ঢাকা, সোমবার ১১, নভেম্বর ২০২৪ ৪:২২:১৩ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
শপথ নিলেন নতুন ৩ উপদেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না অন্তর্বর্তী সরকারকে, অধ্যাদেশ চূড়ান্ত ঢাকায় শীত নিয়ে যা জানাল আবহাওয়া অফিস ইসরায়েলি হামলায় আরও ৪৪ ফিলিস্তিনি নিহত হাসিনাসহ পলাতকদের ফেরাতে জারি হচ্ছে রেড নোটিশ

ভাজা পোড়া খাওয়ার আগে একটু ভাবুন!

লাইফস্টাইল ডেস্কঃ | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:৫২ এএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ মঙ্গলবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি


হৃৎপিণ্ড- শরীরের ছোট্ট এই অঙ্গটি প্রতিদিন লক্ষবার স্পন্দনের মাধ্যমে রক্তের সাথে দেহের প্রতিটি কোষে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও অক্সিজেন পৌঁছে দিচ্ছে। ফলে সচল থাকছে পুরো শারীরবৃত্তীয় ব্যবস্থা।

আপনার জীবদ্দশায় সাড়ে চার কোটি গ্যালনের চেয়ে বেশি রক্ত পাম্প করে থাকে আপনার হৃদযন্ত্র। অতএব শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে সুস্থ রাখতে হবে হৃৎপিণ্ডকে।

স্টেপস সার্ভের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে শতকরা ৭৩ ভাগ মানুষ অসংক্রামক রোগে মারা যায়; শতকরা ৩৬ ভাগ মৃত্যুর কারণ হৃদরোগ।


অধিকাংশ মানুষ শরীরে জমা চর্বি নিয়ে যতটা সচেতন, হার্টের চারপাশে ও ধমণীতে জমা হওয়া চর্বি নিয়ে ততটা সচেতন নন। আর এধরণের চর্বির মূল উৎস ট্র্যান্সফ্যাট নিয়ে বলা চলে একেবারেই সচেতন নন কেউ।

ট্রান্স ফ্যাটি এসিড, সংক্ষেপে ট্রান্সফ্যাট হলো এক ধরনের ডায়েটারি ফ্যাট বা চর্বি, যা রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।


ট্রান্সফ্যাট সাধারণত উৎপন্ন হয় শিল্পপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভিজ্জ তেল তৈরির সময় যখন তাতে হাইড্রোজেন যুক্ত হয়। স্বাভাবিক তেলে থাকা ট্রান্সফ্যাট খুব বেশি ক্ষতিকর না হলেও একই তেল যখন বারবার পোড়ানো হয় তখন সেই তেলে যোগ হয় প্রচুর ট্রান্সফ্যাট।

আসলে যেকোনো ভোজ্য তেল উচ্চ তাপে দীর্ঘ সময় ফুটালে তা ট্রান্সফ্যাটে পরিণত হয়। 
হোটেল-রেস্টুরেন্টে যে তেলে পুরি সিঙ্গাড়া বা জিলাপি ভাজা হয় সেই পোড়া তেল না ফেলে নতুন তেল যোগ করে করে কাজ চালানো হয়। অর্থাৎ, একই তেল ক্রমাগত পুড়তে থাকে। আর এই প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হয় ট্রান্সফ্যাট।


এ-ছাড়াও, কিছু প্রাকৃতিক খাবার যেমন- গরু, ভেড়া, ছাগলের মাংস, দুধ মাখন ঘিতেও ট্র্যান্সফ্যাট আছে।


বিস্কুট চানাচুর চিপস কেক পেষ্ট্রি ইত্যাদি বেকারি আইটেম, চিকেন ফ্রাই ফ্রেঞ্চ ফ্রাই জিলাপি সিঙ্গাড়া সমুচা পুরি চপ বেগুনি পেঁয়াজু্‌ ইত্যাদি ফ্রাইড ফুড কিংবা পরোটা সিঙ্গাড়া সমুচা নাগেটস ইত্যাদি ফ্রোজেন ফুড- প্রতিদিনের নাস্তায় আমরা বেশি খাই এই খাবারগুলোই। এসব খাবারে ব্যবহৃত হয় প্রক্রিয়াজাত ডালডা, বনস্পতি ঘি, ভোজ্য তেল, মার্জারিন ইত্যাদি। প্রক্রিয়াজাত ট্রান্সফ্যাটের উৎস এগুলোই।

