আন্তর্জাতিক নারী দিবস
তোমাকে ধন্যবাদ, তোমার প্রতি কৃতজ্ঞতা
সজীব সরকার | উইমেননিউজ২৪প্রকাশিত : ০১:২৩ এএম, ৮ মার্চ ২০১৯ শুক্রবার
একসময় পালিত হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস’। এখন তা পালিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ হিসেবে। অর্থাৎ দিবসটি একটি সার্বজনীন রূপ পেয়েছে, এর সরাসরি অংশীজনের আওতা বেড়েছে।
বিশ্বব্যাপী ৮ মার্চ নারীদের জন্যে বিশেষ একটি দিন। বিশেষ দিন এজন্যে যে, নারীরা এদিন নতুন করে আশায় বুক বাঁধেন, বৈষম্যহীন ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাপূর্ণ একটি সমাজ সত্যিই প্রতিষ্ঠা পাবে, সমতা হবে যার মূল উপজীব্য। প্রতি বছর একইভাবে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে- এর অর্থ হলো, এ সমাজ এখনো প্রতিষ্ঠা পায়নি; সে আশা এখনো আসলে দুরাশা; নারীর সে প্রত্যাশা এখনো সুদূর দিগন্তের মতো : প্রায় দৃশ্যমান, কিন্তু স্পর্শযোগ্য নয়!
বিশ্বের একেকটি প্রান্তে একেক ধরনের লক্ষ্য নিয়ে নারী দিবস উদযাপিত হয়ে থাকে; কোথাও নারীর নীরব ত্যাগের প্রতি সম্মান জানাতে, কোথাও নারীর প্রতি বৈষম্য ও সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে। তবে সাধারণ উপলক্ষগুলোর মধ্যে রয়েছে নারীর প্রতি শ্রদ্ধা, সমাজে নারীর অস্তিত্ব ও সগৌরব উপস্থিতি জানানো, তাদের অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।
নানা ঘটনা পরম্পরার মধ্য দিয়ে ১৯১৪ সাল থেকে প্রত বছর ৮ মার্চ নারী দিবস পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ১৯৭৫ সাল থেকে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করছে। ওই বছর জাতিসংঘ এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। নারী দিবস একাধারে যেমন উদযাপনের দিন, তেমনি তা প্রতিবাদেরও দিন। এই উদযাপন নারীর অপরিমেয় শক্তির আনন্দের, তাদের নীরব ত্যাগের, পরিবার ও সমাজে তাদের অতুলনীয় অবদানের জন্যে; আর প্রতিবাদ হলো নারীর এই অফুরান শক্তিকে অস্বীকারের বিরুদ্ধে।
নারীর পক্ষে আন্দোলনের চার ধারার প্রথমটিতে (ফার্স্ট ওয়েভ ফেমিনিজম; ১৯০০-১৯৫৯) নারী সোচ্চার হয়েছে মূলত সম্পত্তি ও রাজনীতিতে সমানাধিকারের দাবিতে। দ্বিতীয় ধারায় (সেকেন্ড ওয়েভ ফেমিনিজম; শুরু হয় ১৯৬০ সালে) লিঙ্গ বৈষম্য, আইনি বৈষম্য, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসন এবং নিজের শরীর, যৌনতা ও প্রজনন প্রক্রিয়ায় নিজের মতাধিকার প্রতিষ্ঠার মতো বিষয়ে নারীরা সক্রিয় হন। তৃতীয় ধারার নারীবাদী আন্দোলনে (থার্ড ওয়েভ ফেমিনিজম; শুরু হয় গত শতাব্দির নব্বইয়ের দশকে : ১৯৯০-২০০০ সাল) উঠে আসতে থাকে ব্যক্তিসত্তার প্রসঙ্গ। ২০০০ সালের পর থেকে শুরু হওয়া চতুর্থ ধারায় (ফোর্থ ওয়েভ) যে আন্দোলন চলছে, তার কেন্দ্রে রয়েছে লিঙ্গভিত্তিক হয়রানি এবং নারী-বিদ্বেষ বিরোধী জনমত গঠন।
কিন্তু এ আন্দোলনে আমাদের অংশগ্রহণ বা অর্জন কতোটুকু?
