ঢাকা, রবিবার ২৪, নভেম্বর ২০২৪ ৪:৪৭:১৭ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
সাময়িক বন্ধের পর খুললো যমুনা ফিউচার পার্ক ডেঙ্গুতে আরও ১০ জনের প্রাণ গেল ডেঙ্গুতে এ বছরেই ৫১ শিশুর প্রাণহানি মাকে হত্যা করে থানায় হাজির ছেলে আমদানির সাড়ে তিনগুণ দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে আলু ঢাকায় আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল সাতক্ষীরায় সাফজয়ী তিন নারী ফুটবলারের গণসংবর্ধনা

বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ : যেখানে শহীদরা জেগে থাকে

আসমা আক্তার | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৪:০১ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ শুক্রবার

১৯৭১ সালের এই দিনে বিজয়ের মাত্র একদিন আগে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী। বাঙালি চিকিৎসক, সাংবাদিক, প্রকৌশলী, শিক্ষকদের নৃশংসভাবে হত্যা করে রায়েরবাজার বদ্ধভূমিতে ফেলে দেয় তারা। বুদ্ধিজীবীদের চিহ্নিত করতে এবং ধরিয়ে দিতে সহায়তা করে এদেশীয় দোসর রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনী। 

দীর্ঘ নয়মাস রক্ত ঝড়িয়ে পাকিস্তানি বাহিনী যখন বুঝতে পারে বীর বাঙ্গালির কাছে আত্মসমর্পণ শুধু মাত্র সময়ের ব্যাপার। তখনি ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড ঘটায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা। রায়ের বাজার বদ্ধভূমিতে সূর্যসন্তানদের হত্যা করা হয় নৃসংসভাবে।

বাঙ্গালি জাতিকে মেধাহীন করার চক্রান্তের অংশ হিসেবেই ৭১ এর ১৪ ডিসেম্বর এই জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটায় পাক বাহিনী। পরাজয় আসন্ন জেনে বেছে বেছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের গুম ও হত্যা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের এত বছর পরেও সে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। আক্ষেপ শহীদদের রেখে যাওয়া অনেক পরিকল্পনা ও লেখনি এখনো কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধে এত বছর পরেও শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।

তারপরও শান্তনা,  মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে  শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নির্মান করা হয় স্বাধীনতার বহু পরে রাজধানীর রায়েরবাজার এলাকায় বদ্ধভূমিতে। এই স্মৃতিসৌধটির নকশা করেছেন স্থপতি ফরিদ ইউ আহমেদ ও জামি আল শাফি। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সন্তানদের সংগঠন প্রজন্ম ৭১-এর সহায়তায় রায়েরবাজারে স্মরণ তৈরির প্রাথমিক প্রস্তাবনা আনা হয়েছিল। যারা ১৯৯১ সালে এর একটি অস্থায়ী ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে।

বুদ্ধিজীবী গণহত্যার ইতিহাস :
১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পুরো সময়টাতেই, পাকিস্তানী সৈন্যরা এবং তাদের স্থানীয় দোসররা, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কথিত ইসলামী সেনাদল গ্রুপ আল-বদর ও আল-শামস বাহিনী শিক্ষক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, কবি ও লেখকদের ক্রমে হত্যা করে। ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং মুক্তিবাহিনী যৌথ দলের কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের মাত্র দুই দিন আগে, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সর্বোচ্চ সংখ্যক হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়।

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতে অধ্যাপক, সাংবাদিক, ডাক্তার, শিল্পী, প্রকৌশলী, লেখকসহ পূর্ব পাকিস্তানের ২০০ জন বুদ্ধিজীবীদের ঢাকায় একএিত করা হয়েছিল। মিরপুর, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া, রাজারবাগ এবং শহরের বিভিন্ন স্থানের নির্যাতন সেলে চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদের রায়েরবাজার এবং মিরপুরের মধ্যে সার্বজনীনভাবে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ১৪ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে বাংলাদেশে শোক প্রকাশ করা হয়।

