ঢাকা, বুধবার ২০, নভেম্বর ২০২৪ ১১:২২:২৮ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
পদত্যাগ করেছেন হাইকোর্টের তিন বিচারপতি রাজধানীতে তিনদিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্টের কারণে সবকিছু বদলে যাবে না ডেঙ্গুরোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, রক্ষা পাবেন যেভাবে শুষ্ক মৌসুমেও পানিবন্দি ৩ উপজেলায় লাখো পরিবার বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনে নতুন চেয়ারম্যান সায়েমা শাহীন

ফুলটির নাম কৃষ্ণ কিরীট

রুনা লেইস | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ০৮:১৬ পিএম, ২৯ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার

আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমাদের এখনকার ছোট বাচ্চাদের মত বাইরে ঘোরাফেরার ব্যাপারে অতোশত নিষেধাজ্ঞা ছিল না। বাবা মায়েরা সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখার মত পরিবেশ তখনো তৈরী হয়নি। আর তাছাড়াও বেশ কয়েকজন বড় ভাইবোন থাকলে যা হয়, ছোটদের উপর নজরদারী এবং খবরদারীর দায় দায়িত্ব তখন যেন তাদের উপরেই ন্যাস্ত থাকে।


আমার বড় তিন বোন, তারা আমাকে আদর করার পাশাপাশি নানা কৌশলে কিছু কাজকর্মও করিয়ে নিতো, আর সেসবের জন্য হয়তো বাড়ির বাইরে যাবার দরকার তাই আমিও মহা আনন্দে করতাম। তখনকার দিন হলো, "নাই টেলিফোন, নাইরে পিওন" টাইপ। ইন্টারনেট আর এন্ড্রোয়েড ফোনের কথা তো ভাবনাতেই নেই, অকল্পনীয় ব্যাপার। কাজেই বন্ধুর কাছে মনের খবর নাই হোক চিঠি বা বইপত্র, খাবার দাবারসহ যাবতীয় কিছু আদানপ্রদান করার জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক পরিবাহক ছোট ভাইবোন। আমাদের বাসায় সেজন্য আমার প্রায় দিনই তাদের বিশেষ কিছু গুরুত্ববহ দায়িত্ব পালন করতে হতো।


বাইরে বের হলে নিজেকে বেশ বড়সড় আর গুরুত্বপূর্ণ মনেহতো এটাই আমার সবচেয়ে আনন্দের। যদিও সঙ্গী হিসেবে বাড়ির চার পাঁচজন কাজের লোকের কেউ না কেউ বডিগার্ড থাকতো, তাতে আমার কোনো আনন্দের ঘাটতি হতো না, বরং তাদের তখন নানা হুকুম করার মধ্যে বেশ একটা রাজকীয় ব্যাপার-স্যাপার ছিল। রাস্তায় কতকিছুই দেখার আছে, বিশেষ করে কোন গাছে কি ফুল ফুটলো, কোথায় ফড়িং, প্রজাপতি বসলো, কি পাখি ডাকলো, ক`টা গাড়ি, রিকসা, সাইকেল গেল এসবই আমার আকর্ষণের বিষয়। মানুষের মধ্যে বাদামওয়ালা, আইসক্রীমওয়ালা কিংবা চানাচুরওয়ালা গেল কি না?


আমার মেজবোনের বান্ধবীদের মধ্যে জেসমীন আপা, রিবন আপা, সিপি মাসী, গোপাদি, চমন আপা, আফরোজা আপা, জয়শ্রীদিসহ আরো কত জনের বাসায় যে যেতে হতো চিঠি কিংবা বই, আম, জাম, বরই, সন্দেশ, তেঁতুল,কামরাঙা এসবের জন্য এখন সবকথা মনেও নেই। বোনের বান্ধবীরা ভীষণ আদরও করতেন আমাকে। গেলেই কত কথা জিজ্ঞেস করতেন, অনেক কিছু খাওয়াতেন। আর আমি নাকি ছোটবেলায় গল্প করতে খুব উস্তাদ ছিলাম। বকবক করতে কোনো বিরক্তি ছিল না। অনেক সময় বাসার অন্যরাও বড়ছোট নির্বিশেষে আমার সঙ্গে গল্প জুড়ে দিতেন। আমিও মহাআনন্দে গল্পটল্প করে নাস্তা খেয়ে বেড়িয়ে টেরিয়ে বাসায় ফিরতাম।