আমরা এমন অনেক নজির পাই যেখানে যথেষ্ট প্রজ্ঞা আর যোগ্যতা থাকার পরও নারীর পদায়ন বা পদোন্নতি হয় না কেবল তারা নারী বলে। অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে নারীদের চাকরিতে নিতে প্রকাশ্য বা সুপ্ত অনীহার কেস স্টাডিও আছে অনেক। বাংলাদেশে এখনো মূলধারার এমন অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে নারীরা মাতৃত্বকালিন ছুটি থেকে বঞ্চিত; এ ছুটি চাইলে তাদের চাকরি ছেড়ে দিতে বলা হয় একেবারে স্পষ্ট ভাষায়। অথচ পৃথিবীর অনেক দেশ নানাভাবে নারীর কল্যাণে এগিয়ে আসার চেষ্টা করছে; নারীর সঙ্গে যে অন্যায় বৈষম্য বিদ্যমান, তা নিরসনে ছোট-বড় নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমাদের দেশেও নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ রয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে বড় সাফল্যও রয়েছে; কিন্তু সে উন্নয়ন বা সাফল্যের সুবিধা নারীরা প্রকৃত অর্থে কতোটুকু ভোগ করতে পারছে, সেটিও বিবেচনায় রাখা জরুরি।
নারীর পক্ষে আন্দোলনের ব্যাপারে সহমত থাকলেও অনেক পুরুষের মনোজগতে রয়েছে, এটি পুরুষের ‘উদারতা’! এই বোধই যার নেই যে এটি কোনো উদারতা তথা অনুকম্পা নয়- বরং নারীর সহজাত অধিকার- যা থেকে নারীদের আজন্ম বঞ্চিত রেখেছে এই পুরুষেরাই, সেই পুরুষদের সমাজে নারীর সম অবস্থান বা সম মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা কঠিনই বৈকি! আর আত্মস্বীকৃত এমন পুরুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয় যারা সগর্বে এই ঘোষণা দেয়াটাকে বীরত্বের অংশ বলে ভাবেন যে, তারা নারীর অধিকারের আন্দোলনের পক্ষে কেবল এই আশায় যে, এই ‘সুযোগ’ কাজে লাগিয়ে বহু নারীর সঙ্গে শোয়া যাবে! তো, এই দুই প্রজাতি বাদ দিলে সত্যিকার অর্থেই নিতান্ত ঔচিত্যের দায়বোধ থেকে নারীর অধিকার আন্দোলনে ও তাদের অগ্রযাত্রায় আন্তরিক সহচর হতে চায়- এমন পুরুষের সংখ্যাটা খুব আশাব্যঞ্জক নয়।
তাই, কথিত ‘পুরুষের সমাজে’ নারীর প্রাপ্য অধিকার বা মর্যাদার লড়াই মোটেও সহজ নয়। এ পথে খুব ধীরেই হাঁটতে হবে নারীকে, এবং হয়তো একাই। কিন্তু হাল ছাড়লে চলবে না; ‘আদিম সাম্যবাদ’ বদলে গিয়ে যদি সমাজটা ‘পুরুষের’ হয়ে উঠতে পারে, তাহলে সমাজটা আবারো বদলে গিয়ে নারী ও পুরুষ উভয়ের হয়ে ওঠাটা তাত্তি¡কভাবেই তো আর অসম্ভব নয়! কেবল দরকার চলমান থাকা; এ পথে চলতে গিয়ে নারী বার বার পড়বে; চাকরি পাবে না, পদোন্নতি পাবে না, হয়রানির শিকার হবে, ধর্ষিত হবে... কিন্তু থেমে গেলে চলবে না; যতোবার পড়বে, ঠিক ততোবারই দ্বিগুণ বলিষ্ঠতা নিয়ে উঠে দাঁড়াতে হবে। পথে বেরোলে ধুলা আসবে, কাদা লাগবে, কুকুর কামড়াবে; তাই বলে নিজেকে গৃহবন্দী করলে চলবে না; ভাবা যাবে না, এ পথ কেবল পুরুষের; বরং এ পথ যতোটা পুরুষের, ঠিক ততোটাই নারীরও।
নারী দিবসকে কেবল নারীর নয়, নারী-পুরুষ উভয়ের দিবস করা দরকার। কেননা নারীর অধিকারের বিষয়ে কেবল নারীকে সচেতন করলে হবে না, করতে হবে পুরুষকেও। সম্ভবপর সব উপায়ে পুরুষকে নারীর ব্যাপারে শ্রদ্ধাশীল, যত্নশীল, সংবেদনশীল করে তুলতে হবে।
