ঢাকা, শনিবার ২১, ডিসেম্বর ২০২৪ ২০:১৯:৫২ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
বাতিল হওয়া বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি তাপমাত্রা ও কুয়াশা নিয়ে যা জানাল আবহাওয়া অফিস বনানীর ২২নং বস্তিতে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাউন্সিলরদের স্বপদে বহাল চায় না জাতীয় নাগরিক কমিটি সাভারে চলন্ত বাসে ডাকাতি, ছুরিকাঘাতে আহত ৪ উত্তরায় রেস্টুরেন্টে আগুন, ৭ জনকে জীবিত উদ্ধার

ভেগার ভালোবাসা: আইরীন নিয়াজী মান্না

আইরীন নিয়াজী মান্না | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৪:০৬ পিএম, ১৬ জুলাই ২০২১ শুক্রবার

ভেগার ভালোবাসা: আইরীন নিয়াজী মান্না

ভেগার ভালোবাসা: আইরীন নিয়াজী মান্না

সে প্রায় দুই হাজার বছর আগের কথা।  ধারণা করা হয় খ্রিষ্ট পূর্ব ৬ সালের ঘটনা এটি।

সে সময় আকাশের বুকে লিউ ল্যাং ও ঝি নু নামে দু’টি উজ্জ্বল তারা ছিলো।  লিউ ল্যাং ছিলো অলটায়ার আর ঝি নু ছিলো ভেগা। সারা রাত জেগে জেগে তারা দুজন আকাশজুড়ে আলোর মিছিল করতো।  তাদের ছিলো ওই একই কাজ, আকাশবুকে তীব্র রূপোলী আলো জ্বালানো।  লিউ ল্যাং ও ঝি নু’র মধ্যে ছিলো প্রগাঢ় বন্ধুত্ব। তারা একে অপরকে গভীরভাবে ভালোবাসতো। কিন্তু বিপদ হলো তারাদের রাজ্যে প্রেমে পরা ও ভালোবাসা নিষেধ। 

স্বর্গের রাণী কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। তার নির্দেশমতে তারার রাজ্যে প্রেম করা বা ভালোবাসার সম্পর্ক করা যাবে না।  অপরূপ সুন্দরী ঝি নু ছিলো স্বর্গের রাণীর নাতনী।  রাণীর সাত নাতনীর মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলো ঝি নু।  আর রানী তাকে ভালোবাসতেন সবচেয়ে বেশি।

লিউ ল্যাং ও ঝি নু তাদের সম্পর্কের কথা কাউকেই জানালো না।  এ ব্যাপারে একদম চুপচাপ থাকতো তারা।  কিন্তু একদিন ঘটে গেলো এক বিশাল বিপত্তি।  রাণী কিভাবে যেন তাদের প্রেমের কথা জেনে গেলেন। সব জেনে খুব রেগে গেলেন তিনি। ঠিক করলেন যে করেই হোক তাদের আলাদা করে দেবেন।

যেমনি ভাবা তেমনি কাজ। একদিন লিউ ল্যাংকে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করা হলো। তাকে রাখাল বালক হিসেবে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। আর ঝি নুকে পাঠানো হলো মেঘ বুননের জন্য। আকাশের অপরূপ মেঘগুলো ঝি নুই বুনতো।

মেঘ বুনতে ঝি নুর বেশ ভালোই লাগতো।  তবে তার মনে ছিলো অনেক কষ্ট।  ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে অনেক দূরে সে। তাই মনে তার বেদনার শেষ নেই।  তাই তো তার সুন্দর নদীর মত চোখ দুটো দিয়ে সবসময়ই অশ্রু ঝরে পড়তো। এই অশ্রুই যখন পরিমানে অনেক হতো তখন তা ঝরে পড়তো পৃথিবীতে।  আর তখনই পৃথিবীতে বৃষ্টি হতো।  এ বৃষ্টিতে ভিজে নিজের প্রাণ জুড়াতো লিউ ল্যাং।  

