মানুষ গড়ার কারিগররা কতটা সহনশীল?
নাদিরা কিরণ | উইমেননিউজ২৪প্রকাশিত : ১২:৫৫ এএম, ৬ ডিসেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার
সদ্য ক্লাস সেভেনে উঠেছি। এখনকার মত জানুয়ারির পহেলা দিনে হাতে বই আসতোনা। তাই স্কুল খুললেও ক্লাস ঢিলেঢালা। সে কারণে এক সহপাঠীর পরিবার বেড়াতে গিয়ে ছুটিটা প্রলম্বিত করায় সে ক্লাসে কিছুদিন অনুপস্থিত। যশোরের ভালো স্কুল হিসেবে এক নামে খ্যাত মমিন গার্লস বা গভঃগার্লস হাই স্কুলে এসবে ভীষণ নিয়ন্ত্রণ। মফস্বল শহরের ভালো স্কুলের ভারি ভাবের কড়াকড়িও তেমন। মাসে কেবল বেতন দেয়ার একটি দিন ছাড়া স্কুল ড্রেস, জুতা বাধ্যতামূলক, নয়ত প্রবেশ নিষিদ্ধ। হাতের নখ রাখা বা নেলপলিশ, লিপিস্টিক চলবে না। কাঁধের নিচে চুল গেলেই আটসাট বাঁধতে হবে। তেমন কড়াকড়ির স্কুলে সহপাঠী সেই মেয়ে ঢাকার পার্লার থেকে স্টেপ কাটে ছাটা চুল নিয়ে ক্লাসে এলো। বেতন দেয়ার দিন বলেই যথারীতি স্কুল ড্রেস ছাড়া অন্য পোষাকে তায় আবার ভিন্ন কাটের চুলে টিচার আপার চোঁখ গেলো। তিরস্কার করলেন কেবল মুখে নয়। স্কুল মাঠে বসিয়ে রাখলেন তার ক্লাস টাইমের ৪৫ মিনিট। এতটুকু মেয়ে কেন এমন শখ করবে, পরিবার কেন কেয়ার করেনি এসব আপা বললেন বটে। তবে অভিভাবকের ডাক পড়েনি।
মনে আছে, অষ্টম শ্রেণীতে বার্ষিক পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে ধরা পড়ার পর হল থেকে এক মেয়েকে বের করে দেন টিচার। যথারীতি তিরস্কারের তীর্যক বানও সাথে। সেবারও দেখিনি অভিভাবক ডাকতে। আজকাল পান থেকে চুন খসলেই অভিভাবককে তলব।
নামী ইংলিশ ভার্সন স্কুলে লক্ষী ছেলে হিসেবে ক্লাসে পরিচিত আমার ছোট্ট ছেলেটির জন্যও একদিন ডাক পড়েছিলো আমার। ক্লাস টুতে তখন ও। স্কুলের দোতলা ভবনের তিনতলায় ওঠার সিঁড়ি মেরামত হচ্ছে কোন রকম ব্যারিকেড দেয়া ছাড়াই। ক্লাস চলাকালীন এসব মেরামত কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, এসবতো শিশুরা বোঝেনা। উন্মুক্ত স্থানে পড়ে থাকা ইট, ভাঙ্গা সুরকি তখন অতটুকু বাচ্চাদের দারুণ খেলার উপাদান। ক্লাসের ফাঁকে টিচার ঢোকার আগেই মিসদের (আধুনিক স্কুলের তদারকি আয়া) চোঁখ এড়িয়ে সেসব টুকরো নিয়ে তারা নিচে ছুঁড়ছে, কখনও জানালায়। এরই ফাঁকে আমার ছেলের হাতের ইটের টুকরো লাগে আরেকটি ছেলের মাথায়। যথারীতি রক্ত বের হওয়ায় আমাকে তলব। অফিস ফেলে দৌড়ে গিয়ে দেখি ছেলে কায়ানাতকে এডমিন রুমের সামনে যেভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে যেন খুনের মটিভ নিয়েছিলো সে। জানলাম, আহত ছেলেটিকে সিএমএইচে নেয়া হয়েছে। ছেলেটির অভিভাবককে কল দিয়ে জানলাম কোন স্টিস পড়েনি। আমি খরচ দিতে চাইলেও সামান্য খরচ বলে রাজি হলেন না। দুঃখ প্রকাশ করায়ও তারা সহজভাবে নিলেন। এটা জানার পরও ক্লাস শিক্ষক বেশ তীর্যক ভাবে কথা বললেন। আমার মিডিয়া পরিচিতির জন্য হয়ত কিছুটা সীমা থাকলেও অন্য কেউ হলে তারা বোধহয় অরিত্রির বাবার মতোই চরম তিরস্কারে জর্জরিত করতেন আমাকে। আমি ক্লাস টিচারকে বলেছিলাম, আমার ছেলে কাজটি মোটেই ভালো করেনি। কিন্তু আপনি কি জানতে চেয়েছিলেন, ঘটনাটা কি কারণে ঘটেছিলো? অতটুকু বাচ্চা ইট মারলে কি ঘটতে পারে আসলেই বুঝেছিলো কি? আমার ছেলের ক্লাস রেকর্ডে কি তার এমন আচরণ আছে? তিনি সন্তোষজনক উত্তর দেননি।
