ঢাকা, শুক্রবার ১৪, মার্চ ২০২৫ ২:০৩:৪৭ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
ঢাবির সাবেক উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক আর নেই মাগুরায় সেই শিশুটি মারা গেছে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার চট্টগ্রামে বাসের ধাক্কায় ভাই-বোনের প্রাণহানী নোয়াখালীতে কলেজ ছাত্রীকে হেনেস্তা, শিক্ষার্থীদের ব্লকেড কর্মসূচি ঢাকার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না নরসিংদীতে ৩ লাখ ৭১ হাজার শিশুকে খাওয়ানো হবে এ ক্যাপসুল

নারীর নিরাপত্তা রক্ষায় সরকারকে আরও তৎপর হতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:১৬ এএম, ১৩ মার্চ ২০২৫ বৃহস্পতিবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

ড. বদিউল আলম মজমুদার বলেন, ‘আমরা ঐতিহাসিকভাবে দেখেছি যে নারীরা নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার, তারা বিভিন্নভাবে বঞ্চনার শিকার। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে। সরকার এ অবস্থার উত্তরণে চেষ্টা করছে, কিন্তু পেরে উঠছে না। আমি মনে করি, সরকারকে নারীর নিরাপত্তা রক্ষায় আরও সোচ্চার ও তৎপর হতে হবে। একইসঙ্গে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আমরা যদি প্রত্যেকে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করি, তাহলে ‘আমি’ থেকে ‘আমরা’ হয়ে উঠব। সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে অনলাইনেও সোচ্চার ভ‚মিকা পালন করতে হবে। আমরা নাগরিকরা সোচ্চার ও প্রতিবাদী হলে নারীর প্রতি সহিংসতা কমে আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’ নারীর অবস্থা ও অবস্থানের উন্নতির ওপর দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বুধবার (১২ মার্চ)  সকাল  সাড়ে ১০টায়, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে  মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে উন্মুক্ত আলোচনায় বদিউল আলম মজমুদার এ মন্তব্য করেন।

‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন, নারী ও কন্যার উন্নয়ন’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম-এর উদ্যোগে পালিত হলো আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৫।
জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম-এর সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক  তানিয়া, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস, জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সহ-সভাপতি ও নারীমৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আক্তার ডলি এবং ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেন চৌধুরী কিরন।

অনুষ্ঠানে দু’জন কৃতি নারীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মাননাপ্রাপ্তরা হলেন: লেখক, গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা এবং লেখক, সংগঠক ও মানবাধিকারকর্মী ইলিরা দেওয়ান।

 তানিয়া খান বলেন, নারীরা যোগ্য ও দক্ষ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার ক্ষমতায়ন হয়। কিন্তু নারীরা যদি নিজেদের দুর্বলতা প্রকাশ করে, তার মানসিকতার পরিবর্তন না করে, দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠাবান না হয়, তাহলে সমাজ নারীকে দুর্বল ভাববে। তাই নারীকে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে, প্রতিবাদী হতে হবে। আমরা দেখেছি, জুলাই-আগস্টে বিপ্লবে আমাদের কন্যারা অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছেন। একইভাবে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আবারও নারীরা সোচ্চার হলে অপরাধীরা পার পাবে না। আমরা মনে করি, নারী উন্নয়নের জন্য সমতার চেয়ে সাম্য বেশি দরকার। কারণ সাম্য না আনলে সমতা নিশ্চিত হবে না।’ মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুর সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিতে সরকার সচেষ্ট রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।      

শাহীন আক্তার ডলি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। তাই নারী ও কন্যাশিশুদের উন্নয়ন মানেই দেশের উন্নয়ন। আমরা মনে করি, কন্যাশিশু ও নারীরা সুযোগ পেলে বিকশিত হতে পারে এবং যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে নারীরা কিছু ক্ষেত্রে এগিয়ে গেলেও তারা নানাভাবে বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার। নারীরা এখনও পরিপূর্ণভাবে সিদ্ধান্ত প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারেনি। তাই নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং নারীকে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। নারীকে দিতে হবে তার যথাযথ ও প্রাপ্য সম্মান। নারীরা যেন নির্বিঘেœ চলাফেরা করতে পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারের মধ্য দিয়ে নারীদের জন্য বাসযোগ্য একটি সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে তোলার জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।’      

হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরন বলেন, নতুন বাংলাদেশে আমরা চাই ধর্ষক তার যথাযথ শাস্তি পাবে, ধর্ষণের শিকার নারী ন্যায়বিচার পাবেন। আমরা নারী-পুরুষের সমতার সমাজ চাই। এজন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হবে, গণতান্ত্রিক চর্চা করতে হবে। আজ সব জায়গা থেকে নারীর প্রতি নির্যাতনের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠেছে। আমি মনে করি, রাষ্ট্র যদি তার দায়িত্ব পালন করে এবং আমরা সবাই যদি সোচ্চার থাকি, তাহলে নারীর প্রতি নির্যাতন ও বৈষম্যহীন একটি রাষ্ট্র আমরা গড়ে তুলতে পারব।’    

কবিতা বোস বলেন, ‘নারীরা জন্মের পর থেকে বৈষম্যের শিকার হয়। কিন্তু এই বৈষম্যের জন্য নারীরা নিজেরা দায়ী নয়। আজকে নারীদের ওপর বিভিন্ন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আমি মনে করি, সুলক্ষী নারী নয়, সোচ্চার ও আত্মবিশ্বাসী নারীরাই ইতিহাস তৈরি করে। তাই নারী ও কন্যাশিশুদের উচিত নিজেদের দক্ষ ও যোগ্য করে তোলা, নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার জন্য আত্মবিশ^াসী হওয়া। আর আত্মবিশ্বাসী হওয়ার জন্য দরকার লেখাপড়া করা।’    

অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, ‘বাংলাদেশে শ্রমজীবী নারীর জীবনে কোনো পরিবর্তন এসেছে এই প্রশ্নকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা দরকার। আমি মনে করি, নারী ও কন্যাশিশুদেরকে নিজের যোগ্যতা ও মেধার বিকাশের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হবে নারী ও কন্যাশিশুদের বিকাশ, নিরাপত্তা ও সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা এমন এক বাংলাদেশ চাই যেখানে প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে কাজ করবে, যেখানে মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নিবে না এবং সব মানুষের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত হবে, আমাদের কোনো নারী নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হবে না।’  

ইলিরা দেওয়ান বলেন, ‘জনশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের ৫১ শতাংশ নারী। সংখ্যায় বেশি হলেও গুণগত দিক থেকে নারীরা এখনও পিছিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে পাহাড়ি নারীরা এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে। জুলাই-আগস্টের পর বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তোলার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। আমরা এমন এক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই যেখানে নারীরা নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারবে এবং বাংলাদেশ হয়ে ওঠবে একটি বাসযোগ্য বাংলাদেশ।  

অনুষ্ঠানের বিশেষ পর্যায়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত পোস্টারের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।