কয়েক বছর আগে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন তাদের এক গবেষণার অংশ হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত ১০টি বিস্কুট পরীক্ষা করে। এগুলোর মধ্যে ৫ থেকে ৩১ শতাংশ পর্যন্ত ট্রান্সফ্যাট পাওয়া গেছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিমেল সাহা বলেন, বাংলাদেশে যত মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হন তার বেশিরভাগের জন্যই দায়ী ট্রান্সফ্যাট। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ভাজা-পোড়া বিস্কুট চানাচুর চিপস বা এ ধরণের অসংখ্য অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা আছে। এটাই ট্রান্সফ্যাটজনিত হৃদরোগের কারণ।


অন্যদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বাংলাদেশে প্রতি বছর যত মানুষ মারা যায় তার ৪.৪১ শতাংশের জন্য দায়ী ট্রান্সফ্যাট।

সচেতনভাবে রেডমিট রিচ ফুড ফাস্ট ফুড বর্জনের পরও যখন ভাজাপোড়া খাবারে অভ্যস্ত কারো ধমনীতে ব্লকেজ ধরা পড়ে কিংবা হার্ট এটাক করে বসেন কেউ তখন তিনিসহ বিস্মিত হন তার পরিচিতজন। কারণ সাধারণ ফ্যাটের ব্যাপারে জনসাধারণ্যে সচেতনতা বাড়লেও ট্রান্সফ্যাটের ব্যাপারে নেই সেই সচেতনতা।

এমনকি অনেকে জানেনই না যে তিনি খাবারের সাথে ট্রান্সফ্যাট নামক বিষ খাচ্ছেন! আর এই ফাঁকে নিরীহদর্শন ভাজাপোড়া খাবার হয়ে উঠছে প্রাণঘাতী।

আগে ভাবা হতো প্রবীণ বা বয়ষ্করাই বুঝি হৃদরোগের শিকার। ফলে মানুষের মধ্যে খাদ্যসচেতনতা আসত বার্ধক্যে। কিন্তু এখন প্রতি পাঁচজন তরুণের একজন হৃদরোগে আক্রান্ত! এর মূলে আছে ট্রান্সফ্যাট।

এমনকি এখন শিশু-কিশোররাও যে বর্তমানে হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস, স্থুলতায় আক্রান্ত হচ্ছে এর পেছনেও আছে ট্র্যান্সফ্যাট।

ট্রান্সফ্যাটের স্বাস্থ্যঝুঁকির তালিকায় উচ্চ রক্তচাপ ও করোনারি হৃদরোগ তো আছেই; আরো আছে স্ট্রোক, ফ্যাটি লিভার, স্থুলতা, টাইপ টু ডায়াবেটিস, ডিমেনশিয়া, এমনকি আলঝেইমারের মতো রোগের ঝুঁকি।

ট্রান্সফ্যাটসমৃদ্ধ যেসব খাবারের কথা একটু আগে বলা হলো সেগুলো আমরা বেশি খাই বাসার বাইরে। বিশেষত স্ট্রিটফুড এখন বেশ জনপ্রিয়।

আসলে হার্টের 'সুস্থতা' অর্জন এবং বজায় রাখার বিষয়। একবার অসুস্থ হয়ে গেলে যা গাদা গাদা ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট দিয়ে নিশ্চিত করা যায় না।

তাই রসনাকে সংযত করুন, বর্জন করুন ভাজাপোড়া চর্বিদার খাবার। অভ্যস্ত হোন প্রাকৃতিক খাবারে। মেডিটেশন এবং যোগব্যায়ামকে পরিণত করুন প্রাত্যহিক অভ্যাসে। হৃৎপিণ্ড ভালো থাকবে, ভালো থাকবে আপনার দেহমন।