এদিকে অনেক চেষ্টা করেও ঝি নু তার একাকীত্ব দূর করতে পারতো না। কি আর করবে! সে সারাক্ষণ নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখতো। আর মনে মনে প্রত্যাশা করতো, একদিন হয়তো লিউ ল্যাং স্বর্গে ফিরে আসবে। তাকে নিয়ে যাবে এখান থেকে।

একে একে কেটে গেলো অনেক দিন। একদিন স্বর্গের রাণীর নাতনীরা ঠিক করলো তারা পৃথিবীতে যাবে। তারা পদ্মবাগানের বিশাল দিঘীতে স্নান করবে। সেজন্য রাণীর কাছে অনুমতি চাইলো তারা। কি কারণে যেন রাণী সেদিন বেশ খোস মেজাজে ছিলেন। তাই নাতনীদের পৃথিবীতে যেতে অনুমতি দিলেন। 

স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে যাওয়ার সময় ছয় বোন দেখলো তাদের ছোট বোন ঝি নু মেঘ বুনতে ব্যস্ত।  অন্য বোনরা সব কোথায় যাচ্ছে সে দিকে লক্ষ্য নেই তার।  সে উদাস ভঙ্গিতে মেঘ বুনেই চলেছে।  ছোট বোনের জন্য খুব মায়া হলো বড় বোনদের।  তাকেও তারা সাথে নিয়ে যেতে চাইলো।  আর সে জন্য অনুমতি চাইলো স্বর্গের রাণীর কাছে। 

রাণী দেখলেন তার এই ছোট্ট নাতনীটি আর আগের মত নেই। সে কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে। আগের মত উচ্ছাস নেই তার মনে। চোখের কোণে সব সময় জল জমে থাকে। উদাস ভঙ্গিতে সে সারাক্ষণ মেঘ বোনে। রাণীর কাছ থেকেও দূরে দূরে থাকে তার প্রিয় নাতনী ঝি নু।  বোনদের সাথে পদ্মবাগানে গেলে তার মন হয়তো একটু ভালো হবে।  এসব ভেবে ঝি নুকেও তাদের সাথে পদ্মবাগানে যাওয়ার অনুমতি দিলেন রাণী।

এদিকে পৃথিবীতে লিউ ল্যাংয়ের জীবনটা খুব একটা আনন্দের ছিলো না। পৃথিবীতে আসার পর গরীব বাবা-মায়ের সন্তান হিসেবে বড় হতে হয়েছে তাকে। খুব কষ্ট করতে হয়েছে। জীবন আরো কঠিন হয়ে পরে যখন তার বাবা-মা মারা যান। 

বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর লিউ ল্যাংয়ের অভিভাবক হন বড় ভাই। কিন্তু এই ভাইটি মোটেও ভালো মানুষ ছিলেন না। বড় ভাই নিউ’র সাথে খুব বাজে আচরণ করতেন। তার সমস্ত সম্পদ কেড়ে নেন তিনি। সব কিছু থেকে বঞ্চিত করে নিউ ল্যাংকে একদিন বাড়ি থেকে বের করে দেন। সাথে দেন একটি ষাঁড় এবং একটি ঠ্যালাগাড়ি। বলে দেন, আর কোনো দিনও এমুখো হবে না। নিজে কাজ করে খাও গিয়ে। আমি আর তোমাকে খাওয়াতে পারবো না।

কি আর করা! ওই ষাঁড় আর ঠ্যালাগাড়ি নিয়ে একদিন বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো লিউ ল্যাং। সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যত! কি করবে বুঝে উঠতে পারলো না সরল মনের লিউ ল্যাং।  ওই ষাঁড় এবং লিউ ল্যাং বেঁচে থাকার প্রয়োজনে একে অপরের উপর নির্ভরশীল হয়ে পরলো। বাড়ি থেকে বহু দূরে এক নিরিবিলি গাঁয়ে চলে গেলো তারা।  নতুন গাঁয়ের এক কোণায় দুজন মিলে একটা ছোট কুঁড়ে ঘর তৈরি করলো। 