কয়েক মাস পর ভালো স্কুলে ভর্তির যুদ্ধে চেষ্টা করে ঢাকারই আরেকটি ভালো স্কুলে নিয়ে আসি ওকে। তবে আগের স্কুলে টিসি আনতে গেলে হেড টিচার কারণ জানতে চাইলে বলি, যে স্কুলে ছোট্ট শিশুর মানসিক অবস্থা বোঝা হয়না, সামান্য ইস্যুতে তাকে অপরাধী বানানো হয়, সেখানে ছেলেকে পড়াতে আগ্রহ পাচ্ছিনা। আমি বলেছিলাম, আমার ছেলেকে সেদিন দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিলো। অন্য শিশুদের সামনে ছেলেটা এখন বিব্রত হয়। এটা ওর মানসিক বিকাশে বিরুপ প্রতিক্রিয়া ফেলবে। শিশুরা চঞ্চল, আবার দুষ্টুমির ছলে অন্য কেউ করলেও আমার ছেলের ওপর দোষ হবেনা তাও বলা যায় না। আরেকটি কথা বলেছিলাম, ক্লাস চলাকালীন ভবনের মেরামত কাজ চলা কি যৌক্তিক? সাংবাদিক বলেই হয়ত হেড টিচার তেমন কথা বাড়ান নি। টিসি দিয়ে দেন। এ স্কুলে আমার ছেলে পাঁচ বছর। তেমন কোন অভিযোগ আসেনি।
অরিত্রী, অভিমানী মেয়েটি এভাবে চলে যাবার পর এসব কথাগুলোই ভীড় করছে মনে। পরীক্ষা থেকে বিরত রাখার অপমানতো মেয়েটির ছিলোই। বাবারও সেজন্য চরম অপমান সইতে হলো। এ যুগের সেনসেটিভ প্রজন্মের অরিত্রী তার ধকল নিতে পারেনি। না মেয়েটির আত্মহত্যা কোনভাবেই সমর্থণযোগ্য নয়। অরিত্রীর মোবাইল নিয়ে নকল করার নৈতিক স্খলনও সমর্থণ করছিনা। কিন্তু মেয়েটিকে তীরস্কার করে, তার খাতা কিছুক্ষণ আটকে রাখা যেতো। এটাও মেয়েটির জন্য যথেষ্ট শাস্তি হতো। অপমানটাও কম হতো না। অভিভাবককে ডাকাও অযৌক্তিক নয়। কিন্তু অপমান করতে নয়, সন্তানের প্রতি আরো সতর্ক এবং নৈতিকতার শিক্ষা দেয়ার পরামর্শ দেয়ার জন্য। তার ওপর মেয়েটি তার বাবা-মায়ের সামনে দফায় দফায় অপরাধ স্বীকার করে শিক্ষকদের পা ধরে মাফ চেয়েছিলো।
কেন তারা নমনীয় হতে পারলেন না? শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তো শিক্ষার্থী গড়ে তোলার কেন্দ্র এবং শিক্ষকরা তার কারিগর। তবে তারা পুরো দোষ পরিবারকে দিয়ে নিজেদের দায় এড়ালেন কেন? তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কোন ধরনের কটুক্তি, অমানবিক এমনকি মানসিক চাপ পড়ে এমন কোন আচরণ থেকে বিরত থাকার জন্য শিক্ষকদের কঠোর হুশিয়ারী দিয়েছেন। এ উদ্যোগের পাশাপাশি বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য, নৈতিক স্খলন থেকে বিরত রাখতে, ক্রোধ, হিংসা - প্রতিহিংসা, হীনমন্যতা থেকে মুক্ত রাখার অনুভব, অনুশীলনের জন্য শিক্ষক রাখা জরুরী। অনেকে বলতে পারেন আমরাতো এগুলো ছাড়াই মানুষ হয়েছি। তাদের মনে রাখতে হবে আমরা কোন শতাব্দীর প্রজন্মের কথা বলছি। কোন পরিবর্তিত পরিবেশে, কোন বদ্ধ পরিমন্ডলে বেড়ে ওঠে আমাদের শিশুরা। প্রযুক্তি নির্ভর সমাজে শিশুদের মানসিক গঠনে মা-বাবার বাইরেও চারপাশের মানুষজন, পরিবেশ তাকে কতটা মূল্যায়িত করার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারছে কি? বেটারমেন্ট লাইফ বা উন্নতমানের জীবন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে মা-বাবাকেও নানা কর্মে নিয়োজিত থাকতে হয়। একান্নবর্তী পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে শেয়ার করা বা তাদের অনুসরণ করা, পরামর্শ নেয়ার সুযোগ পেলে উদার মানসিকতা তৈরির যে সহজ ক্ষেত্র একটি শিশু পায় এখনকার প্রজন্ম তা থেকে বঞ্চিত। ফলে মনোজগৎ দৃঢ় হওয়ার সুযোগটাও সে সময়ের চেয়ে অনেক কম। গাদা গাদা বই আর কোচিংভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যস্ততার কারণে শিশুদের জন্য আলাদা সময় বের করে মানসিক গুনাবলী তৈরির কৌশলও সব মা-বাবার থাকে না। স্নেহ ভালোবাসার বাইরেও দৃঢ় মনোবল তৈরির আবহ মা-বাবা বোঝেন না। পুঁথিগত বিদ্যার বাইরেও এমন মূল্যবোধ তৈরির সঠিক পীঠস্থান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সে প্রতিষ্ঠানের এ শিক্ষা দেয়ার কারিগর যে শিক্ষকরা তারা কেন সংবেদনশীল হবেন না তা ভাববার সময় এসেছে বৈকি।
