ঢাকা, রবিবার ২৪, নভেম্বর ২০২৪ ১০:৪৬:৩৫ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
কুড়িগ্রামে বাড়ছে শীতের প্রকোপ, তাপমাত্রা নামল ১৫.৬ ডিগ্রিতে সাময়িক বন্ধের পর খুললো যমুনা ফিউচার পার্ক ডেঙ্গুতে আরও ১০ জনের প্রাণ গেল ডেঙ্গুতে এ বছরেই ৫১ শিশুর প্রাণহানি মাকে হত্যা করে থানায় হাজির ছেলে

নেশা থেকে অপরাধ: বিপথ অথবা বিপদগামী কন্যাশিশু

সোমা দেব

আপডেট: ০১:২৯ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ বুধবার

গত কয়েকদিন ধরেই একটি ঘটনা তথা সংবাদ বেশ আলোচিত হচ্ছে। তা হচ্ছে স্ত্রীসহ পুলিশ পরিদর্শক খুন হওয়া এবং পরবর্তীতে তাদের কন্যা ঐশীর আত্মসমর্পণ এবং স্বীকারোক্তি। খবরটি পড়ে সবার মতো আামিও স্তম্ভিত, বিস্মিত এবং তার চেয়েও বেশি আতঙ্কিত। যদিও কন্যাটি দোষী নাকি নির্দোষ, এই বিষয়টি এখনও আইনের দৃষ্টিতে প্রমাণিত হয়নি। পুলিশ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে খবরের কাগজ আমাদের যা জানিয়েছেন সেই বিষয়টি যদি পুরোপুরি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করি, যদি ঐশীর স্বীকারোক্তিকে আমরা সত্য তথ্য বলে ধরে নেই, তাহলে যে বিষয়টি এসে আমাদের সামনে উপস্থিত হয়, সেটার চিত্র খুবই হতাশাব্যঞ্জক। যা সামাজিক অবক্ষয় এবং অপরাধের এক নতুন এবং চরম উদাহরণ। প্রথমতই আমর মাথায় যে বিষয়টি ঘুরপাক খাচ্ছে তা হলো, যে কন্যাটি বিপথে পা বাড়ালো, নেশার জগতে পা বাড়ালো, তার দায় কার? কখন বাড়ালো? শুধুমাত্র বাবা-মা কিংবা অভিভাবক মহলের? এই ঘটনাটির দায় কি আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র কি এড়িয়ে যেতে পারবে? অথবা মিডিয়াও কি এই দায় এড়িয়ে যেতে পারবে? একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর প্রিন্ট অথবা ইলেকট্রনিক মিডিয়া এই ইয়াবা নামক নেশাজাতীয় দ্রব্য সম্পর্কে যত তথ্য দিয়েছেন, আমাদেরকে যতভাবে অবহিত করেছেন, সেটা কি অনেক আগেই তারা করতে পারতেন না? জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক দপ্তর (ইউএনওডিসি) থেকে প্রকাশিত বিশ্ব মাদক প্রতিবেদন-২০১৩ এ বলা হয়েছে, ২০০৯ সালে বাংলাদেশে এক লাখ ৩০ হাজার, ২০১০ সালে আট লাখ ১২ হাজার এবং ২০১১ সালে ১৪ লাখ ইয়াবা বড়ি ধরা পড়ে। এমনকি মিয়ানমারের আশেপাশের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে উদ্ধারের সংখ্যা সবচেয়ে কম। পুলিশ এবং মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যত পরিমাণ ইয়াবা এই দেশে ধরা পড়ে তার চেয়ে বহুগুণ বেশি পরিমাণে ইয়াবা দেশে ব্যবহার হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সীমান্তেই এর প্রবেশ রোধ করা জরুরি (প্রথম আলো, ১৯ আগস্ট, ২০১৩)। তথ্যটি খুবই ভয়াবহ এবং উদ্বেগজনক। আমাদের সমস্যা হচ্ছে, যখন একটি ঘটনা ঘটছে সেই সময়টাতেই আমরা খুব বেশি সচেতন হচ্ছি কিন্তু কয়েকদিন পর আবার একই অবস্থা। দু বছরের ব্যবধানে প্রায় ১৩ লাখ ইয়াবা বড়ি বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। কারা এর সাথে জড়িত, তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া হয়েছে, এমন কোন প্রতিবেদন কি আমরা পত্রিকার পাতায় দেখতে পাই? বাংলাদেশে ইয়াবা প্রবেশের সাথে যারা যুক্ত, তাদের ছেলেমেয়েরাই হয়তোবা এই ভয়াবহ মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়ছেন। সম্প্রতি প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রের (আপন) চিকিৎসা ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সেখান চিকিৎসা নিতে আসা মাদকাসক্ত কন্যাশিশুদের সবাই ইয়াবাতে আসক্ত। এদের বেশিরভাগই ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া ছাত্রী। তাই কোন হতাশা থেকে বা কী কারণে কন্যাশিশুরা ইয়াবা নামক এই নেশার সাথে যুক্ত হচ্ছেন, তার তদারকি প্রথমত করতে হবে পরিবারকেই। নৃশংসতম ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার পর হয়ত অনেক বাবা মা-ই নড়েচড়ে বসবেন। হয়ত অনেক বাবা-মা-ই তাদের কন্যাটি কিংবা তাদের পুত্রটি কোথায় যাচ্ছে, প্রাইভেট পড়ার নাম করে টাকা নিয়ে কোথায় যাচ্ছে বা কত টাকা কী খাতে খরচ করছে, সেই বিষয়টিও ভাববেন। কিন্তু সমাজে নেশার বিষবাষ্প, ইয়াবা নামক ভয়াবহ নেশাটির বিষবাস্প ঢুকে যাওয়ার অনেক পর। নৃশংসতম ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার পর। বিপথে চলে যাওয়া কন্যাটিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার দায়িত্ব সবার। মনোবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ঐশী নামক কন্যাটিকে শাসনের ধরনটি ঠিক ছিল না। পাশাপাশি আমি বলবো যে, তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন একটি কন্যাশিশু যখন বয়ঃসন্ধির সময়টা পার করে বা সে যখন টিনএজার হয়, সে সময়টাতে তাকে বেশি সঙ্গ দেওয়া। বাবা-মা’র কর্তব্য হবে তার সবকিছুর, সব প্রয়োজনের খোঁজখবর রাখা। ভবিষ্যতের বীজ যার হাত ধরে রোপণ করা হচ্ছে তাকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে সবার আগে তাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। তার মধ্যে ভাল অভ্যাস গড়ে তুলতে হলে পরিবার এমনকি সে যে স্কুলে পড়ছে তাদেরকে অনেক বেশি সতর্ক ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন। তবে তা করতে হবে বন্ধুত্বসুলভ মনোভঙ্গি নিয়ে। একটি কন্যাশিশুর মানসিক পরিবর্তনের সময়টা, যাকে আমরা বয়োঃসন্ধি বলছি, সে সময়টাতে সে নেশার জগতে গিয়ে যেন মানসিক প্রশান্তি না খুঁজে। অথবা শুধুমাত্র শখের বশে সে যেন নেশা নামক বস্তুটির সাথে পরিচিত হতে না পারে, তার দায়িত্ব নিতে হবে আমাদের সকলকেই। পরবর্তীতে কন্যাটি যেন নেশাকে আপন ভাবতে গিয়ে বাবা-মা-কে হত্যার মতো জঘন্যতম ঘটনা না ঘটায়। অপরাধের সঙ্গে  জড়িয়ে না পড়ে। আজ তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালনের অবহেলার সুযোগে একপা দু’পা করে বিপথে গিয়েই কন্যাটি জড়িয়ে পড়ছে ভয়াবহ বিপদে। নষ্ট হচ্ছে সম্ভাবনাময় জীবন। কতই বা বয়স ‘সেই কন্যাটির’? খবরের কাগজে পাওয়া তথ্যমতে, ঐশী নামক ‘সেই কন্যাটির’ বয়স মাত্র ১৭ বছর। সামনে পড়ে থাকা সারাটি জীবনে সুস্থভাবে বাঁচতে হলে তাকে পাড়ি দিতে হবে অনেক পথ। তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে অন্ধকার জীবন থেকে। যে জীবনে পড়ে স্বাভাবিক চিন্তা থেকে সে বেরিয়ে এসেছে অনেক আগেই। সবচেয়ে বড় বন্ধু বলে ভেবে নিয়েছে নেশাকে। এমন অনেক ঘটনা হয়তো ঘটে যাচ্ছে আনাচে কানাচে, যেমন করে ছোট্ট কন্যাশিশু ছোট্ট ছোট্ট পা ফেলে জড়িয়ে যাচ্ছে অপরাধের সাথে, শুধুমাত্র মোহে পড়ে। অনেক ঘটনা হয়তো আমরা পত্রিকার পাতায় দেখতে পাচ্ছি না, থেকে যাচ্ছে অন্তরালেই। প্রত্যেকেই যদি নিজের পরিবারের শিশুকন্যাটির দিকে তাকাই, বন্ধুর মতো তার পাশে থাকি, স্বপ্ন দেখাই এগিয়ে যাওয়ার, তার সুখ-দুঃখের ভাগ নেই, তাহলে কি নেশা এতটাই শক্তিশালী যে তার করাল গ্রাস থেকে আমরা ছোট্ট কন্যাটিতে রক্ষা করতে পারব না? ১৯ আগস্ট, ২০১৩ প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না মেলাতে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে ইয়াবাতে আসক্ত শিশুদের শনাক্ত করার কাজটি শুরু করা যাচ্ছে না। তাই শুধুমাত্র পরিবার নয়, সমাজ-রাষ্ট্র ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সবার একই সাথে বিষয়টির সাথে যুক্ত হওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন নিষ্পাপ কন্যাশিশুর ভবিষ্যতের পথটাকে মসৃণ করা, যার হাত ধরেই দেখতে পাবো আগামী পৃথিবীর স্বপ্ন। লেখক: সোমা দেব, প্রভাষক, কমিউনিকেশন এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ ডিপার্টমেন্ট, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ।