ঢাকা, রবিবার ২৪, নভেম্বর ২০২৪ ৯:২৮:৩৪ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
সাময়িক বন্ধের পর খুললো যমুনা ফিউচার পার্ক ডেঙ্গুতে আরও ১০ জনের প্রাণ গেল ডেঙ্গুতে এ বছরেই ৫১ শিশুর প্রাণহানি মাকে হত্যা করে থানায় হাজির ছেলে আমদানির সাড়ে তিনগুণ দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে আলু ঢাকায় আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল সাতক্ষীরায় সাফজয়ী তিন নারী ফুটবলারের গণসংবর্ধনা

বৃদ্ধাশ্রম : প্রবীণদের কষ্টের ঈদ

মুহাম্মদ আতিকুর রহমান (আতিক) | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ০২:৪২ পিএম, ২১ জুন ২০১৮ বৃহস্পতিবার

ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে আপনজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ, মনের কথা বলা। অধিকাংশ মানুষই আপনজনের সঙ্গে ঈদ করতে ছুটে গেছেন নিজ বাড়িতে।

 

গাজীপুরের সদর উপজেলার মনিপুরে বিশিয়া কুড়িবাড়ি এলাকায় অবস্থিত বয়স্ক পুনর্বাস কেন্দ্রের নিবাসিদের ঈদ সেই রকম ছিল না। ঈদ উপলক্ষে তারা ভালো খাবার, নতুন কাপড় পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু অধিকাংশ নিবাসি এবারের ঈদে আত্মীয়-স্বজন বা প্রিয় মানুষের দেখা পাননি।

 

অনেকের স্বজন বলতে কেউ নেই। যাদের আছে, তারা অধীর আগ্রহে প্রহর গুনেছেন স্বজনরা কেউ হয়ত দেখা করতে আসবেন। সকাল গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলেও কারো দেখা না পেয়ে, পরে আসবেন এই আশায় বুক বেধেছেন। তবে ঈদ উপলক্ষে অনেক নিবাসিকে ছুটি নিয়ে তাদের স্বজনরা বাড়িতে নিয়ে গেছেন।

 

ঈদের দিন শনিবার বিকেলে বয়স্ক পুনর্বাস কেন্দ্রের কয়েকজন নিবাসিদের সঙ্গে আলাপ করে এমন কথা জানা গেছে।

 

বয়স্ক পুনর্বাস কেন্দ্রে মহিলা নিবাসে ঢুকার পথে দেখা গেল দুইজন বৃদ্ধা হেঁটে নিবাসের দিকে যাচ্ছেন। এ সময় একজন বৃদ্ধা বেশি বয়স্ক বৃদ্ধাকে হাঁটতে সাহায্য করছিলেন। নিবাসের বারান্দায় বসার পর কথা হয় তাদের সঙ্গে। বেশি বয়স্ক বৃদ্ধাকে (আনুমানিক ৭০ বছর) নাম জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, তার নাম সোহাগী, স্বামীর নাম মকবুল হোসেন। অনেক আগে স্বামী মারা গেছে। বাড়ি, ঠিকানা তিনি বলতে পারেননি। তার ছেলে মেয়ে নেই।

 

বয়স্ক পুনর্বাস কেন্দ্রের এক স্টাফ জানান, তার নাম জহুরা বেগম। বয়সের কারণে তিনি সব কিছু মনে রাখতে ও বলতে পারেন না। তার একমাত্র মেয়ে দেশের বাইরে থাকেন। প্রায় এক বছর আগে মেয়ে তাকে এই নিবাসে দিয়ে গেছেন। এ সময় জহুরা বেগম ওই স্টাফের কাছে জানতে চান ‘আমার মেয়ে আইব না’। উত্তরে স্টাফ বলেন, উনি সৌদি আরব আছেন। সেখান থেকে এসেই দেখা করতে আসবেন। জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, মাঝে-মধ্যে তার মেয়ে ফোন করে তার সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন।

 

অপর বৃদ্ধার নাম হাজেরা বিবি। তিনি জানান, তার বাড়ি ফরিদপুরের ঝাজিরা থানার কাখিকান্দি গ্রামে। স্বামী লাল চাঁন জমাদ্দার। তার দুই ছেলে দুই মেয়ে। স্বামী ও বড় ছেলে আব্দুল হামিদ মারা গেছেন। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। তারা শ্বশুর বাড়িতে থাকে। ছোট ছেলে বৃদ্ধাশ্রমের কাছে এক বাড়িতে কাজ করেন। তিনি প্রায়ই তাকে দেখতে আসেন।



কেমন আছেন এবং ঈদের দিন কী খেয়েছেন জানতে চাইলে হাজেরা বিবি বলেন, এখানে খুব ভালো আছেন। সকালে সেমাই, মুড়ি দিয়ে নাস্তা, পরে খিচুরি এবং দুপুরে পোলাও মাংস খেয়েছেন। তিনিসহ অন্য নিবাসিরা জানান, ঈদ উপলক্ষে বৃদ্ধাশ্রম থেকে প্রত্যেক নারী নিবাসিকে একটি শাড়ি, দুটি ব্লাউজ এবং দুটি পেটিকোট দেওয়া হয়েছে।

 

এ নিবাসের পাশে আলাদা পুরুষদের নিবাস। সেখানে কথা হয় মোঃ মহসিন মিয়ার (৬২) সঙ্গে। তিনি জানান, তার বাড়ি চাঁদপুর সদরের ইব্রাহিমপুরে। তিনি বিয়ে করেননি। মেঘনা নদী বাড়িঘর ভেঙে নিয়ে গেছে। গত পাঁচ বছর তিনি এই বৃদ্ধাশ্রমে আছেন। স্বজনরা কেউ খোঁজ খবর নেয় কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছোট ভাই আবুল কাশেম সোহাগ ঢাকার একটি গামেন্টেসে চাকরি করে। কয়েক দিন আগে দেখা করতে এসেছিল। আজ হয়ত আসতে পারবে না। পরে আসবে। তিনি জানান, ঈদ উপলক্ষে পুরুষ নিবাসিদের একটি লুঙ্গি ও একটি শার্ট দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

 

বয়স্ক পুনর্বাস কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক মোঃ আবু শরিফ জানান, এ কেন্দ্রে মোট ২০০ জন নিবাসি রয়েছেন। এদের মধ্যে ১০৩ জন পুরুষ এবং ৯৭ জন মহিলা। এবারের ঈদে ৫০ জন নিবাসি ছুটিতে গেছেন। এর মধ্যে ৩৪ জন পুরুষ এবং ১৬ জন মহিলা। ঈদ উদযাপন করতে স্বজনরা তাদের নিয়ে গেছেন।