বাবা- মায়ের পর শিক্ষকরা শিশুদের বড় অভিভাবক, পরম নির্ভরতার স্থান হবেন। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকরা হবেন শিক্ষার্থীদের মন খুলে কথা বলার পরম অাশ্রয়স্থল। এমনটা হলেই না শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হবে তীর্থস্থান, শিক্ষকরা হবেন মানুষ গড়ার কারিগর।
গভর্নিং বোডিতে কেবল অর্থ আর রাজনৈতিক পদের জোরে নয় অঞ্চলের সজ্জন, নির্লোভ, ভালো মানুষদের অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন। তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের সম্পর্কে অভিভাবকদের মতামত বিশ্লেষণ করবেন- এমন ব্যবস্থাও থাকা উচিৎ। অভিভাবকদের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করবেন তারা। একই সঙ্গে সেই শিক্ষকরা যেন সেসব অভিভাবকের সন্তানদের ওপর তার ক্ষোভটা প্রকাশ করে শিক্ষা জীবন ক্ষতিগ্রস্ত না করেন সেটাও তদারকি করতে হবে।
একই সঙ্গে শিক্ষকদের নানাবিধ প্রশিক্ষণের মধ্যে মানবিক গুনাবলীর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। তবে কেবল পুঁথিগত অধ্যায় নয়, এগুলো সম্পর্কে সঠিক ধারনা দিতে মনোবিদ বা এ বিষয়ের শিক্ষকদের সংযুক্ত করা প্রয়োজন। নতুবা বইয়ের মোড়কে আটকে রবে মুল্যবোধের চাবি।
নাদিরা কিরণ : প্রধান প্রতিবেদক, এটিএন বাংলা
- হঠাৎ নো মেকআপ লুকে জয়া আহসান!
- হাদির সর্বোত্তম চিকিৎসার আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার
- কেরানীগঞ্জে ভবনে আগুন
- ব্যাচেলর পয়েন্টে যে চরিত্রে দেখা দিলেন স্পর্শিয়া
- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পরিচয়ে ইউএনওকে প্রকাশ্য হুমকি
- লটারিতে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ভর্তি শুরু ১৭ ডিসেম্বর
- এমিনেমের অশালীন প্রস্তাব ফাঁস করলেন টাইটানিকের নায়িকা
- ‘ডাক্তার ও নার্সদের রুমকে ‘পার্টি অফিস’ বানাবেন না’
- পাকিস্তানের কাছে শেষ ম্যাচ হেরে সিরিজও হারল বাংলাদেশ
- ফের নোবেলজয়ী নার্গিস মোহাম্মদীকে গ্রেফতার করল ইরান
- হাসপাতালে ভিড় না করার আহ্বান তাসনিম জারার
- মেট্রোরেল চলাচল শুরু
- রাউটার যেখানে লাগালে ওয়াই-ফাইয়ের সেরা স্পিড পাবেন
- শীতে পিরিয়ডের সময় যে ফলগুলো খাবেন না
- নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা
- ত্বকে বয়সের ছাপ? দূর করবে এই ৪ পানীয়
- মেট্রোরেলের ভ্যাট প্রত্যাহার
- ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট ১২ ফেব্রুয়ারি
- আপেল নিয়ে কী ইঙ্গিত দিলেন জয়া আহসান
- খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি: মেডিকেল বোর্ড
- পার্লামেন্ট ভেঙে দিল থাইল্যান্ড
- ছবি নামিয়ে ফেলায় অপমানিত বোধ করেছি: রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন
- তফসিল ঘোষণা: নির্বাচন কমিশনকে প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা
- ওপেনএআই`র অ্যাপ সাজেশন নিয়ে বিতর্ক
- ৯ দিনের ব্যবধানে বাড়ল সোনার দাম
- গর্ত থেকে উদ্ধার হওয়া শিশু সাজিদ মারা গেছে
- রাউটার যেখানে লাগালে ওয়াই-ফাইয়ের সেরা স্পিড পাবেন
- নারী সাংবাদিককে চোখ মেরে বিতর্কে পাক আইএসপিআর প্রধান
- সচিবালয় থেকে ৪ জনকে নেওয়া হলো পুলিশি হেফাজতে
- নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা

