ঢাকা, শুক্রবার ১৮, অক্টোবর ২০২৪ ১৮:২৬:৩২ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
বাংলা একাডেমির সভাপতি পদ ছাড়লেন সেলিনা হোসেন বাংলাদেশে চরম দারিদ্র্যে ৪ কোটি ১৭ লাখ মানুষ: ইউএনডিপি শেখ পরিবারের যাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কমনওয়েলথ সম্মেলনে যাচ্ছেন না ড. ইউনূস ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’, আঘাত হানতে পারে যেখানে ডিমের পর এবার মুরগির বাজারে অস্বস্তি একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী সুজেয় শ্যাম আর নেই

ঘুরে আসুন পানামসহ না.গঞ্জের পাঁচটি পর্যটন স্পট

আফসা আহমেদ আলমী | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৪:১৮ পিএম, ১৮ অক্টোবর ২০২৪ শুক্রবার

পানাম সিটি; রাজধানীর পাশেই এক প্রাচীন নগর।

পানাম সিটি; রাজধানীর পাশেই এক প্রাচীন নগর।

পানাম সিটি; রাজধানীর পাশেই এক প্রাচীন নগর। দিনে দিনে ঘুরে আসতে পারেন পরিবার প্রিয়জনদের নিয়ে এই পানাম সিটি। ঢাকা থেকে দেড় ঘন্টার দূরত্বে বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট জেলা নারায়ণগঞ্জে রয়েছে পাঁচটি দর্শনীয় স্থান। যা চাইলে একদিনেই ঘুরে আসতে পারেন।

তবে চলুন জানা যাক সেই দর্শনীয় স্থানগুলোর সম্পর্কে।

পানাম সিটি: পানাম সিটি পৃথিবীর ১০০টি ধ্বংস প্রায় ঐতিহাসিক শহরের মধ্যে একটি যা বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত। মধ্যযুগের সোনারগাঁ বাংলার রাজধানী হওয়ার পর থেকে পানাম নগর ব্যাপক উৎকর্ষ লাভ করে। ১৫ শতকে ঈসা খাঁ বাংলার প্রথম রাজধানী স্থাপন করেছিলেন সোনারগাঁয়। বড় নগর, খাস নগর এবং পানাম নগর- প্রাচীন সোনারগাঁর এই তিন নগরের মধ্যে পানাম ছিলো সবচেয়ে আকর্ষণীয়। 

মূলত পানাম ছিলো বাংলার সে সময়কার ধনী ব্যবসায়ীদের বসতক্ষেত্র। এসব ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ছিলো ঢাকা-কলকাতা জুড়ে। পরে তারাই গড়ে তোলেন এই নগর। এই নগরীতেই গড়ে উঠেছিলো মসলিমের জমজমাট ব্যবসা। 

প্রাচীন সেই নগরীর তেমন কিছু আজ আর অবশিষ্ট নেই। এখান আছে শুধু পুরনো কিছু ঘরবাড়ি। ওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট ফান্ড (World monument fund) ২০০৬ সালে পৃথিবীর ধ্বংস প্রায় ১০০ টি ঐতিহাসিক স্থানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে এই পানাম সিটিকে। এই নগরীতে একটি সড়কের দুই পাশজুড়ে প্রায় ৫২টি পুরাতন স্থাপনা রয়েছে।

টিকিট: প্রবেশ পথে রয়েছে টিকিট কাউন্টার যা জনপ্রতি ১৫ টাকা।

কিভাবে যাবেন: প্রথমে গুলিস্তান থেকে বাসে (দোয়েল, বোরাক, স্বাধীন, বি আর টিসি এসি সার্ভিস) করে মোগরা পাড়া নামতে হবে। ভাড়া নিবে জনপ্রতি ৬০ টাকা। মগরা পাড়া থেকে অটো করে চলে আসবেন পানাম সিটি জন প্রতি ১০-১৫ টাকা নিবে। ঢাকা থেকে মগড়াপাড়া আসতে সময় লাগবে দেড় ঘন্টা এবং মোগড়াপাড়া থেকে পানাম সিটি আসতে সময় লাগবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট।

কবে যাবেন: মঙ্গলবার থেকে শনিবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা খোলা থাকে। সোমবার খোলা থাকে দুপুর ২ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।

শীতকালে খোলা থাকে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত আর সোমবার দুপুর ১:৩০ থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।

রবিবার পানাম সিটি বন্ধ থাকে।

লোক শিল্প জাদুঘর: পানাম সিটির একদম পাশেই রয়েছে লোকশিল্প জাদুঘর। গ্রাম বাংলার লোকসংস্কৃতিকে বিকশিত করার উদ্যোগে ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন সোনারগাঁও-এর ঐতিহাসিক পানাম নগরীর একটি পুরাতন বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন। পরে ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে ১১৫ বিঘা আয়তনের কমপ্লেক্সে খোলা আকাশের নিচে গ্রামীণ কেন্দ্রিক বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের শৈল্পিক কর্মকান্ডের পরিচয় তুলে ধরতে শিল্পী জয়নুল আবেদীন জাদুঘর উন্মুক্ত পরিবেশে গড়ে তোলার প্রয়াস নেন।

টিকিট: জন প্রতি ৫০ টাকা।

বাংলার তাজমহল: ভারতের তাজমহলের অনুকরণে তৈরি করা হয়েছে এই বাংলার তাজমহল। যা নির্মাণ করেছেন নারায়ণগঞ্জের শিল্পপতি চলচ্চিত্রকার আহসানুল্লাহ মনি। এটি তৈরি করতে পাঁচ বছর সময় লেগেছে যা ১৮ বিঘা জমির উপর অবস্থিত। 

