ঢাকা, শুক্রবার ২২, নভেম্বর ২০২৪ ১৭:১৯:৫৯ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
সাতক্ষীরায় সাফজয়ী তিন নারী ফুটবলারের গণসংবর্ধনা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পঞ্চগড়ে, বাড়ছে শীতের তীব্রতা পেঁয়াজ-সবজি-মুরগির দাম কমলেও আলুর দাম বাড়তি রাজধানীতে মা-মেয়েকে এসিড নিক্ষেপ করে ছিনতাই মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ

রোজা লুক্সেমবার্গের নির্বাচিত রচনা: অনুবাদ: অদিতি ফাল্গুনী

(ভূমিকা: পিটার হুদিস এবং কেভিন বি. এন্ডারসন)  | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:২১ এএম, ৯ মার্চ ২০২২ বুধবার

ফাইল ছবি।

ফাইল ছবি।

ভূমিকা/ পর্ব-২: উপরন্ত, রোজা এই মর্মে যুক্তি প্রদর্শন করেন যে পুঁজিবাদের আওতায় সঙ্ঘটিত ‘সমাজতন্ত্রী উৎপাদন’ আদৌ টেঁকসই নয়। তিনি লেখেন, ‘পুঁজি, ইতোমধ্যেই পুঁজিবাদী সংগঠনের মাধ্যমে যথেষ্ট পরিমাণে যা ‘সমাজতন্ত্রী’ বা ‘সমাজবাদী’ হয়েছে, আবার ব্যক্তিগত পুঁজির আদলে ফেরার প্রবণতা দেখাবে।’    
পুঁজিবাদের সামগ্রিক প্রকৃতির পরিবর্তে পুঁজির বিশেষ একক বা দিকসমূহের উপর আলোকসম্পাতের মাধ্যমে বার্ণস্টেইন পড়ে গেছিলেন ‘কুৎসিত প্রয়োগবাদে’র ফাঁদে। এর ফলে পুঁজির নিজস্ব ‘গতির আইন’কে ভুলে গিয়ে পুঁজিবাদের সাময়িক পরিবর্তন এবং বদলগুলোকে তিনি পরম ভেবেছেন। স্থিতিশীলতা থেকে বহু দূরে, রোজা লেখেন, আন্তর্জাতিক রাজনীতির স্তরে পুঁজিবাদী সম্পর্কের একটি ফলাফল হলো যুদ্ধের আশঙ্কা ক্রমাগত বেড়ে চলা। কারণ উন্নত, পুঁজিবাদী জাতিগুলো হচ্ছে মূলত: ‘সেই সব রাষ্ট্র যারা তাদের সম অগ্রগতি সম্পন্ন পুঁজিবাদী বিকাশের কারণে ক্রমাগত যুদ্ধের দিকে নিজেদের ঠেলে দেয়।’   
রোজার ‘রিফর্ম অর রেভল্যুশন (সংষ্কার নাকি বিপ্লব)’ তাঁকে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকে রাতারাতি সংষ্কারপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াইরত নেতাদের ভেতরের অগ্রগণ্য একজন হিসেবে বিপুল খ্যাতি এনে দেয়। অবশ্য বিপ্লবের প্রশ্নে কোন ছাড় না দেয়ার মনোভাব প্রদর্শন করেও রোজা কিন্ত বিদ্যমান সমাজে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার প্রশ্নকেও ছোট করে দেখেননি, বিশেষত: দ্রেইফুস ঘটনায় এটা তিনি প্রমাণ করে ছাড়েন।  রোজা খুব কমই ইহুদি প্রশ্নে নিজের উদ্বেগ ব্যক্ত করতেন যদিও ইহুদি পত্রিকা ‘দের ইদ্দিশ আরবেতের’-এ তিনি লিখেছেন। পত্রিকাটি ১৮৯৯ সালে পথ চলা শুরু করেছিল। ইহুদি প্রশ্নে খুব সোচ্চার না হলেও ‘ফরাসী অধিকারে’র ইহুদি-বিদ্বেষী আক্রমণ থেকে ইহুদি ক্যাপ্টেন এডুয়ার্ড দ্রেইফুসকে রক্ষার জন্য সঙ্ঘটিত প্রচারণাকে পূর্ণ সমর্থন দেন। তাই বলে তিনি আবার জ্যোরেসের এই মতের পক্ষেও ছিলেন না যে দ্রেইফুস মামলায় সমাজতন্ত্রী এবং উদারনীতিকদের একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করার সক্ষমতা তাদের নিজেদের ভেতরের পারষ্পরিক ব্যবধান কমিয়ে আনবে। তিনি প্রবলভাবেই লিবারেল বুর্জোয়াদের সাথে যেকোন ধরণের ‘পচা সমঝোতা’র বিপক্ষে ছিলেন। এমনকি যদি এমন সমঝোতা সমাজতন্ত্রীদের ক্ষমতায়ও আনে তবু। ১৯০০ সালের জুলাই মাসে সেসময়কার ফরাসী সমাজতন্ত্রী নেতা আলেক্সান্দ্র মিলেরার রেনে ওয়ালডেক-রুশো সরকারে যোগদানের সিদ্ধান্তকে জ্যোরেস যেমন সমর্থন করেন, রোজা তার উল্টো অবস্থানই নিয়েছিলেন। এই একই সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল গাঁস্ত দ্যু গালিফে ছিলেন ‘পারি কমিউন আন্দোলনের কসাই’ হিসেবে পরিচিত। 
