ঢাকা, রবিবার ২৪, নভেম্বর ২০২৪ ১:০৯:৪০ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
সাময়িক বন্ধের পর খুললো যমুনা ফিউচার পার্ক ডেঙ্গুতে আরও ১০ জনের প্রাণ গেল ডেঙ্গুতে এ বছরেই ৫১ শিশুর প্রাণহানি মাকে হত্যা করে থানায় হাজির ছেলে আমদানির সাড়ে তিনগুণ দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে আলু ঢাকায় আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল সাতক্ষীরায় সাফজয়ী তিন নারী ফুটবলারের গণসংবর্ধনা

নারী-পুরুষ সমতা, সংসারে শান্তি

আফসানা নীলা | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৭:০৯ পিএম, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ শুক্রবার

ইট ভাঙ্গার কাজ করেন ২৯ বছর বয়সী সালমা। প্রতিদিন ভোর ছয়টা থেকে সাড়ে ছয়টার মধ্যে নগরীর মাতুয়াইল এলাকার ইট ভাঙ্গার কাজের জায়গায় হাজির হতে হয়। সঙ্গে নিয়ে আসতে হয় মাত্র সাড়ে সাত-মাস বয়সী বাচ্চাকেও। কারণ, সেছাড়া বাচ্চাটাকে দেখাশোনা করার মত কেউ নেই। থাকেন যাত্রাবাড়ীর এক বস্তিতে। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত একটানা কাজ করতে হয় তাকে। শুধু দুপুরে খাওয়ার জন্য ৪৫ মিনিট ছুটি পান কাজ থেকে। আর বাচ্চা সঙ্গে থাকায় কাজের ফাঁকে মাঝে মাঝে বাচ্চার দেখাশোনা করার সুযোগ পান সালমা।

সারাদিন কাজ শেষে বাসায় পৌঁছে কিন্তু তার শুয়ে-বসে বিশ্রাম নেওয়ার কোন সুযোগ নেই তার। গোসল করেই ঢুকতে হয় রান্না ঘরে। সবার জন্য রান্না শেষ করে, সবার খাওয়া শেষে তারপর নিজে খেয়ে যখন বিছানায় যান তখন রাত প্রায় সাড়ে ১১টা। পরদিন আবার ভোর ৫টা মধ্যে উঠে সবার জন্য খাবার তৈরী করতে হয় তাকে। প্রায় সময়ই ভোর বেলা নিজে কোন কিছু না খেয়েই ছেলেকে নিয়ে চলে যান মাতুয়াইলে।

ফাহমিদা পেশায় ব্যাংকার। বছর দুয়েক আগে বিয়ে করেন আরেক ব্যাংকারকে। বছর ঘুরতেই তাদের কোল জুড়ে আসে এক মেয়ে সস্তান। তার নিত্যদিনের জীবনটাও অনেকটা সালমার মতোই।

ফাহমিদা বলেন, সকাল সাড়ে ৯ টার মধ্যে গুলাশন-১-এ আমার অফিসে পৌঁছাতে হয়। বাসা নগরীর মধ্য বাড্ডা এলাকায়। সকাল সাড়ে ৬ টায় ঘুম থেকে উঠে সবার জন্য নাস্তা রেডি করি। তারপর নিজে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে অফিসের গাড়ির জন্য যখন রাস্তায় পৌঁছাই তখন ঘড়ির কাঁটা ৮ টা ২০-এ। অফিস শেষ করে বাসায় পৌঁছাই সাড়ে সাতটার সময়। আসার সময় আমার বাবার বাড়ি থেকে বাবুকে নিয়ে তারপর বাসায় ফিরি। এরপর বাবুর খাবার রেডি করে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিই। তারপর আমাদের রান্না-বান্না শেষ করে খেতে খেতে রাত প্রায় সাড়ে ১১টা বেজে যায়।

এভাবেই দিনের পর দিন চলছে সালমা, ফাহমিদাসহ লাখো নারীর কর্মজীবন আর সংসার। তারা দু’হাতে একই সঙ্গে সামলাচ্ছেন সংসার ও কর্মস্থল।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর সম্প্রতি পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, একজন কর্মজীবী নারী, পুরুষের দ্বিগুণ কাজ করেন। তবে, কর্মজীবী নারীর গৃহস্থালি কাজের কোন আর্থিক মূল্যায়ন করা হয় না বলেই এর গুরুত্ব দৃশ্যমান হয় না। বিবিএস পরিচালিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শ্রমশক্তি জরিপে কর্মজীবী নারীর ঘরের কাজকে দ্বিগুণ বোঝা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