এমনি একদিনের ঘটনা, মেজবোনের এক বান্ধবীর বাসায় গেছি, কার বাসা নাম বা চেহারা কিচ্ছু মনে নেই। আমি তখন স্কুলেও পড়িনা, মনে হয় চার বা সাড়ে চার বছর বয়স হবে আমার। যে বাসাটায় গেছি সেটা রুপু ভাইদের বাসা পার হয়ে আরেকটু সামনে ডানদিকে মোড়ের কাছে, পরে যেখানে আব্দু মিয়া স্যারের বাসা ছিল। ওই বাসাটায় বড় একটা ঝকঝকে উঠোন ছিল মনে আছে। দুদিকে টানা লম্বা টিনের ঘর, সম্ভবত দুটো পরিবার থাকতো। আমি যার কাছে গেছি তারা মুসলিম, কিন্তু অন্য পরিবারটা হিন্দু।


আমি যথারীতি নির্ধারিত জায়গায় চিঠি পৌঁছে দিয়ে জবাবের অপেক্ষা করে উঠোনে ফুলপাখি দেখতে লেগে গেছি।


তখন দেখি বাগানের কোনার দিকে অদ্ভুত সুন্দর একটা বিশাল আকৃতির ফুল। এরকম চমৎকার ফুল এর আগে বা পরে আর কখনোই দেখিনি। ফুলটা থোকা থোকা গাঢ় মেরুন রঙের, প্রায় এক দেড়হাত লম্বা। আমি মুগ্ধ হয়ে সেই ফুল দেখছি তো দেখছিই। তখন একজন পিছন থেকে আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন। ঘুরে দেখি একজন শাড়ি পরা ছিপছিপে তরুণী। উনার শ্যামলা চেহারাটাও সেই ফুলের মত আজো আমার চোখে ভেসে ওঠে। উনি কে ছিলেন আমি জানিনা। আমার নাম বলতে উনি আমাকে চিনলেন, বললেন ডাক্তার সাহেবের মেয়ে তুমি? তারপর অনেক কথা বললেন, আমাকে সন্দেশ বা নারকেলের নাড়ু টারু কিছু একটা এনে দিলেন ঘর থেকে।


আমি তখন উনাকে জিজ্ঞেস করলাম এই ফুলের নাম কি? উনি বললেন সাবিত্রী ফুল। আমি উনাকে ফুলটা আমাকে দিয়ে দিতে বললাম। কে জানে উনি কিছু মনে করলেন কিনা, বললেন এই ফুল তো পূজার জন্য লাগে, ওটা ছিঁড়তে মানা।


আমি তখন আর কিছু বললাম না, শুধু মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম।


ততক্ষণে আমার বোনের বান্ধবীর চিঠির জবাব লেখা শেষ, অন্য পাশের ঘর থেকে বেরিয়ে আমাকে ডাকলেন।


আমি তার কাছ থেকে চিঠি নিয়ে যখন চলে আসছিলাম তখন আবার ওই হিন্দু দিদিটা আমাকে ডাকলেন। তারপর আমাকে ওই বিশাল বড় ফুলটা থেকে একটা বেশ বড়সড় থোকা ছিঁড়ে আমাকে দিলেন। আমি যে কি ভীষণ খুশি হয়েছিলাম সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না, কারণ অন্যকিছু মনে না থাকলেও ফুল এবং দিদিটার চেহারা আমার সিনেমার দৃশ্যের মত চোখে লেগে আছে।


সেই সাবিত্রী ফুল মনে মনে আমি অনেক খুঁজেছি, কিন্তু কখনো কোথাও দেখিনি।


মাত্র ক`দিন আগে নেটে ফুলের ছবি দেখতে দেখতে এই ফুল খুঁজে পেলাম, যার নাম সাবিত্রী ফুল নয় কৃষ্ণ কিরীট। সাথে পেলাম আরো অনেক নাম। যেমন, Krishna Kireedam, The Crown of Lord Krishna, Pagoda Flower, Hanuman Kireetam, Clerodendrum paniculatum.