এই কুঁড়ে ঘরে ষাঁড়কে নিয়ে একা একা থাকে লিউ ল্যাং।  ভালোভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছিলো তারা। ষাঁড়টি বন্ধুর মত সহযোগীতা করছিলো লিউ ল্যাংকে।  দুজনে মিলে অন্যের জমি চাষ করে। তা থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে দুই বন্ধুর কোনো রকমে দিন কাটছিলো।

ওই ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে বসবাস করেই অনেকগুলো বছর কেটে গেলো তাদের। দিন কেটে যাচ্ছে কোনো রকম। হঠাৎ একদিন লিউ ল্যাংয়ের ষাঁড়টা কথা বলে উঠলো। লিউ ল্যাং তো অবাক! কি ব্যাপার ষাঁড় কথা বলছে কেন?

ষাঁড়টা বললো: নিউ ল্যাং, আজ তুমি পদ্মবাগানে যাবে। সেখানে দেখবে অনেকগুলো পরী দীঘিতে স্নান করছে। তুমি লাল পোশাকটি খুঁজে বের করবে। তারপর পোশাকটি তুমি তোমার কাছে লুকিয়ে রাখবে।

লিউ ল্যাং অবাক হয়ে জানতে চাইলো, কেন, পোশাক লুকিয়ে রাখতে হবে কেন? 

ষাঁড় বললো: ওই লাল পোশাকটি এমন একজনের যে তোমার বউ হবে। তুমি তাকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসো। তুমি তাকে হারিয়ে ফেলেছো।

ষাঁড়ের কথামত লিউ ল্যাং সত্যি পদ্মবাগানে গেলো। সেখানে গিয়ে সে তো ভীষণ অবাক। ষাঁড়ের কথাই তো ঠিক! স্বর্গ থেকে সাত রঙের সাতটি পরী এসেছে। তারা দিঘীর গাঢ় নীল পানিতে গোসল করছে মনের আনন্দে। তাদের জলকেলি আর মিষ্টি কথার ছন্দে মুখরিত হয়ে আছে চারদিক।  গাছের ডালে পাখিরা গান গাইছে মিষ্টি সুরে।  সবুজ পাতায় মুখ লুকিয়ে হরিনের দল ঘুরে বেড়াচ্ছে সবুজ ঘাসের মাঠে।  গাছে গাছে ফুটে আছে নানা রঙের ফুল।  ফুলের সুবাসে মৌ মৌ করছে চারদিক। 

লিউ ল্যাং তাকিয়ে দেখে দিঘীর পারে ঘাসের মাঝে লুটিয়ে পরে আছে পরীদের পোশাকগুলো। ষাঁড়ের নির্দেশমত লাল রঙের পোশাকটি লুকিয়ে ফেললো লিউ ল্যাং। তারপর অপেক্ষা করতে থাকলো। গাছের আড়ালে লুকিয়ে আবাক বিস্ময়ে সে তাকিয়ে রইলো স্নানরত পরীদের দিকে। কি সুন্দর!
 
লিউ ল্যাংয়ের বেশ অস্থির লাগছিলো।  সে ভাবলো আচ্ছা আমি যাকে ভালোবাসি সেই পরীটি কই! আমি তাকে দেখতে চাই। সে দীঘির আরো কাছে যেতে চেষ্টা করলো। এক গাছের আড়াল থেকে আরেক গাছের আড়ালে গিয়ে ভালোভাবে লুকানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু তার পায়ের নিচে শুকনো পাতা পরে  মচমচ শব্দ হতে লাগলো। আর এই শব্দ কানে যেতেই পরীরা দেখে ফেললো তাকে। তারা ভয় পেয়ে গেলো। স্বর্গে ফিরে যাওয়ার জন্য দ্রুত পোশাক পরে নিলো। মূহূর্তে তারা বাতাসে পাখা মেলে নীল আকাশে উড়ে গেলো।

