ঢাকা, শুক্রবার ২৯, নভেম্বর ২০২৪ ২০:২৮:২০ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
ডেঙ্গুতে তিনজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৩৫৪ তেল-আলু-পেঁয়াজে স্বস্তি নেই, মাছের বাজার চড়া ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘ফেনজাল’ অস্ট্রেলিয়ায় কম বয়সীদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা ৩ বিভাগে হতে পারে বৃষ্টি, ৪ সমুদ্রবন্দরে সতর্কতা সংকেত পর্যটক সংকট, সেন্ট মার্টিনে যাচ্ছে না জাহাজ তীব্র শীতে কাঁপছে উত্তরের জনপদ

দুই মেয়েকে কাছে পেতে চান জাপানি মা

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:৪২ এএম, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সোমবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ইমরান শরীফ ও জাপানি নাগরিক ডা. এরিকো নাকানোর সংসারে জন্ম নেওয়া দুই মেয়ে জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে তাদের মায়ের পক্ষে করা আপিল আবেদনের ওপর শুনানি চলছে। আজ সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা ১০ মিনিটে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। মায়ের পক্ষে আদালতে আজ শুনানি করছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি।

এর আগে বিষয়টি গতকাল রোববার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল একই বেঞ্চে শুনানির কথা ছিল। কিন্তু আপিল বিভাগে নিয়োগ পাওয়া বিচারপতি নাজমুল আহাসান মারা যাওয়ায় গতকাল তার সম্মানে সুপ্রিম কোর্টের (আপিল ও হাইকোর্ট) উভয় বিভাগের বিচার কাজ বন্ধ ছিল। তবে আজ আবার রোববারের কাযর্তালিকা অনুযায়ীই আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ায় বিষয়টির শুনানি চলছে।

আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির জানান, এর আগে গত বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) ওই দুই শিশুকে মায়ের কাছে নিতে মায়ের পক্ষে নিয়মিত আপিল আবেদন (সিপি) করা হয়েছিল।

ওইদিন এই আইনজীবী বলেন, আমরা হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়টি হাতে পেয়েছি। রায় সংযুক্ত করে নিয়মিত আপিল (সিপি) দায়ের করেছি। এ জন্য এই বিষয়ে শুনানিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে আপিল বিভাগের আদালত।

এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি সকালে আপিল বিভাগ ইমরান শরীফ ও ডা. এরিকো নাকানোর দুই মেয়েকে তাদের মায়ের সঙ্গে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকার আদেশ দেন। তবে মায়ের কাছে থাকলেও প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে যেকোনো সময় বাবা ইমরান শরীফ তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।

জাপানি মায়ের আপিল শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি নুরুজ্জামান ননীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৫ সদস্যের বিচারপতির বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে ওইদিন জাপানি মায়ের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি, অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম। তাদের সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। ইমরান শরীফের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফিদা এম কামাল, অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম। তাদের সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার মারুফুল ইসলাম।

ওইদিন শুনানিতে আপিল বিভাগ বলেন, প্রধান বিচারপতি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে আমরা এই মামলা শুনব। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আগের আদেশ বহাল থাকবে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ আবারও শুনানির জন্য বিষয়টি কার্যতালিকায় রয়েছে।

এর আগে গত ৩ জানুয়ারি এক আদেশে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বলেছেন, ওই দুই মেয়ে আগামী ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের মায়ের কাছে থাকবে। রাজধানীর বারিধারার হোটেল স্কট প্যালেসে থাকবে তারা। তবে মায়ের কাছে থাকলেও প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে যেকোনো সময় বাবা ইমরান শরীফ শিশুদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। জাপানি মায়ের আপিল শুনানি নিয়ে ওইদিন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৩ সদস্যের বেঞ্চ এই আদেশ দিয়েছিলেন।

তার আগে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর দুই মেয়েকে নিজের কাছে নেওয়ার জন্য জাপানি মা নাকানো এরিকোর করা আপিলের বিষয়ে আদেশ দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আদেশে বলা হয়, ওই দুই মেয়ে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের মায়ের কাছে থাকবে।

গত বছরের ২১ নভেম্বর দুই মেয়েকে তাদের বাবার জিম্মায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। তবে জাপানি মা চাইলে ১০ দিন করে বছরে ৩০ দিন দেখা করতে এবং তাদের সঙ্গে একান্তে অবস্থান করতে পারবেন বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

আইনজীবী শিশির মনিরের দেওয়া ভাষ্যমতে, ২০০৮ সালের ১১ জুলাই শরীফ ইমরানের সঙ্গে বিয়ে হয় এরিকো নাকানোর। জাপানি আইনানুসারে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। ১২ বছরের সংসারে ৩টি কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করে।

তারা হলো- জেসমিন মালিকা, লাইলা লিনা ও ৭ বছরের সানিয়া হেনা। এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। তিন মেয়ে টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসজেআই) শিক্ষার্থী ছিল।

গত বছরের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরানের সঙ্গে এরিকোর বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এরপর ২১ জানুয়ারি ইমরান আমেরিকান স্কুল ইন জাপান কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। এতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর একদিন জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্ট্যান্ড থেকে ইমরান তাদের অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।

ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছ থেকে মেয়েদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে মেয়েদের নিজ জিম্মায় পেতে আদেশ চেয়ে ২৮ জানুয়ারি টোকিওর পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি মেয়েদের সঙ্গে এরিকোর সাক্ষাতের অনুমতি দিয়ে আদেশ দেন।

কিন্তু ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়েকে সাক্ষাতের সুযোগ দেন। এরপর গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি ‘মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে’ ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে তিনি দুবাই হয়ে বাংলাদেশে আসেন।

এরপর একই বছরের ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে তাদের মা এরিকোর জিম্মায় হস্তান্তরের আদেশ দেন। তবে দুই মেয়ে বাংলাদেশে থাকায় বিষয়টি নিয়ে তিনি বাংলাদেশের একজন মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন। গত বছরের ১৮ জুলাই তিনি শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন। এরপরই আইনি প্রক্রিয়ায় হাঁটতে থাকেন তিনি। যেটি এখনও চলমান রয়েছে।