আমি কেবল আমার বাবার অংশ নই; একজন পুরুষের পাশাপাশি আমি জন্মেছি একজন নারীর অংশ হয়ে, তার রক্ত-মাংস নিয়ে। এর বাইরে আমি একজন নারীর জীবনসঙ্গী। কিন্তু আমি জানি যে নারীর প্রতি আমি এখনো যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল বা যত্নশীল হয়ে উঠতে পারিনি; তাই এবারের নারী দিবসকে উপলক্ষ করে আমি অন্তত আমার জীবনসঙ্গীর কাছে প্রতিজ্ঞা করতে চাই, আমি তাঁর অধিকার, মর্যাদা ও ভূমিকার ব্যাপারে আরও আন্তরিক, আরও শ্রদ্ধাশীল, আরও যত্নশীল হয়ে উঠব, এবং তাঁর ‘স্বামী’ নয় বরং তার একজন সহচর হয়ে থাকতে চাই- আমৃত্যু।
আমার ব্যক্তিজীবনে তার অপরিসীম ভূমিকা এবং আমাদের পরিবারের জন্যে তাঁর সীমাহীন ত্যাগের জন্যে এ উপলক্ষে তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে চাই; আমার অনেক অবহেলা, তাঁকে বুঝতে না পারার মতো আরো অনেক কিছুর পরও আমাকে ভালোবাসবার জন্যে এবং আমার পাশে থাকবার জন্যে তাঁর প্রতি আমার সীমাহীন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই।
আমার এই লেখা তাই তাঁকেই উৎসর্গ করলাম; একজন ‘নারীকে’ উৎসর্গ করতে পারার মাধ্যমে নিজেকে ধন্য করতে চাই।
লেখক : সজীব সরকার : সহকারি অধ্যাপক; জার্নালিজম, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ; স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। লেখক ও গবেষক।
ইমেইল : [email protected]
- আয়ারল্যান্ডকে বিধ্বস্ত করে ওয়ানডেতে বড় জয় টাইগ্রেসদের
- মধ্যপ্রাচ্যে ইলিশ রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে: ফরিদা আখতার
- আয়ারল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ড গড়ল টাইগ্রেসরা
- শীতে ঘুমিয়েই কমবে ওজন
- পেয়ারার সঙ্গে লেবু চাষে সফলতা
- ফের মুখ খুললেন শাওন
- থাইল্যান্ডের পাতায়ার জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলো
- জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াসহ সব আসামিকে খালাস
- ফারজানার ফিফটি, ছুটছে টাইগ্রেসরা
- ভারতীয় আলু ও পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ, বাড়ছে দাম
- ঢাকায় জিকা ভাইরাস শনাক্ত
- খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রা নিয়ে যে তথ্য জানা গেল
- ১২ ঘণ্টা গ্যাস বন্ধ থাকবে যেসব এলাকায়
- সাগরে গভীর নিম্নচাপ, যেসব অঞ্চলে বৃষ্টির আভাস
- টস জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা
- জেনে নিন বিমানবন্দর নেই যে সব দেশে
- ঘুরে আসুন পানামসহ না.গঞ্জের পাঁচটি পর্যটন স্পট
- আজ পহেলা অগ্রহায়ণ, হেমন্তকাল শুরু
- বিশ্ব হার্ট দিবস আজ
- শান্তিতে নোবেল পেল জাপানের মানবাধিকার সংস্থা নিহন হিদানকিও
- হেমন্তে ছাতিম ফুল সুগন্ধ ছড়িয়ে যায়
- রাজু ভাস্কর্যের নারী প্রতিকৃতিতে হিজাব, যা জানা গেলে
- ‘রিমান্ড’-এ মম
- পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপে ঘুরে দাঁড়াল ভারতের মেয়েরা
- নেপালে ভয়াবহ বন্যা-ভূমিধসে নিহত বেড়ে ১১২
- জীবনে প্রেম এসেছে ৬ বার: স্বস্তিকা
- পঞ্চগড় থেকে দেখে আসুন কাঞ্চনজঙ্ঘা
- এইচএসসির ফল দেখবেন যেভাবে
- গৃহশ্রমিক মেয়েদের দিন কষ্টে কাটে
- বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া নিয়ে ভারতের নতুন বার্তা