১৯০৪ সালে অনুষ্ঠিত ‘দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের আমস্টার্ডাম কংগ্রেস’ বুর্জোয়া সরকারগুলোতে সব ধরণের সমাজতন্ত্রী অংশগ্রহণের প্রতি নিন্দাবাদ জ্ঞাপন করে। কাজেই ল্যুক্সেমবার্গের পক্ষে এটা ভাবা অসঙ্গত হলো না যে সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনি জয়ী হয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, বাস্তবতা ছিল আরো বেশি জটিল। বার্ণস্টেইনের এই যুক্তি কিন্তু একদম ভিত্তিহীন ছিল না যে তাঁর সংশোধনবাদী যুক্তির পথ ধরেই সেসময় জার্মান সমাজতান্ত্রিক দল (এসপিডি) বাস্তবে হাঁটছিল। মূলত: সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে কোন দৃঢ় অবস্থান নিতে অনীহা প্রদর্শনে এবং সংসদীয় মতাদর্শের প্রতি ক্রমবর্দ্ধমান নির্ভরশীলতা থেকে এসপিডি’র এই সংশোধনবাদী দৃষ্টিভঙ্গী ধরা পড়ে। তবে, সংশোধনবাদকে সেই সময়ের সমাজে যতই গ্রহণ বা আত্তীকৃত করা হোক না কেন, কাগজে-কলমে অগুস্ত বেবেল বা কার্ল কাউতস্কির মত নেতারা ‘সংশোধনবাদ’কে কড়া নিন্দা করাটা চালিয়ে গেলেন, যদিও বাস্তবে সংশোধনবাদের চর্চা চলছিল। এই দ্বৈততা মূলত: বিপুল জনসমর্থন নির্ভর দল হিসেবে এসপিডির সাংগঠনিক অবস্থানের কারণেই ঘটেছিল। এসপিডির নেতাদের কাছে সবকিছুর উপর যা গুরুত্ব পেয়েছে, তা’ ছিল সংগঠন। পার্টির ক্রমাগত বৃদ্ধি একটি সমাজতন্ত্রী সমাজ গঠনের পক্ষে উপযুক্ত শর্ত এবং পুঁজিবাদী সমাজের ক্ষয়ের সূচক  হিসেবে পার্টির নেতাদের কাছে বিবেচিত হচ্ছিল। জে.পি.নেটল, এ পর্যন্ত লুক্সেমবার্গের উপর রচিত যাবতীয় জীবনী গ্রন্থের ভেতর সবচেয়ে বিশদ ভাবে রচিত আত্মজীবনীর প্রণেতা, বলেন: ‘সেসময় পার্টির একমাত্র লক্ষ্য ছিল বৃদ্ধি।’গোটা পার্টির সামগ্রিক মনোভঙ্গী মূলত: দু’টো বিষয়কে একসূত্রে গ্রথিত করতে চাইছিল যদিও এই দু’টো বিষয়ই মোটেই সমধর্মী কোন বিষয় ছিল না: এসপিডির সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিদ্যমান ব্যবস্থায় ধস নামার সম্ভাব্যতা। তবে এটাও দেখা গেছিল যে এসপিডির সংশোধনবাদী নীতিমালা শ্রমিক শ্রেণীগুলোর নানা অংশকে দীর্ঘ সময়ের প্রেক্ষিতে পার্টির সাথে মিশে যেতে বা অন্তর্ভুক্ত হতে সাহায্য করেছিল। লুক্সেমবার্গ অবশ্য এসপিডির সাংগঠনিক অবস্থান দ্বারাই উহ্য যে আসন্ন বিপদগুলো ছিল, সেসবকে ততটা গুরুত্ব দেন নি। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন যে সংগঠনের নিচের স্তরের বিন্যাস থেকে আসা শ্রমজীবী জনতার চাপেই পার্টি তার সংশোধনবাদী অবস্থান থেকে আরো বামপন্থী অবস্থানে যেতে বাধ্য হবে। রাশিয়াতে ১৯০৫ সালে যখন বিপ্লবের আগুন ছড়িয়ে পড়লো, তখন রোজার এই ধারণা সত্য প্রমাণিত হয়েছিল...অর্থাৎ, পার্টির নিচের দিকের বিন্যাসে শ্রমজীবী জনতার স্তর থেকে পার্টিকে অধিকতর বামপন্থী হবার জন্য চাপ দেবার বিষয়টি ফলে গেছিল। 
