ঢাকা, মঙ্গলবার ২৬, নভেম্বর ২০২৪ ১৪:৫০:৫৭ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
কুমিল্লায় ট্রেনের ধাক্কায় নারীসহ ৫ অটোরিকশা যাত্রী নিহত ভারত থেকে আলু ও পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ, বেড়েছে দাম গ্রীসে অভিবাসীদের নৌকাডুবি: ৬ শিশুর মরদেহ উদ্ধার ১৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কাঁপছে নীলফামারী বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ, বন্দরগুলোতে সতর্ক সংকেত খালেদা জিয়াকে উমরাহ পালনের আমন্ত্রণ জানাল সৌদি আরব পঞ্চগড়ে জেঁকে বসেছে শীত, তাপমাত্রা নামল ১৩ ডিগ্রিতে

বইমেলায় থাকতে না পারার আক্ষেপ তবু যায় না : মনিজা রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত : ১২:২৫ পিএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ বৃহস্পতিবার

মনিজা রহমান

মনিজা রহমান

মনিজা রহমান সাহিত্যিক, সাংবাদিক। এখন বসবাস করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। বাংলাদেশ ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত কলামগুলো নিয়ে সাজানো হয়েছে তার এবারের গ্রন্থ ‘ঝর্ণার জলের কারাগার’। এটি তার দশম গ্রন্থ ।

তিনি বলেন, স্কুলজীবন থেকে লেখালেখি করলেও প্রথম বই বের করার সাহস দিয়েছিল জাগৃতি প্রকাশনীর কর্ণধার ও আমার সহপাঠী প্রয়াত ফয়সল আরেফীন দীপন। আমার বেশিরভাগ বই ওর প্রকাশনা সংস্থা থেকে বের হয়েছে। কিন্তু ওর অকাল-নির্মম মৃত্যু এলোমেলো করে দেয় জাগৃতিকে। তবে খুশীর খবর হলো দীপনের স্ত্রী রাজিয়া রহমান জলি হাল ধরেছেন তার স্বামীর প্রকাশনা সংস্থার। এক বছর বিরতির পরে জাগৃতি প্রকাশনী থেকে এবার আমার এই বই বের হলো। ফেব্রুয়ারি মাস এলে ঘুমে-জাগরণে সারাক্ষণ দেখতে পাই বইমেলাকে। টিএসসি মোড় থেকে বাংলা একাডেমি পর্যন্ত যাওয়ার পথের সমস্ত ধূলিকনার গন্ধ এসে নাকে লাগে। আমের মুকুল পড়ে থাকে রাস্তায়। কখনও সেই ধুলায় পানি ছিটানো হয়। মাঝে মাঝে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভিতর দিয়ে নাগকেশরের তলা দিয়েও যাওয়া হত। ফেব্রুয়ারি বইমেলা শব্দটা শুনলেই মনের আনাচে কানাচে সুখের আবেশ ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকায় জন্ম ও বেড়ে ওঠার কারণে স্কুলজীবন থেকে নিয়মিত যেতাম বইমেলায়। বাংলাদেশের লেখকদের কিশোর সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি সেখানেই।

সৈয়দ নাসির আলীর ‘লেবুমামার সপ্তকান্ড’, শাহরিয়ার কবিরের ‘নিকোলাস রোজারিওর ছেলেরা’ রাহাত খানের ‘দিলুর গল্প’ কিংবা আলী ইমামের দুর্ধর্ষ পাঁচ সিরিজের বই কিনতাম মেলা থেকে। আর সেবা প্রকাশনীর স্টল ছিল সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। আমাদের শৈশবে ইন্টারনেট-কম্পিউটার ছিল না। বই পড়াই ছিল অবসর কাটানোর সেরা উপায়। তাই সারাবছর অপেক্ষা করে থাকতাম এই সময়টার জন্য। নিউইয়র্কে এলাম ২০১৪ সালের পহেলা মার্চ। পুরো ফেব্রুয়ারি বইমেলার সঙ্গে কাটিয়ে এলাম। শুরুতে বন্ধু-স্বজনহীন শীতার্ত শহরে খুব শুষ্ক থাকতো মন। সময়ের সাথে সাথে অনেক বন্ধু-স্বজন পেলাম। এখানকার আবহাওয়ার সাথে নিজেকে মিলিয়ে নিতে পারলাম। নিউইয়র্কে সাহিত্য চর্চা অত্যন্ত বেগবান। এই শহরে অনেক প্রতিষ্ঠিত লেখক ও কবি বাস করেন। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি শহীদ কাদরী দীর্ঘদিন নিউইয়র্কে বসবাস করেছেন।

উনি নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও সবার হূদয়ে কবিতার প্রতি, মাতৃভাষার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা সৃষ্টি করে গেছেন। তার দেখানো পথে হেঁটে চলি আমরা। নিউইয়র্কের আবহাওয়ার নানা রূপ, পৃথিবীর নানা দেশ-জাতি-সংস্কৃতির মানুষের বসবাস যে কোনো লেখককে যেমন লেখার অনুপ্রেরণা জোগায়, তেমনি দেখার চোখ খুলে দেয়। অত বড় পরিসরে না হলেও নিউইয়র্কে মুক্তধারা আয়োজিত বইমেলা, আমার মনের বিষণ্নতা কিছুটা দূর করল। আনন্দের ব্যাপার হলো জ্যাকসন হাইটসের যে রাস্তায় আমার বাসা, সেখানে এক স্কুলে নিউইয়র্ক বইমেলার আয়োজন হয়ে থাকে। মনে হয় নিজের আঙ্গিনায় হচ্ছে বইমেলা। ভিনদেশে আর কোনো আয়োজনে বাঙালি এত স্বত্বঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয় না। বইমেলার তিনটা দিন আমার কাছে কেটে যায় এক ঘোরের মধ্যে। দিনের বেলা যাই। বিকালে যাই। সন্ধ্যায় যাই। বাসায় ফিরে দুই ছেলেকে রাতের খাবার খাইয়ে আবার যাই। সমাপনী ঘোষণার পরে বইমেলা থেকে, অন্ধকার নির্জন রাস্তায় দুই ছেলের হাত ধরে বাসায় ফিরি। অদ্ভুত স্বর্গীয় আনন্দ কাজ করে মনে। বাংলা একাডেমির বইমেলায় যেতে না পারার আক্ষেপ তবু যায় না।