ঢাকা, সোমবার ১৪, এপ্রিল ২০২৫ ১৬:০২:০১ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
উৎসবের আমেজে শেষ হলো ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ ১৪ ঘণ্টা পর উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার রেলরুট সচল জাতীয় সংগীতের মধ্যদিয়ে শেষ হলো বটমূলের বর্ষবরণ বর্ষবরণে ঢাবি এলাকায় উৎসবের ঢেউ, বর্ণিল শোভাযাত্রা শুরু রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু আজ পহেলা বৈশাখ, স্বাগত ১৪৩২

বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেদা খানম: ‘চট্টগ্রামের অগ্নিকন্যা`

অনু সরকার | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৬:৫৭ পিএম, ১৩ মার্চ ২০২১ শনিবার

বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেদা ‘চট্টগ্রামের অগ্নিকন্যা`

বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেদা ‘চট্টগ্রামের অগ্নিকন্যা`

শরীয়তপুরের পালং থানায় সফল অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেদা খানম৷ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে অস্ত্র পৌঁছে দিতেন বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেদা খানম৷

তিনি বলেন, ‘আমাদের বাড়ি থেকেই পালং থানায় অভিযান চালানো হয়৷ আমরা দেখলাম, পালং থানা দখল করতে না পারলে শরীয়তপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের চলাফেরা ও কর্মকাণ্ড খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে৷ কারণ পাকিস্তানি সৈন্যরা যখন মাদারীপুরে থাকতো, তখন স্পিড বোটে করে তাদের শরীয়তপুর আসতে মাত্র ১০/১৫ মিনিট লাগতো৷ এছাড়া পালং থানায় পুলিশ ও সেনা সদস্যরা ছিলই।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ অবস্থায় স্টুয়ার্ড মুজিবের নেতৃত্বে আমরা পালং থানা দখল করার পরিকল্পনা করলাম৷ তখন আমাদের বাসাতে বড় বড় চার ঘর ভর্তি অনেক মুক্তিযোদ্ধা। বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ছিল৷ আরো কিছু সামনের সারির মুক্তিযোদ্ধা এসে হাজির হলেন৷ আমি মেয়েদের নিয়ে বৈঠক করলাম৷ পালং থানা অভিযানে আমি, আমার বোন এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মেয়েদের কয়েকজন অংশ নিলাম৷’

তিনি বলেন, ‘তখন অনেক বর্ষা৷ নৌকায় করে আমাদের সেই অভিযানে যেতে হয়েছিল৷ আমরা পরিকল্পনা মাফিক সফলভাবে পালং থানায় অভিযান চালিয়েছিলাম৷ আমাদের দখলে চলে আসে পালং থানা৷ কিন্তু এরপরই আমাদের বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি থাকার কথাটি জানাজানি হয়ে গেল৷

খালেদা খানম বলেন, ‘একদিন পাক সেনারা আমাদের বাড়ি আক্রমণ করতে আসে৷ তারা লঞ্চে করে আমাদের বাড়ির বেশ কাছেই চলে এসেছিল৷ কিন্তু পথে একটি খাল কাটা ছিল৷ সেই খাল পেড়িয়ে পাকসেনাদের আসতে দেরি হয়েছিল৷ ঠিক এসময়ই একটি ছোট্ট ছেলে চিৎকার করে সেনাদের আসার খবর জানিয়ে দেয়৷ ফলে সেদিন আমরা দ্রুত বাড়ি থেকে পালিয়ে প্রাণ বাঁচাই৷'

তিনি জানান স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন নানা ঘটনা৷ খালেদা খানম বলেন, ‘আমাদের বাড়ি মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি উঠে যাওয়ার পর দোমসার, দাসাত্তাসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘাঁটি করা হয়৷ কিন্তু একটি জায়গায় খুব বেশি দিন ঘাঁটি রাখা যেতো না৷ আমি প্রায়ই নৌকাতে অস্ত্র বোঝাই করে নিয়ে যেতাম। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দিতাম৷ মুক্তিযোদ্ধাদের বলতাম, আপনারা অস্ত্র বহন না করে খালি হাতে যান৷ আমি আপনাদের জায়গামতো অস্ত্র পৌঁছে দেবো৷ তা নাহলে যোদ্ধারা পথে ধরা পড়ে যেতেন৷ কিন্তু আমি যখন নৌকায় করে অস্ত্র নিয়ে যেতাম, তখনও রাজাকার এবং পাক সৈন্যরা আমাকে নৌকা নিয়ে ঘাটে ডাকতো৷ আমি তাদের ফাঁকি দেওয়ার জন্য মাঝে মাঝে আমার চাচাতো বোনকে নতুন বউ সাজিয়ে নৌকায় নিয়ে যেতাম৷ একদিন পাক সেনারা আমাকে ডাক দেয়৷ কিন্তু আমি জানি, ধরা পড়লে নৌকাভর্তি অস্ত্র তাদের হাতে চলে যাবে৷ আবার আমি সব মুক্তিযোদ্ধার নাম-ঠিকানা জানি-সেগুলো ওরা পেয়ে যেতে পারে৷ ফলে একবার অস্ত্র পানিতে ফেলে দেওয়ার কথা ভাবি৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত যেন অলৌকিকভাবেই বেঁচে যাই৷ আমাদের মাঝি বেশ চালাক ছিল৷ সে পাক সেনাদের একটি বাড়ি দেখিয়ে বলল, ওই বাড়িতে যাচ্ছি৷ এরপর আমাদের ওরা ছেড়ে দিয়েছিল৷'

খালেদা খানম এবং তার সহকর্মীরা বিশ্বাস করতেন, দেশ স্বাধীন করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিতে হবে৷ তাই খালেদা গুরুত্বের সাথে স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার কাজ করতেন৷ এছাড়া গ্রামে গ্রামে ঘুরে উঠান বৈঠক করার সময় তিনি সঙ্গে কাগজ আর কলম রাখতেন৷ যুদ্ধে অংশগ্রহণে আগ্রহী নারীদের নাম-ঠিকানা লিখে নিতেন৷ পরে তাদের বিভিন্ন ঘাঁটিতে প্রশিক্ষণ দিতেন৷

মুক্তিযুদ্ধে বাংলার নারীদের ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরে খালেদা খানম বলেন, আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের নারীরা যদি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এতোটা সাহায্য না করতো তাহলে এতো কম সময়ে দেশ স্বাধীন হওয়া সম্ভব ছিল না৷

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শরীয়তপুর থেকে চট্টগ্রাম ফিরে যান সংগ্রামী নারী খালেদা খানম৷ আবারও লেখাপড়া শুরু করেন। পাশাপাশি দেশগড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন৷ তিনি চট্টগ্রাম জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রথম সাধারণ সম্পাদিকা নির্বাচিত হন৷

খালেদা খানম স্কুল জীবন থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে এতোটাই সক্রিয় এবং সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন যে, সেখানকার মানুষ তাকে ‘চট্টগ্রামের অগ্নিকন্যা' বলে ডাকতো৷ পরে ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে রাজধানী ঢাকায় এসে তিনি কেন্দ্রে দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷ এছাড়া প্রচার সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবেও দীর্ঘদিন কাজ করেছেন এই সাহসী নেত্রী৷

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদ সদস্য ছিলেন খালেদা খানম৷ এছাড়া লালমাটিয়া কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেছেন এবং বিভাগীয় প্রধান ছিলেন তিনি৷ ২০০৯ সালে শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়েছেন৷ তবে পেশাগত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিলেও দেশ গড়ার কাজে এখনও সামনের সারিতে রয়েছেন৷

সূত্র : ডয়চে ভেলে