ঢাকা, রবিবার ২৪, নভেম্বর ২০২৪ ১:১৫:৫৫ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
সাময়িক বন্ধের পর খুললো যমুনা ফিউচার পার্ক ডেঙ্গুতে আরও ১০ জনের প্রাণ গেল ডেঙ্গুতে এ বছরেই ৫১ শিশুর প্রাণহানি মাকে হত্যা করে থানায় হাজির ছেলে আমদানির সাড়ে তিনগুণ দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে আলু ঢাকায় আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল সাতক্ষীরায় সাফজয়ী তিন নারী ফুটবলারের গণসংবর্ধনা

‘মিসাইল ওম্যান’ খ্যাত টেসি থমাসের সাতকাহণ

ঝর্ণা মনি  | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৯:৫২ পিএম, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ মঙ্গলবার

রান্নায় ব্যস্ত টেসি থমাস।

রান্নায় ব্যস্ত টেসি থমাস।

আট দশটা সাধারণ গৃহিনীর মতোই পরিবারের সদস্যদের খাবার যোগান দিতে রান্নাঘরে তার কুন্তি নাড়ানাড়ি।‌ মা-মাসীদের মতো ঘরোয়া চুল বেঁধে সাধারণ শাড়ি পরে রান্নাঘরে কুন্তি নাড়ানাড়ি করা এই নারী মোটেই সাধারণ নন। তিনি ‘টেসি থমাস’। ভারতের অগ্নিপুত্রী। পরমাণু অস্ত্রের ঝনঝনানি বিশ্বে ‘মিসাইল ওম্যান’ নামে যাকে চেনে বিশ্ববাসী। যিনি দৈনিক ১২ ঘন্টা শ্রম দেন বিজ্ঞান সাধনায়, প্রতিদিন চারঘন্টা শ্রম দেন রান্না ঘরে কুন্তি নাড়ানাড়ি এবং খাবার তৈরিতে। বাকি দুই ঘন্টা পরিবারের জন্য এবং ছয় ঘন্টা ঘুমে। তবে কখনো কখনো ১৬ ঘন্টাও বিজ্ঞান সাধনায় মগ্ন থাকেন এই অগ্নিপুত্রী।

ভারতের কেরালার এই টেসি থমাসের নেতৃত্বেই তৈরি হয়েছিল- ৫৭ ফুট লম্বা ৫০ হাজার কেজি ওজনের অগ্নি-ফাইভ মিসাইল। যে মিসাইল ১৫০০ কেজি ওয়ারহেড নিয়ে ৫ হাজার কিলোমিটার দূরের বস্তুতে নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম। ২০১২ সালের ১৯ এপ্রিল, ওড়িশার হুইলার দ্বীপ থেকে অগ্নি-ফাইভ মিসাইলের সফল উৎক্ষেপণ প্রমাণ করেছিল ড. টেসি থমাসের নেতৃত্বের প্রশ্নাতীত সাফল্যও।

২০১৮ সাল থেকে ‘অগ্নিপুত্রী’ ড. টেসি থমাস বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ‘ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’-এর (DRDO) অ্যারোনটিক্যাল সিস্টেমের ডিরেক্টর জেনারেল। গোটা বিশ্বে ক্ষেপণাস্ত্র গবেষণার জমি চিরকালই পুরুষ শাসিত ছিল, আছে ও থাকবে; এই ভ্রান্ত ধারণাটিকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছেন ‘মিসাইল ওম্যান’ টেসি থমাস।

১৯৬৩ সালে কেরালার থাথামপল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পরিবার মাদার টেরেসার অনুগামী ছিল। মাদার টেরেসা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই মা-বাবা মেয়ের নাম রেখেছিলেন টেসি। খুব ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছিলেন। তাদের জন্য সংসার সামলাতে নিজের কেরিয়ারের কথা ভাবেননি মা। দাঁতে দাঁত চেপে ছ’ভাই-বোনের সংসার একাই আগলে রেখেছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই তার বিজ্ঞানের প্রতি আলাদা রকমের আগ্রহ জন্মায়। অঙ্কের কঠিন সমস্যা তার কাছে ছিল জলভাত। জটিল পদার্থবিদ্যাও নিমেষে বুঝে ফেলতেন। স্কুলের পরীক্ষায় প্রতি বারই বিজ্ঞানে ১০০ শতাংশ নম্বর পেতেন তিনি। রকেট গবেষণা নিয়েও তিনি ছিলেন বিশেষ আগ্রহী। সেন্ট মাইকেল হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল থেকে তিনি পড়াশোনা করেন। এরপর সেন্ট জোসেফ গার্লস হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল থেকে তার পড়াশোনা।এরপর ১৯৮৩ সালে তিনি কালিকট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিটেক ইঞ্জিয়ারিং পাশ করেছিলেন ইলেকট্রিক্যাল বিভাগে। জহরলাল নেহরু টেকনলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি পিএইচডি করেন ২০১৪ সালে । এরপর তিনি এমবিএ ডিগ্রি পান ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশানাল ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে। ১৯৯৮ সালে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও)-এ কাজে যোগ দেন তিনি। অগ্নি ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিই ছিল তার মূল দায়িত্ব।এই প্রকল্পের জন্য স্বয়ং এপিজে আব্দুল কালাম তাকে বেছে নিয়েছিলেন।

টেসি থমাস দেশের বিজ্ঞান ক্ষেত্রে নিজের অবদানের জন্য একাধিক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে DRDO অগ্নি পুরস্কার। ২০০১ সালে তাকে এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছিল।২০০৭ সালে DRDO থেকে 'দৃষ্টান্তমূলক গবেষণা, অসামান্য প্রযুক্তি উন্নয়ন ২০০৭, ২০০৮ সালে 'ডিআরডিও সায়েন্টিস্ট অফ দ্য ইয়ার', ২০১১ সালে 'DRDO পারফর্ম্যান্স এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড' সহ একাধিক সম্মানে তাকে ভূষিত করা হয়েছে।লাল বাহাদুর শাস্ত্রী জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ২০১৮ সালে ডক্টর টমাস কানগান লিডারশিপ পুরস্কারও পেয়েছেন।

ভারতীয় নৌসেনার কম্যান্ডার সরোজ কুমারের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। সরোজ কুমার ও ছেলে তেজসকে নিয়েই তার সংসার।

ঝর্ণা মনি, ডেপুটি চিফ রিপোর্টার, দৈনিক ভোরের কাগজ।