ঢাকা, শনিবার ১৩, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:১৫:৩২ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
হাদির সর্বোত্তম চিকিৎসার আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা বিশ্বে প্রতি ২০ নারীর মধ্যে একজন স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত ভোটে প্রার্থী হতে পারবেন না পলাতক ব্যক্তিরা ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন তারেক রহমান হাদির পরিবারের পাশে ডা. জুবাইদা রহমান

বীর মুক্তিযোদ্ধা মেহেরুন্নেসা মেরীর একাত্তরের স্মৃতিচারণ

অনু সরকার | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৫:৫৬ পিএম, ৩ মার্চ ২০২১ বুধবার

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

বীর মুক্তিযোদ্ধা মেহেরুন্নেসা; ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধচলাকালে বয়সে তরুণী। যুদ্ধ চলাকালে অস্ত্র সংরক্ষণ, অস্ত্র পরিবহণ ও আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দানের কাজ করেছেন মেরী৷ আজও পেশার পাশাপাশি নিরলসভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন সাংগঠনিক এবং লেখালেখির কাজ৷

১৯৫৫ সালের ১২ নভেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানায় জন্ম গ্রহণ করেন মেহেরুন্নেসা মেরী৷ তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোকছেদ আলী উজির এবং মা রহিমা বেগম৷

১৯৭০ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করে কলেজে ভর্তি হন মেহেরুন্নেসা৷ এর কিছুদিন পরেই অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ দেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ৷

মুক্তিযুদ্ধে নিজের অংশগ্রহণের পটভূমি ও নিজের কাজ সম্পর্কে স্সৃতিচারণ করেছেন তিনি। মেরী বলেন, ‘আমার আব্বা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন৷ আমাদের বাড়িতেই মুক্তিযোদ্ধাদের শিবির ছিল৷ তখন আমাদের গ্রামের আরো ছেলে-মেয়েরাও মুক্তিযুদ্ধের জন্য কাজ করত৷ আমিও তাদের সাথে মুক্তিযুদ্ধের কাজে অংশ নেই৷ রাতইল বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন নূরুদ্দোহার কাছে আমরা নকল অস্ত্র দিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম৷ ওই অঞ্চলে মূলত ভাটিয়াপাড়া রণাঙ্গনে যুদ্ধ হতো৷ সেই যুদ্ধের সময় আমরা কাজ করেছি৷’

তিনি বলেন, ‘আমরা মেয়েরা সাধারণত যুদ্ধের মাঠে থাকতাম না৷ বরং আহত মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা চিকিৎসা সেবা দিতাম এবং সেবা শুশ্রূষা করতাম৷ ডা. সাইদুল ইসলামের অধীনে একটি দল ছিল৷ সেই দলের সদস্য হিসেবে আমরা চিকিৎসা সেবা প্রদান করতাম৷’

মেহেরুন্নেসা মেরী আরও বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা যে অস্ত্রগুলো নিতো এবং পরে আবার ফেরত দিতো, সেগুলোর বর্ণনা আমি খাতায় লিখে হিসাব রাখতাম এবং সংরক্ষণ করতাম৷ কতগুলো অস্ত্র হারালো কিংবা কতগুলো যোগ হলো তা লিখে রাখতাম। অনেক সময় পাক সেনাদের পরাজিত করে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের অস্ত্রগুলো নিয়ে আসতেন সেগুলোরও হিসাব রাখতাম আমি৷'

মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় কৌশলে কীভাবে গোলা ও অস্ত্র পৌঁছে দিতেন মেহেরুন্নেসা এবং তার সঙ্গিরা, সে সম্পর্কে তিনি জানান।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘লঞ্চে হামলা চালানো হতো যেই গোলা দিয়ে, সেগুলো আমাদের কয়েকজনকে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে নিয়ে যেতে হতো৷ বালতির ভেতরে সেই গোলাগুলি সাজিয়ে দেওয়া হতো৷ তার উপরে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হতো৷ তখন তো মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক অজ্ঞাত শত্রু ছিল৷ সেসময় তাদের ‘ক্ষুধারু' বলা হতো৷ তো এই ক্ষুধারুরা যেন বুঝতে না পারে সেজন্য বালতিতে কাপড় দিয়ে তার উপর সাবান রেখে দিতাম৷ যেন মনে হয়, আমরা নদীর ঘাটে কাপড় কাঁচতে যাচ্ছি৷ আর সাংকেতিক কথায় বলে দেওয়া হতো, অমুক ঘাটে অমুক রঙের জামা গায়ে মাঝি থাকবে তার কাছে গোলাগুলো পৌঁছে দিতে হবে৷ আসলে মাঝি বলতে মুক্তিযোদ্ধাদের বোঝানো হতো৷ আমরা তাদের কাছে অস্ত্র তুলে দিয়ে ফিরে আসতাম৷'

মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস বাংলাদেশেই অবস্থান করে এসব কাজ করেছেন বীর সাহসী নারী মেহেরুন্নেসা মেরী৷ এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক তার বাবা গ্রামের বড় বড় মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য তাদের বাড়িতেই এনে রাখতেন৷ তবে পাকিস্তানের সেনারা যখন গ্রামের দিকে কিংবা ভেতরে এগিয়ে আসতো তখন মেয়েদের নৌকায় করে পার করে নদীর ওপারে রেখে আসা হতো৷ আবার পরিস্থিতি বুঝে তারা বাড়িতে ফিরে যুদ্ধের কাজ করতেন বলে জানান মেহেরুন্নেসা৷

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবারও লেখাপড়া শুরু করেন এই তরুণী মুক্তিযোদ্ধা৷ উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে স্নাতক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন তিনি৷ পরে আবার রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে এমএ করেন মেহেরুন্নেসা৷ শিক্ষাজীবন শেষে ব্যাংকিং পেশায় যোগ দেন৷

পেশার পাশাপাশি সামাজিক ও সাংগঠনিক কাজেও সক্রিয় তিনি৷ একইসাথে চালিয়ে যাচ্ছেন লেখালেখির কাজ৷
তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১২টি৷ এগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও নারী মুক্তিযোদ্ধা' শিরোনামে একটি বই৷ নারী মুক্তিযোদ্ধাদের ঘটনাবলী সমৃদ্ধ এই বইটি দুই খণ্ডে প্রকাশিত৷

এ বইটি লেখার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর যখন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গঠিত হলো, তখন আমি এই সংসদের নারীবিষয়ক সম্পাদক হই৷ এরপর কয়েক দফায় আমি নির্বাচিত, আবার কখনও মনোনীত নারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি৷ ফলে সবসময় আমি মুক্তিযোদ্ধাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত৷ তাছাড়া বিভিন্ন সময় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সম্মেলনে নারী মুক্তিযোদ্ধারা আসতেন৷ এছাড়া আমিও নিজে বিভিন্ন জেলায় গিয়ে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনী সংগ্রহ করে এই বইটি লিখেছি৷'

কৃতজ্ঞতা : ডয়চে ভেলে।