তাজমহল দেখা শেষে পাঁচ মিনিটের দূরত্বেই রয়েছে রাজমনি পিরামিড। এই জায়গাটিতে গেলে বিভিন্ন ধরনের রংবেরঙের ফুল দিয়ে সাজানো বাগান নজড়ে পরবে। ফুলে ভরা বাগান দেখে আপনার মন এমনিতেই ভালো করে দেবে। এখানে রয়েছে পুরনো দিনের বিভিন্ন শুটিং সরঞ্জাম। রয়েছে একটি বড় অ্যাকোরিয়াম। এতে বিভিন্ন রংয়ের মাছ আছে। বাচ্চাদের দেখে খুব ভালো লাগবে।

এরপর চোখে পড়বে বাংলার পিরামিড। এর নিচে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মমি। এই এলাকাটি খুব বেশি ফটোজেনিক। যারা ছবি তুলতে পছন্দ করেন তাদের অবশ্যই যাওয়া উচিত।

কিভাবে যাবেন: যদি আপনি ঢাকা থেকে তাজমহল দেখতে আসতে চান তবে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে গুলিস্তান। গুলিস্তান থেকে বরপা বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত জনপ্রতি ভাড়া নেবে ৩৫ টাকা। সেখান থেকে আপনি অটো ঠিক করে চলে যেতে পারেন তাজমহল দেখতে। ভাড়া ১৫ টাকা জনপ্রতি। যেহেতু এটা টুরিস্ট এলাকা তাই যে কোন কিছু ঠিক করার আগে দামাদামি করে নেওয়া ভালো। বরপা থেকে তাজমহল যেতে সময় লাগবে ১৫ মিনিট।

আরও দর্শনীয় স্থান: তাজমহলের পাশাপাশি আপনারা সেখানে যা দেখতে পাবেন রাজমনি পিরামিড, বেহুলা লক্ষিন্দরের বাসরঘর, রাজমনি ফিল্ম সিটি এবং আরও অনেক কিছু।

টিকিট: তাজমহলের প্রবেশ ফি ১৫০ টাকা জনপ্রতি।

তাজমহলে ঢুকতেই চোখে পড়বে একটি চার্ট যেখানে লেখা রয়েছে এই স্থানে আপনি কি কি দেখতে পাবেন।

কখন যাবেন: তাজমহল খোলা থাকে সকাল ৯টা-৫টা পর্যন্ত।

মায়াদ্বীপ: অটো নিয়ে পানাম সিটি থেকে মায়ার দ্বীপ জন প্রতি ভাড়া ২০ টাকা। এই দ্বীপে যাওয়ার জন্য অটো করে যেতে হবে বৈদ্যের বাজার। সেখান থেকে নৌকায় করে যাওয়া যাবে মায়াদ্বীপ। নৌকায় করে মায়া দ্বীপ ও নলচর ঘুরতে আপনাকে ৭০০ টাকা গুনতে হবে। যেতে হবে মেঘনা নদীর উপর দিয়ে, প্রথমে নলচর তারপর মায়াদ্বীপ। মেঘনা নদীর ঠিক মাঝখানে গড়ে ওঠা মায়াদীপ যা বেশি বড় না।  এই দ্বীপে গেলে আপনি দেখতে পাবেন চারপাশে নীরব নদী বয়ে চলছে এবং মাঝখানের ছোট্ট একটি সবুজে ঘেরা চর।

সুলতান গিয়াস উদ্দিন আজম শাহের সমাধি: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের চলিলাপুর গ্রামে সুলতান গিয়াস উদ্দিন আজম শাহ-র সমাধি রয়েছে যা অনেকেরই অজানা।

গিয়াস উদ্দিন আজম শাহ ছিলেন প্রথম ইলিয়াস শাহী রাজ বংশের তৃতীয় সুলতান। তিনি তৎকালীন বাংলার সুপরিচিত সুলতানদের অন্যতম ছিলেন। তার প্রকৃত নাম আজম শাহ। সিংহাসনে বসার পর তিনি গিয়াস উদ্দিন আজম শাহ নামে পরিচিত হন। তিনি একজন ন্যায়পরায়ণ সুলতান ছিলেন। একই সাথে ছিলেন কবি ও সাহিত্যে পৃষ্ঠপোষক। 

তার আমলে বাংলা ভাষা অনেক সমৃদ্ধ হয় তার আমলেই বাল্মিকী রামায়ণ বাংলায় অনুবাদ হয় ও কালজয়ী উপন্যাস ইউসুফ জুলেখা তৈরি হয়। 

সুলতান আজম সাহের শাসনকাল ছিল ১৩৮৯ থেকে ১৪১০ সাল। ১৪১১ সালে তার মৃত্যু হয়।

রাস্তার ধারে অনেক অবহেলায় পড়ে আছে সমাধিটি। এই সুলতানের মাজারটির বিষয়ে বহু পর্যটকের জানা নেই।

কিভাবে যাবেন: গুলিস্তান থেকে স্বদেশ অথবা দোয়েল বাসে করে যাওয়া যায় সোনারগাঁও মোগরা পাড়া চৌরাস্তা। জন প্রতি ভাড়া ৫০ টাকা। মোগরা পাড়া চৌরাস্তা থেকে যাওয়া লাগবে সোনারগাঁও সরকারি কলেজের সামনে সেখান থেকে মাজারে যাওয়া যাবে।

এই ছিল নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওয়ের পাঁচটি দর্শনীয় স্থানের তথ্য। এই পাঁচটি স্থান এক দিনেই পরিদর্শন করতে হলে আপনাকে সকাল-সকাল বের হতে হবে। কারণ সব জায়গায় পাঁচটার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। 

কিছু ভালো সময় কাটাতে চাইলে এবং কিছু ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন করতে চাইলে প্রিয়জনদের নিয়ে ঘুরে আসুন সোনারগাঁও।