ঢাকা, শনিবার ২৩, নভেম্বর ২০২৪ ৯:৪৮:৩২ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
ঢাকায় আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল সাতক্ষীরায় সাফজয়ী তিন নারী ফুটবলারের গণসংবর্ধনা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পঞ্চগড়ে, বাড়ছে শীতের তীব্রতা পেঁয়াজ-সবজি-মুরগির দাম কমলেও আলুর দাম বাড়তি রাজধানীতে মা-মেয়েকে এসিড নিক্ষেপ করে ছিনতাই

জাহাঙ্গীরনগরে মধ্যরাত পর্যন্ত সংঘর্ষ ও হামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:৫০ পিএম, ১৬ জুলাই ২০২৪ মঙ্গলবার

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্য

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্য

রাজধানী ঢাকার পাশেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রাতভর মারধরের খবর পাওয়া গেছে এবং এ ঘটনায় অন্তত চারজন শিক্ষক এবং অনেক শিক্ষার্থীর আহত হবার খবর পাওয়া গেছে।

আহত শিক্ষকদের মধ্যে অন্তত একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে দাবি করেছে আন্দোলনকারীরা।

সোমবার মধ্যরাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষার্থীরা বেধড়ক মারধরের জন্য ছাত্রলীগ কর্মীদের দায়ী করেছেন। ঘটনার সময় দুটি বোমা বিস্ফোরণেরও শব্দও শোনা গেছে।

জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যার পর থেকেই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জমায়েত হয় এবং পরে সেখান থেকে মিছিল বের করে।

মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় পৌঁছালে তাদের ওপর হামলা হয় এবং এ সময় হামলাকারীদের হাতে লাঠিসোটা ছাড়াও ধারালো অস্ত্রও দেখা গেছে।

পরে শিক্ষার্থীরা আবারো মিছিল শুরু করে এবং ছাত্রলীগ কর্মীরাও বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেয়। তবে সকাল থেকে আর আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. আলমগীর কবীর বলেছেন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ওপর কারা হামলা করেছে সেটি তাদের জানা নেই।

‌‌শিক্ষকরা টিয়ারশেলে আহত হতে পারেন। তবে বিস্তারিত আমরা জানি না। আজই সভা হবে সিন্ডিকেটের। সেখানে আলোচনা হবে।'

জানা গেছে, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হলে সোয়া ৭টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ।

ওই হামলায় নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।

প্রায় আধাঘণ্টা ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

রাত বারটার দিকে ছাত্রলীগ ও বহিরাগতরা মিলে শিক্ষার্থীদের ওপর ক্যাম্পাসে আবারও হামলা করলে বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা এসে পাল্টা ধাওয়া দেয়।

এ সময় হামলা থেকে বাঁচতে অনেকে উপাচার্যের বাসভবন চত্বরে অবস্থান নিলে তাদের লক্ষ্য করেও ইট পাটকেল ছোড়া হয় এবং ছাত্রলীগ কর্মীরা ওই বাসভবনের গেইটের বাইরে অবস্থান নেয়। তারা ভেতরে ঢুকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপরে হামলা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন জাবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক কামরুল আহসান।

তিনি জানান, উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের চারদিক থেকে অস্ত্রশস্ত্রসহ সন্ত্রাসীরা অবরুদ্ধ করে রেখেছে শুনে উদ্ধার করার জন্য কয়েকজন শিক্ষক ভিসি ভবনে গিয়েছিলাম। সেখানে আলোচনা চলাকালে ভিসি ভবনের মূল ফটক ভেঙে পুলিশের উপস্থিতিতে সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়।

তিনি বলেন, এ সময় প্রাণ বাঁচাতে ভিসির স্টোর রুমে তারা ১০-১২ জন শিক্ষক আশ্রয় নেন। কিছুক্ষণ পরে হামলাকারীরা সেই রুম ভেঙ্গে গালাগালি ও মারধর শুরু করে।

এক পর্যায়ে পুলিশ ভবনের সামনে এসে অবস্থান নিলে ছাত্রলীগ কর্মীরা সরে যায়। পরে রাত দুটার দিকে বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিলসহ আবারো উপাচার্যের বাসভবনের দিকে আসতে শুরু করে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গেও আন্দোলনকারীদের কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি মন্তব্যের প্রতিবাদে এবং কোটা সংস্কারসহ কয়েকটি দাবিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে রবিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে ছাত্র বিক্ষোভ শুরু হয়।

সোমবার বিকেলের পর থেকে ঢাকাসহ সব ক্যাম্পাসেই ছাত্রলীগ কর্মীরা আন্দোলনরতদের উপর হামলা শুরু করলে সব জায়গাতেই সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়।

প্রতিটি ক্যাম্পাসেই বহিরাগতরা এসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে বলেও সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছে।

শেখ হাসিনার যে কথা নিয়ে ক্ষোভ:
ঢাকায় রবিবারের সংবাদ সম্মেলনে ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করার প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “২০১৮ সালে আন্দোলনের সময় রাস্তায় ধংসাত্নক কর্মসূচি, মানুষের ওপর হামলা, মিথ্যাচারসহ বিভিন্ন কারণে বিরক্ত হয়ে তখন কোটা বাতিল করে দিয়েছিলাম। আর এখন বিষয়টি আদালতের ওপর”।

তিনি বলেন, “বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আদালত শিক্ষার্থীদের বলেছে তাদের বক্তব্য থাকলে তারা আদালতে গিয়ে বক্তব্য জানাক। যতক্ষণ পর্যন্ত আদালত থেকে সমাধান না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কিছু করার নেই”।

তাহলে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন কতদিন চলবে? কিংবা এই আন্দোলনের ভবিষ্যতও বা কী? – এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, "তারা আন্দোলন করছে করুক। কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করতে পারবে না। পুলিশের গায়ে হাত দেয়া, গাড়ি ভাঙলে আইন তার নিজ গতিতে চলবে।"

শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কথা বলা হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা প্রশ্ন তোলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার তাদের কে দিয়েছে? কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধার নাতি হিসেবে কোটায় ভর্তি হয়ে এখন কোটার বিরুদ্ধে কেন আন্দোলন করছে প্রশ্ন রাখেন শেখ হাসিনা।

তিনি প্রশ্ন রাখেন, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি পুতিরা কোটা পাবে না তো রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে?

এই আন্দোলনে কোনো মহল ইন্ধন দিচ্ছে কি না সেটি নিয়েও প্রশ্ন করা হয়েছিল শেখ হাসিনার কাছে। তবে এর কোনো জবাব তিনি দেননি।