এমনকি যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি পর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সশস্ত্র সৈন্য ও তাদের সহযোগীদের কাছ থেকে শত্রুতামূলক আগ্নি রিপোর্ট পেয়েছিল। এই ধরনের ঘটনায়, ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা জহির রায়হান মিরপুরের সশস্ত্র বিহারীদের অভিযোগ মিরপুরে হত্যা করা হয়।

নিহত বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যা আনুমানিক এমন,  শিক্ষাবিদ ৯৯১, সাংবাদিক ১৩, চিকিত্সক ৪৯, আইনজীবী ৪২, অন্যান্য (সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পী এবং প্রকৌশলী) ১৬ জন।

মার্চ ২৫ থেকে ১৬ ডিসেম্বর-এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন অংশে যে সকল বুদ্ধিজীবী নিহত হয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, গোবিন্দ চন্দ্র দেব (ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের অধ্যাপক, দার্শনিক), মুনীর চৌধুরী (ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সাহিত্যিক, নাট্যকার), মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী (সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক), আনোয়ার পাশা (সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক), ডঃ মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী (হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ), ডাঃ আলীম চৌধুরী (চক্ষুরোগের), শহীদুল্লাহ কায়সার (সাংবাদিক), নিজামউদ্দিন আহমেদ (রিপোর্টার), সেলিনা পারভীন (সাংবাদিক), আলতাফ মাহমুদ (গীতিকার ও সুরকার), ডঃ হাবিবুর রহমান (গণিত অধ্যাপক, রাশিয়া), সুখরঞ্জন সমাদ্দার (সংস্কৃত অধ্যাপক, রাশিয়া), মীর আব্দুল কলিম (মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক, রাবি), ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত (রাজনীতিবিদ), রনাদা প্রসাদ সাহা (মানবপ্রেমিক), লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোয়াজ্জেম হোসেন (প্রাক্তন সৈনিক), মামুন মাহমুদ (পুলিশ অফিসার ) এবং আরও অনেকে।

নকশা এবং স্মৃতিসৌধ নির্মাণ : 
১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ সরকার এই বর্বরোচিত ঘটনার জায়গাগুলোতে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়।গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগের মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে "বদ্ধভূমি স্মৃতিসৌধ” নকশা জন্য একটি জাতীয় স্থাপত্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। ২২টি প্রস্তাবনার মধ্যে স্থপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও স্থপতি জামী-আল-সাফী র প্রস্তাবিত নকশা নির্ণায়ক-সভা কর্তৃক নির্বাচিত হয়। গণপূর্ত বিভাগ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছিল এবং এর সমাপ্তিতে প্রায় তিন বছর (১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯) লেগেছিল। ১৫.২৪মি গুনন ১৫.২৪মি বর্গক্ষেত্রের একটি গ্রিড সমগ্র ৩.৫১ একর এলাকাটিকে বিভক্ত করেছে। প্রধান প্ল্যাটফর্মটি রাস্তায় উপরে ২.৪৪মি পর্যন্ত উত্থাপিত হয়েছে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের নকশা : 
স্মৃতিসৌধের যেখানে মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায় সেখানে রায়েরবাজারের মূল ইটভাটা ১৭.৬৮মি পুরু, ০.৯১মি উচু এবং ১১৫.৮২মি দীর্ঘ বাঁকা ইটের প্রাচীর। প্রাচীর নিজেই দুঃখ ও দুঃখের গভীরতা প্রদর্শক, যার দুই প্রান্তেই নষ্ট হয়ে গেছে। দেয়ালের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে এ ৬.১০মি গুনন ৬.১০মি বর্গাকার জানালা দিয়ে দর্শকরা আকাশ দেখতে পারে, এছাড়াও প্রকাণ্ড প্রাচীরের স্কেল নিচের দিকে গেছে। বাঁকা প্রাচীরের সামনে পানির মধ্যে অবস্থিত একটি কালো গ্রানাইট স্তম্ভ যা বিষাদের প্রতিনিধিত্ব করে।