ঢাকা, শনিবার ২৩, নভেম্বর ২০২৪ ১৫:২৭:০৬ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
ডেঙ্গুতে এ বছরেই ৫১ শিশুর প্রাণহানি মাকে হত্যা করে থানায় হাজির ছেলে আমদানির সাড়ে তিনগুণ দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে আলু ঢাকায় আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল সাতক্ষীরায় সাফজয়ী তিন নারী ফুটবলারের গণসংবর্ধনা

নারীর প্রতি অশালীন ভাষার ব্যবহার আর কত

হাসিনা আকতার নিগার | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৪০ পিএম, ২ জানুয়ারি ২০২২ রবিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

'আহ মেয়েটা কি হট, দেখ দেখ ফিগার কি, মাল একখানা'- এমন শব্দ বা এর চেয়েও জঘন্য শব্দ শুনে নাই এমন নারী কেউ নাই বোধ করি। প্রতিনিয়ত রাস্তা ঘাটে অশালীন চাহনি, অঙ্গভঙ্গীর সাথে অশ্রাব্য শব্দ কানে আসে নারীদের। এর জন্য বয়সের সীমারেখা লাগে না। কিশোরী থেকে শুরু করে বয়স্কা নারীও এ অবস্থার শিকার হয়। 

সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক গণমাধ্যমে বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণির মানুষের ফোনালাপ ভিডিও বা আলাপচারিতায় যে অশালীন ভাষা ব্যবহার করা হয় তা সত্যি লজ্জিত করে এ সমাজকে। শুধু তাই নয় যাকে উদ্দেশ্য করে এ অশালীন ভাষাগুলো ব্যবহার করা হয় তা মুখে আনা বা স্মরণ করাও তার জন্য যন্ত্রণাদায়ক। আবার শুনেও প্রতিবাদ করতে পারে না ভয়ে। 

সামাজিক অবস্থান ভেদে নারীর প্রতি এমন শব্দের ব্যবহার কোন সুস্থ মানসিকতার লক্ষণ নয়। কিন্তু এর প্রতিবাদ হয় না। বরং নীরবে সহ্য করে চলতে হয়। কারণ প্রতিবাদ করলে আরও হেনস্তা হবার আশঙ্কা থাকে। 
আইন করে ইভটিজিং বন্ধ করা হয়েছে। এর ফলে সমাজে ইভটিজিং অনেকটা বন্ধ হয়েছে। কিন্তু অশালীন ভাষার ব্যবহার করে উত্যক্ত করাও এক ধরনের ইভটিজিং। একজন স্কুলগামী মেয়েকে বা কর্মজীবী নারীকে নোংরা ভাষা দিয়ে কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিত করারটা অন্যায়। এমন ইঙ্গিত নারীকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে। সে চলাফেরাতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে।

আবার দেখা যায়, কর্মক্ষেত্রে বা রাস্তাঘাটে চলাচলের পরিস্থিতি পরিবারকে জানালে অনেক সময় বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তারা হয় বলে চুপ করে থাকতে। না হয় বলবে, অন্য মেয়েদের বলে না তাকে কেন বলে। এমন কথার উত্তরে নারীর ঘরে বাইরের চুপ করে থাকা ছাড়া গত্যন্তর নাই। 

ইদানীং কালে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে অনেক পরিবার মেয়েদেরকে বোরকা বা হিজাব পরায়। তবে এটা কোন সমাজের জন্য সমাধান হতে পারে না। নারীদের সম্মান ও মর্যাদা দেবার মানসিকতা তৈরি করতে হবে সবার আগে। আর এ মানসিকতা গড়তে হলে পরিবার থেকে শিক্ষাটা আসতে হবে।

সমস্যা হলো নারীদের প্রতি অশালীন ভাষা বা কটুবাক্য ছুঁড়ে দেয় সব বয়সের পুরুষরা। রাস্তায় বা কর্মক্ষেত্রের নারীটি কারো ঘরের কন্যা, জায়া, জননী তা তারা ভুলে যায়। সুতরাং ঘরের তরুণ ছেলেটিকে নারীর প্রতি সম্মান দিয়ে কথা বলতে শিখানোর আগে নিজেকে শুধরাতে হবে। অফিসের নারী কর্মীটি কোন সহজলভ্য ভোগ্যপণ্য নয়- এ কথাটা আত্মস্থ করতে হবে। তাহলেই বসকে নিয়ে সমালোচনা করে অশালীন ভাষা ব্যবহারে সংযত হতে পারবে।

প্রকৃতপক্ষে আইন করে সব বন্ধ করা যায় না। নারীর প্রতি অকথ্য ভাষার ব্যবহার করতে নৈতিকতা ও মানসিকতার পরিবর্তন অতীব জরুরী। এর পাশাপাশি নারীকে তার নিজেরই প্রতিবাদ করতে হবে। একটা সময় মেয়েরা ইভটিজিংও সহ্য করত। কিন্তু এখন তারা আইনের কঠোরতার কারণে প্রতিবাদ করে। রাস্তায় বা আর কোথাও যে লোকটি মুখের বুলি দিয়ে অসভ্যতামি করছে তাকে উত্তর দিলেই বুঝবে, ভাষাই হলো শিষ্টাচারের প্রথম বহিঃপ্রকাশ। প্রয়োজনে এ ধরনের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে অভিযোগ করতে হবে।

পুঁথিগত বিদ্যা আর রাজনৈতিক সামাজিক অবস্থান থাকলেই যে মানুষ ভদ্র হবে তা কিন্তু  নয়। একজন রুচিবান মানুষের প্রথম বহিঃপ্রকাশ হলো তার আচার ব্যবহার। আর ব্যবহার কতটা শালীন তা বুঝা যায় ভাষার ব্যবহারের পরিমিত বোধ থেকে। তবে আজকাল মিডিয়াতে অনেক ব্যক্তি হয়তো বা নিজেদের জনপ্রিয় করে তুলতে অশালীন ভাষার ব্যবহার করে কিনা তা কেবল তিনিই বলতে পারেন। তবে রাজনৈতিক, সামাজিকভাবে সম্মানিত ব্যক্তিকে কথা বলার আগে বুঝতে হবে তার পক্ষে কতটা বলা উচিত বা উচিত নয়। সর্বোপরি একজন নারী সে যে বয়সেরই হোক না কেন, তাকে নিয়ে অশালীন বক্তব্য কোনভাবেই শোভনীয় নয়। নিজের ঘরের কন্যা, জায়া, জননীকে একবার ভাবুন তাহলেই বুঝবেন কারো প্রতি খারাপ শব্দের ব্যবহার বা আচরণ করাটা যুক্তিযুক্ত কিনা।

বর্তমানে দেশ, সমাজ এগিয়ে যাচ্ছে নারী পুরুষের সম্মিলিত প্রয়াসে। সেক্ষেত্রে নারীকে স্বাবলম্বী হয়ে স্বাধীনভাবে চলতে হলে পুরুষকে সমমনা মনোভাব নিয়ে হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। শারিরীক অবয়বে প্রকাশিত নারীর রূপের মোহে পুরুষের অভদ্র অশালীন ভাষার ব্যবহার আপনাকেই ছোট করে- এ কথাটা মনে রাখতে হবে। আর এ কথাটা মনে থাকলে কোন মেয়ের প্রতি অসভ্য শব্দ ছুঁড়ে দিতে বিবেকে প্রশ্ন জাগবে- এ ধরনের শব্দ নারীকে অসম্মান করারই নামান্তর।

লেখক- কলাম লেখক