শুধু লাল পরীটি যেতে পারলো না। সে ঘাসের ওপর তার কাপড় খুঁজে পেলো না। কারণ লিউ ল্যাং আগেই তার পোশাক লুকিয়ে রেখেছিলো।  কোনো উপায় না দেখে লাল পরী বাধ্য হয়ে আবারও পানিতে নেমে দাঁড়িয়ে রইলো। এই লাল পরীটি আর কেউ নয়, ঝি নু। 

লিউ ল্যাং গাছের আড়াল থেকে ঝি নুকে বললো, তোমার পোশাক আমি ফিরিয়ে দিবো, যদি তুমি আমার কথা শোনো।

ঝি নু ওর কথা শুনে বেশ অবাক হলো।  সে বললো, কি কথা? আগে বলো, শুনি।

লিউ ল্যাং বললো, যদি তুমি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হও আমি তোমার পোশাক ফিরিয়ে দেব।

লিউ ল্যাংয়ের কণ্ঠ ঝি নুর বেশ পরিচিত মনে হলো। সে এই অপরিচিত মানুষটিকে ভালোভাবে দেখতে চাইলো। সে নিশ্চিত ছিলো মানুষটি তার পরিচিত। 

ঝি নু বললো, আগে তো তুমি আড়াল থেকে বেড়িয়ে এসো।  আমি তোমাকে দেখতে চাই।

ওর কথা শুনে গাছের আড়াল থেকে বেড়িয়ে দীঘির পারে দাড়ালো লিউ ল্যাং।  ঝি নু তো অবাক।  ওর কাছে অবিশ্বাস্য লাগছিলো। ও ঠিকই চিনতে পারলো। এই ছেলেই তার হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার মানুষ, লিউ ল্যাং।  যেই না ঝি নু ওকে চিনতে পারলো অমনি লিউ ল্যাংয়ের অতীত স্মৃতি সব মনে পড়ে গেলো।  ও অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো ঝি নুর দিকে। 

অনেক দিন পর দুজনে দুজনকে ফিরে পেয়ে যার পর নেই আনন্দিত হলো।  তারপর তারা বিয়ে করলো। সুখে শান্তিতে ওই ছোট কুঁড়ে ঘরে বাস করতে লাগলো দুজনে। এক সময় তাদের সংসার আলো করে দু-দুটি সন্তান হলো। ঝি নু কাপড় বুনতো আর লিউ ল্যাং তার বিশ্বস্ত ষাঁড় বন্ধুকে নিয়ে জমি চাষ করতো।  এভাবেই বেশ আনন্দে দিন কাটছিলো ওদের। 

একদিন লিউ ল্যাং মাঠ থেকে ফিরে এসে শুনলো তার ষাঁড়টি অসুস্থ্য।  সে মারা যাচ্ছে। মরার আগে ষাঁড়টি লিউ ল্যাংকে বললো, আমি মারা যাওয়ার পর আমার চামড়া দিয়ে তুমি একটি চাদর বানাবে। এই চাদরটা তোমাকে উড়তে সাহায্য করবে। কোনো একদিন ঝি নুর কাছে তোমাকে পৌঁছানোর জন্য এই চাদর কাজে লাগবে।

লিউ ল্যাং কাঁদতে কাঁদতে বললো:ঝি নুর কি হবে?

ষাঁড় বললো: লিউ ল্যাং, সামনে তোমার অনেক বড় বিপদ।  আমি থাকবো না।  তোমাকে একাই লড়াই করতে হবে।

মৃত্যুর আগে ষাঁড়টি লিউ ল্যাংকে জানালো অতীতজীবনে সেও স্বর্গের আকাশের তারা ছিলো। তখন ওর নাম ছিলো টারাওস। বহু বছর আগে ওরা দুজন খুব কাছের বন্ধু ছিলো। টারাওস-ই প্রথম স্বর্গের রাণীকে অনুরোধ করেছিলো লিউ ল্যাংকে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত না করতে। এ কারণে রাণী তার উপর ভীষণ রেগে যায়। তাই তাকে ষাঁড়ে পরিণত করে এবং স্বর্গ থেকে বহিস্কার করে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেয়। পৃথিবীতে এসেও টারাওস তার বন্ধুর প্রতি নজর রেখেছে সব সময়। 

