্ছে না। দেখলাম, ট্রাফিক সিগনাল বা জ্যামে থাকার সময় আশেপাশের আরোহীদের বাঁকা চাহনি। কয়েকজন রিক্সাচালকের ব্যাঙ্গাত্মক হাসি।
শামিমা শামিম বলেন, "এটা আমার প্রতিদিনকার অভিজ্ঞতা। যখন রাস্তায় বের হই তখন তারা স্কুটির চেয়ে আমার শরীরের দিকে বেশি চেয়ে থাকে। সব থেকে ভয়ংকর হল স্কুটি চালানোর সময় পিছন থেকে অনেক ছেলে আছে যারা মোটরবাইক নিয়ে টার্গেট করে, ধাক্কা দেওয়ার জন্য। আমার সাথে এমন ঘটনা অনেকবার হয়েছে।"
তিনি বলেন, "একবার তেজগাঁ লিংক রোডে ২/৩টা বাইক এবং প্রতিটাকে তিনজন করে ছেলে। আমি দেখলাম আমার আর কোন জায়গা নেই। তখন আমি থেমে গেলাম। যদি আমি সচেতন না হয়ে একই গতিতে চালাতাম তাহলে ঐদিন নিশ্চিত আমার বড় একটা অ্যাকসিডেন্ট হত।"
ঢাকায় রাস্তায় এখন অনেক মেয়েকেই স্কুটি চালাতে দেখা যায়, এমনকি মেয়েদের দ্বারা চালিত অ্যাপভিত্তিক রাইডও রয়েছে। শামিমা শামিম স্কুটি চালান আরো আগে থেকে। তখন হাতে গোনা দুই একজন নারীকে দেখা যেত চালাতে।
তখনকার সাথে এখনকার কি কোন পরিবর্তন হয়েছে?
শামিমা শামিম বলেন "কোন পরিবর্তন হয় নি। এখন তো আমি চেষ্টা করি ১০টা মধ্যে বাসায় ফিরতে। কারণ বেশি রাত হলে রাস্তায় কী ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে কে জানে। যে বাসায় থাকি সেখানেও অলিখিত একটা সান্ধ্য আইন জারি করা। ১০টার মধ্যেই বাসায় ফিরতে হবে। যেখানে আমার ছেলে বন্ধুরা রাত ১২টা পর্যন্ত শুধু মাত্র আড্ডা দেয়ার জন্য বাইরে থাকে সেখানে আমাকে মাথায় রাখতে হয় সব কাজ ফেলে ১০ টার মধ্যে বাসায় ফেরার তাড়া"।
আর এখানেই প্রশ্ন উঠে `কিন্তু কেন`। পুরুষরা যদি বাইক চালিয়ে কর্মস্থলে যেতে পারেন বা কে কত পারদর্শী তার প্রতিযোগিতা হতে পারে তাহলে নারীরা নয় কেন?
এত গেল দৈনন্দিন জীবনের রাস্তায় চলার ক্ষেত্রে ছোট একটা উদাহরণ। আরো অনেক গল্প আছে যেগুলো শুনলে অবুঝের মতই আপনার মনে প্রশ্ন উঠতে পারে কিন্তু কেন।
বীনা রহমান। এই মেয়েটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্সের কাজ করেন। কাজের প্রয়োজনে তাকে সপ্তাহে কয়েকদিন নাইট শিফট করতে হয়। কিন্তু প্রশ্নের মুখে পরতে হয় তাকেও।
তিনি বলেন "রাতে বের হয়ে যাই সকালে ফিরি। আমার আশে-পাশের ফ্ল্যাট থেকে আমার মা-কে জিজ্ঞেস করেছে আপনার মেয়ে এত রাতে কোথায় যায়? আসলেই আমি এই কাজ করি কিনা সেটা নিয়েও তাদের সন্দেহ।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ ইন্সটিটিউটের শিক্ষক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক তৌহিদুল হকের সাথে কথা বলতে। জানার চেষ্টা করছিলাম ঠিক কি কারণে সমাজে যে কাজ পুরুষ করতে পারে, নারী করতে গেলে তাকে কেন শুনতে হয় বিচিত্র, অশালীন কথা।
তৌহিদুল হক বলেন "নারীদের যে আচরণগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে সেটা একটা সাবলীল আচরণ। কিন্তু পুরুষ সদস্যরা সেটাকে স্বাভাবিকভাবে দেখছে না। এর কারণ হল পুরুষ সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে দেখছে মেয়েদের আচরণগুলো এই এই বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করে হবে। মেয়েদের একটা নির্দিষ্ট আচরণিক গণ্ডির মধ্যে দেখতে পছন্দ করে। এর বাইরে যদি কোন মেয়ে কোন আচরণ করে তখন সেটা তারা মেনে নিতে পারেনা। এমনকি আমাদের দেশে যারা নাগরিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত তারাও এটা মেনে নিতে পারে না। কিন্তু মেয়েরা সেই সনাতনী পুরনো ধাঁচে চলতে থাকবে সেটা হতে পারে না।"