জরিপ মতে স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই কর্মজীবী এমন পরিবারে শতকরা ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই রান্নার কাজ করেন নারী। অন্যদিকে কর্মজীবী পুরুষ যারা রান্না করেন তাদের সংখ্যা মাত্র আড়াই শতাংশ।

এছাড়াও ১০০ জন কর্মজীবী নারীর মধ্যে ৮৯ জনই কাপড় ধোয়ার কাজ নিজেরা করে থাকেন। অন্যদিকে মাত্র ১২ শতাংশ পুরুষ তাদের নিজেদের কাপড় নিজেরা ধুয়ে থাকেন। অন্য পরুষদের কাপড় ধোয়ার কাজ করেন মূলত বাড়ির অন্য নারী অথবা গৃহকর্মীরা।

কর্মজীবী নারীর মধ্যে ৫৩ শতাংশ নারী পরিবারের অন্যান্য সদস্য যেমন-শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ সদস্যদের দেখভালের দায়িত্ব পালন করেন। আর মাত্র ২১ শতাংশ কর্মজীবী পুরুষ এ দায়িত্ব পালন করেন। অন্যদিকে, ২৬ শতাংশ কর্মজীবী নারী চাকরির পাশাপাশি সংসারের জন্য কেনাকাটার দায়িত্ব নিয়ে থাকেন।

জরিপ মতে, এসব কাজের বাইরেও সংসারের অন্যান্য কাজগুলোতে কর্মজীবী নারীর অংশগ্রহণ কর্মজীবী পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি। জরিপে বলা হয়, কর্মজীবী নারীরা পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ পাচ্ছেন না।

মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট মানোয়ারা হক বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই মূলত নারীদের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। হয়েছে নারীর ক্ষমতায়ন। এর ফলে নারীরা যেমন আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হচ্ছে অন্যদিকে দেশও এগিয়ে যাচ্ছে।

তবে, দুঃখের বিষয় হচ্ছে, নারীদের শ্রম বাজারে অংশগ্রহণ বাড়লেও তাদের ঘরের কাজ নিয়মিতই করতে হচ্ছে। এখান থেকে এখনো পর্যন্ত নিস্তার নেই। অন্যদিকে অনেক পুরুষ সদস্য তার সঙ্গীর চেয়ে কম সময় অফিস করেও ঘরের কোন কাজ করছেন না অথবা তাকে সহযোগিতাও করেন না। আবার অনেক পরিবার শর্তই দিয়ে রাখেন যে, আগে সংসার, স্বামী আর বাচ্চা সামলাতে হবে। তারপর বাইরে চাকরি করা যাবে। অধিকাংশ নারী তা মেনেই বাইরে যাচ্ছেন এবং কাজ করছেন।

মানবাধিকার কর্মীরা মনে করেন, বাংলাদেশে এখন অনেক নারী শ্রম বাজারের সাথে যুক্ত হচ্ছেন, এটা সত্যিই আশার কথা। এর ফলে নারীর ক্ষমতায়ন ও স্বাধীনতা আরো জোরদার হচ্ছে। তবে, সমাজ নারীদের ওপর অতিরিক্ত শ্রমের বোঝা চাপিয়ে দেয়ায় এই ক্ষমতায়ন ও স্বাধীনতার স্বাদ থেকে তারা যেমন বঞ্চিত হচ্ছে তেমন তাদের মানসিক প্রশান্তিও নষ্ট হচ্ছে। তারা বিশ্বাস করেন, দেশ উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের ওপর থেকে অতিরিক্ত শ্রমের বোঝা লাঘব হবে এবং ঘরের কাজে পুরুষরাও নারীদের পুরোপুরি সহযোগিতা করবেন এবং নারীর ক্ষমতায়নে তাদের জীবনসঙ্গীরা পুরোপুরি সহযোগিতা করবেন।

জরিপের অবশ্য একটা আশা জাগানিয়া বিষয় দেখা যায়, আর তা হল আনুষ্ঠানিক ভাবে শ্রমবাজারের পুরুষের তুলনায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে।

জরিপ মতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের শ্রমশক্তিতে অন্তর্ভুক্ত নারীর সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। এর আগের অর্থবছরে এ সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৯১ লাখ। এছাড়াও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের শ্রমশক্তির মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৪ কোটি ৩৫ লাখ। আগের অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৩১ লাখ।

সূত্র: বাসস