বিশ্বস্ত বন্ধুর মৃত্যুতে নিউ ল্যাং খুব দূ:খ পেলো। বন্ধু টারাওসের নির্দেশ মত তার চামড়া দিয়ে একটি চাদর বানালো সে। লিউ ল্যাং মনে মনে বললো, বন্ধু, তোমার নির্দেশ মতই সব কাজ করবো আমি। তুমি আমার কষ্টের সময় আমার সাথে ছিলে। আমি তোমাকে জীবনেও ভুলবো না।

এদিকে হলো কি পরের দিন স্বর্গের রাণীর নির্দেশে এক দমকা বাতাস এলো পৃথিবীতে। সে বাতাস এক ঝটকায় ঝি নু ও তার সন্তানদের আকাশে স্বর্গের পথে নিয়ে গেলো। 

বন্ধুর কথামত, লিউ ল্যাং চাদরটায় চড়ে বসলো। বাতাসে ভাসতে ভাসতে সে তার স্ত্রী ও সন্তানদের ধরার চেষ্টা করলো। কিন্তু তার আগেই দুষ্টু রাণী তার সোনালী চুলের পিনটা খুলে দিলো। তার দীঘল চুলের এক ঘায়েই স্বর্গের মাঝে তৈরি হয়ে গেলো এক বিশাল নদী। আর এই বিশাল নদী ঝি নু এবং লিউ ল্যাংকে পুরোপুরি আলাদা করে ফেললো। 

বিচ্ছেদের বেদনায় সে সময় তারা দুইজনই চিৎকার করে কেঁদে উঠলো।  তাদের কান্না দেখে রাণী যেন একটু নরম হলেন। তাই তিনি লিউ ল্যাংকে স্বর্গে থাকার অনুমতি দিলেন। কিন্তু শর্ত হলো সে তার বউ ও সন্তানদের সাথে থাকতে পারবে না। সে থাকবে আলাদা। বছরে শুধু একদিনই দেখা করতে পারবে তারা। দিনটি হবে চন্দ্রের সপ্তম মাসের সপ্তম দিন। 

কি আর করা! স্বর্গের রাণীর নির্দেশ। তারা তা মেনে নিলো। এর পর থেকে এভাবেই লিউ ল্যাং বছরে একবার ঝি নু ও তার সন্তানদের সাথে মিলিত হয়। 

দূর থেকে স্বর্গের রাণীর নির্দেশ শুনেছিলো ম্যাগপাই পাখি। লিউ ল্যাংয়ের জন্য স্বর্গের পাখির মন কেঁদে উঠেছিলো। ওই বিশাল ও গভীর নদী পেরিয়ে সে কিভাবে আসবে স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে দেখা করতে! স্বর্গের সব ম্যাগপাই পাখি এক সাথে হয়ে একটি বৈঠক করলো।  বৈঠকে পাখিরা সিদ্ধান্ত নিলো তারা নিউ ল্যাংকে সাহায্য করবে। 

এরপর থেকে প্রতি বছর চন্দ্রের সপ্তম মাসের সপ্তম দিন স্বর্গের পাখি ম্যাগপাইয়ের একটি দল ভেগা ও অলটায়ার নামের দুইটি তারার মাঝে একটি ব্রীজ তৈরি করে। এই ব্রীজ দিয়ে লিউ ল্যাং নদী পার হয় এবং তার ভালোবাসার মানুষদের কাছে যায়। প্রতি বছর ওই একটি দিনের অপেক্ষায় বসে থাকে ভেগা আর অলটায়ার।  আর লিউ ল্যাং যখন ব্রীজ পার হয় তখন ব্রীজটি রাতের আকাশে দেখা যায়। 

প্রতি বছর স্বর্গে লিউ ল্যাং যখন তার স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে মিলিত হয় তখন জোছনার আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে পৃথিবী।  ওই সময় খোলা আকাশের দিকে তাকালে তাদের দেখা যায় স্পষ্ট।

(প্রাচীন চীনের রূপকথা)