যে প্রসঙ্গে কথা হচ্ছে এই প্রসঙ্গটি নতুন নয়। কিন্তু প্রতিবার নতুন নতুন পরিস্থিতির মুখে মেয়েদের পড়তে হয়, যেটাকে পরিস্থিতি না বলে বলা উচিত হয়রানি, যৌনহয়রানি, শারীরিক, মানসিক হেনস্থার শিকার। সম্প্রতি একটা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে যেখানে ৬ মিনিটের বেশি সময় ধরে দেখা গেছে, কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে সিএনজির মধ্যে একজন নারীর নানা ধরণের অশালীন প্রশ্ন করতে। মেয়েটি মধ্যরাতে কোথায় যাচ্ছে....এ ধরণের নানা প্রশ্ন।
আমি ঢাকায় নানা পেশার কয়েকজন নারী এবং পুরুষের সাথে কথা বলেছিলাম পুরুষের জন্য যেটা সাবলীল সেটা মেয়েদের জন্য স্বাভাবিক আচরণ নয় কেন?
একজন পুরুষ বলছিলেন "যেমন ধরেন আমি অনায়াসে আমার বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে সাজেক চলে যাচ্ছি বেড়াতে। কিন্তু আমার বোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, সে যদি যেতে চায় তাহলে আমি যেতে দিচ্ছি না।"
প্রশ্ন-কেন দিচ্ছেন না?
উত্তর: "এই সুযোগটা ছোটবেলা থেকে আমাদের পরিবার প্রথম নষ্ট করে দেয়। আমি দেখে এসেছি মেয়েরা সন্ধ্যার পর বাইরে থাকতে পারবে না। আমি খেলা করে রাত নয়টায় আসলেও ক্ষতি নেই"।
আরেকজন পুরুষ বলছিলেন "আমরা একটা সাইকোলজিক্যাল জায়গায় আটকে আছি। আমার বোন বা বাড়ির মেয়েরা যদি রাত ১১টায় বাসায় ফেরে তাহলে আমি মেনে নিতে পারবো না। যদিও আমি বুঝতে পারছি আমার মত তারো মবিলিটি দরকার"।
কেন মেনে নিতে পারছেন না?
উত্তর: "এক্ষেত্রে আমার মাথায় কাজ করে তার সিকিউরিটির কথা। আমাদের দেশে সেই নিরাপত্তাটা নিশ্চিত করা হয় নি"।
তবে কয়েকজন নারী আমাকে বলছিলেন তারা যে শুধু পুরুষদের কাছ থেকেই এই ধরণের প্রতিক্রিয়া পেয়ে থাকেন তাই নয়। অনেক নারীদের কাছ থেকে শুনতে হয় একই রকম অপমানসূচক মন্তব্য।
একটি মেয়ে আমাকে বলছিলেন "পরিবারের মধ্যেই বয়োজেষ্ঠা যেসব মহিলা থাকেন তারা এগুলো করেন। এমনকি আত্মীয় স্বজন যারা আছেন তারা বলেন মেয়ে মানুষের এই কাজ করার কি দরকার"।
আরেকজন মেয়ে বলছিলেন "আমি আমার কথা বলতে চাই, আমি যদি কোথাও যেতে চাই তাহলে আমার মা বা বাড়ির মহিলারা বলে সাথে কাওকে নিতে। আমি একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী আমাকে কেন অন্যের সাহায্য নিতে হবে? যখন আমার ভাই বাড়ির বাইরে যায় তখন তো সেটা বলা হয় না"।
একজন নারী সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমাকে বলেন অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের জন্য তাকে বিভিন্ন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। দেখা যায় অফিস সময় শেষ হয়ে গেলেও সেখানে তাকে কাজের খাতিরেই থাকতে হয় কিন্তু যখন সে বের হয়ে যায় তখন সে প্রতিষ্ঠানের সহকারী থেকে শুরু করে অন্যান্য কর্মকর্তাদের চোখেও অশালীন চাহনি বা মাঝে মাঝে তির্যক/অশালীন মন্তব্য করতে শোনে। তার প্রশ্ন এই একই কাজ তার পুরুষ সহকর্মীরাও করছে সংবাদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে কিন্তু তাদের কেন এই অশালীন চাহনি বা মন্তব্য শুনতে হয় না?
ঝালকাঠির একটি স্কুলের শিক্ষিকা শিরিন শারমীন। তিনি বলছিলেন রাজধানী ঢাকা শহরের মত ঢাকার বাইরেও একই রকম পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয় মেয়েদের। তিনি বলছিলেন এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে হলে প্রথমত দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে।
শারমীন বলেন "আমি একজন শিক্ষক হিসেবে বলতে চাই এর পরিবর্তন করতে হলে গোড়া থেকে অর্থাৎ পরিবার থেকে কাজ শুরু করতে হবে। সেখানে মেয়ে অথবা ছেলেদের আলাদা করে দেখার কোন সুযোগ যাতে তৈরি না হয় সে ব্যাপারটা যথেষ্ট শক্ত ভাবে শিখিয়ে দিতে হবে। এরপর স্কুল। কারণ স্কুলে পঞ্চম, ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়া ছেলেদের মধ্যে আমি দেখেছি তার মেয়ে সহপাঠীদের অবজ্ঞা করতে। স্কুল পর্যায়ে প্রথম থেকে পদক্ষেপ নিতে হবে"।
তবে এসব ভুক্তভোগি নারী এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মেয়েদের বিভিন্ন রকম অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখে যাতে পরতে না হয় সেজন্য দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার উপর যেমন জোর দিচ্ছেন তেমনি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার কথা বলছেন। না হলে এই অবস্থা পরিবর্তন হতে আরো অনেক বছর অপেক্ষা করতে হবে।
- সাময়িক বন্ধের পর খুললো যমুনা ফিউচার পার্ক
- ডেঙ্গুতে আরও ১০ জনের প্রাণ গেল
- ৫৭ বয়সেও মাধুরী দীক্ষিত যেন পঁচিশের তরুণী!
- জেনে নিন ভাপা পিঠার সহজ রেসিপি
- প্রথমবার দুঃসাহসিক অভিযানে ইহুদি মেয়েরা
- রোববার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
- ডেঙ্গুতে এ বছরেই ৫১ শিশুর প্রাণহানি
- রাজাপুরের বধ্যভূমি আজো অরক্ষিত
- বিশ্বের সবচেয়ে খাটো দম্পতির গিনেস রেকর্ড
- সাগরে আরেকটি লঘুচাপ, যা জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর
- সম্পদের হিসাব জমা না দিলে শাস্তি হতে পারে সরকারি চাকরিজীবীদের
- ‘নারীরা লড়াই করেছেন সমানতালে, এখন কেন আড়ালে’
- ঢাকার বাতাস আজও ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’
- সড়ক দুর্ঘটনায় পরীমণির প্রথম স্বামী নিহত
- এক ইলিশের দাম ৬ হাজার টাকা!
- জেনে নিন বিমানবন্দর নেই যে সব দেশে
- ঘুরে আসুন পানামসহ না.গঞ্জের পাঁচটি পর্যটন স্পট
- আজ পহেলা অগ্রহায়ণ, হেমন্তকাল শুরু
- ড.ইউনুসকে তসলিমা নাসরিনের খোলা চিঠি
- বিশ্ব হার্ট দিবস আজ
- হেমন্তে ছাতিম ফুল সুগন্ধ ছড়িয়ে যায়
- শান্তিতে নোবেল পেল জাপানের মানবাধিকার সংস্থা নিহন হিদানকিও
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিন আজ
- স্নাতক পাসে চাকরি দেবে আড়ং
- পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপে ঘুরে দাঁড়াল ভারতের মেয়েরা
- ‘রিমান্ড’-এ মম
- রাজু ভাস্কর্যের নারী প্রতিকৃতিতে হিজাব, যা জানা গেলে
- সৈয়দ শামসুল হকের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
- নেপালে ভয়াবহ বন্যা-ভূমিধসে নিহত বেড়ে ১১২
- পঞ্চগড় থেকে দেখে আসুন কাঞ্চনজঙ্ঘা