ল্যু´েমবার্গ জার্মানীতে থেকেও পোলিশ এবং রুশ আন্দোলনের পক্ষে কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। জোগিচেসের সাথে মিলে গঠন করেন ‘দ্য সোশ্যাল ডেমোক্রেসি অফ দ্য কিংডম অফ পোল্যান্ড (এসডিকেপি)’ এবং ‘দ্য সোশ্যাল ডেমোক্রেসি অফ দ্য কিংডম অফ পোল্যান্ড অ্যান্ড লিথুয়ানিয়া (এসডিকেপিআইএল)।’ পোলিশ সংগঠনকে ‘রাশিয়ান সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (আরএসডিআরপি)’-র সাথে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেন তিনি, প্রয়াস চালান রুশ বিপ্লবী কর্মকান্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণের। রাশিয়াতে ১৯০৫ সালের প্রত্যক্ষক্ষ বিপ্লবী প্রচেষ্টা সেসময়কার ইউরোপীয় সব সমাজতান্ত্রিক নেতা-কর্মীকেই বিপ্লবীকে প্রত্যক্ষক্ষ ভাবে জড়িত হবার তাড়না দিয়েছিল। ১৯০৫ সালে জেনায় অনুষ্ঠিত এসপিডি কংগ্রেসে রোজা বলেন, ‘প্রতিদিনই আমরা সংবাদপত্রে বিপ্লবের খবর পড়ি, পড়ি নানা তারবার্তা।  কিন্তÍ কেন জানি বোধ হয় যে আমরা কেউই বিপ্লবকে সরাসরি চোখে দেখতে বা কাণে শুনতে পাচ্ছি না।’  ১৯০৫-এর বিপ্লবের নতুন বৈশিষ্ট্যসমূহও তিনি অবলোকন করেন- রাজনৈতিক গণবিক্ষোভের স্বত:স্ফূর্ত আগমন শুধু রাশিয়ার বিপ্লবী দল বা সংগঠনসমূহের দ্বারা গৃহীত কৌশলই ছিল না, বরং তা’ যেন ভবিষ্যতের জার্মাণ বিপ্লবের জন্য এক সংগ্রামের শ্বাশত আঙ্গিকও ছিল। এই নব উদ্দীপ্ত মানসিকতা নিয়েই রোজা ডিসেম্বর ১৯০৫-এ ওয়ারশে গেলেন। বিপ্লবে অংশগ্রহণের জন্য। 
বিপ্লবে রোজার সম্পৃক্ততা এবং সেই সম্পৃক্ততা থেকে গৃহীত শিক্ষার যে  সারাৎসার তিনি স্কেচের মত আঁকার চেষ্টা করেছেন ‘গণ ধর্মঘট, পার্টি এবং ট্রেড ইউনিয়ন (দ্য মাস স্ট্রাইক, দ্য পার্টি, এ্যান্ড দ্য ট্রেড ইউনিয়ন-১৯০৬)’-এ, সেটা ‘উন্নত’ এবং ‘পশ্চাৎপদ’ দেশগুলো সম্পর্কে অতীতের নানা বিতর্কের পরিভাষাগুলোর খাতই বদলে দেয়। শিল্পোন্নত জার্মানীকে (যার ছিল বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সংগঠিত স্যোশালিস্ট পার্টিগুলোর একটি) কোনক্রমেই আর রাশিয়ার চেয়ে ‘উন্নত’ বা ‘অগ্রসর’ ভাবা হচ্ছিল না যেখানে একটি একীভূত মার্ক্সিস্ট দল (দ্য রাশিয়ান সোশ্যালিস্ট ডেমোক্রেটিক রেভল্যুশনারি পার্টি- আরএসডিআরপি) মাত্র কয়েক বছর আগে অর্থাৎ ১৮৯৮ সালে গঠিত হয়েছে। রাজনৈতিক গণ ধর্মঘটের সাথে সাথে, রোজা বলেন, যে রুশ শ্রমিকেরা পশ্চিম ইউরোপে তাদের সতীর্থদের চেয়ে অনেক বেশি অগ্রসর হয়ে যান। যেহেতু রাজনৈতিক ধর্মঘটের মাধ্যমে রুশ শ্রমিকেরা একটি নতুন বিপ্লবী পরিপ্রেক্ষিত অর্জন করতে পেরেছিল । এছাড়া রাশিয়ার শ্রমিকদের ভেতর অভুতপূর্ব যে বিষয়টি দেখা গেল তা’ হচ্ছে সংগঠন আর স্বত:স্ফূর্ততার উপর প্রাধান্য বিস্তার করলো না। বিপ্লবের ইঞ্জিন হিসেবে গণ ধর্মঘটের স্বত:স্ফূর্ত আবির্ভাব এটাই প্রমাণ করলো যে ‘গণমানুষের স্কুলমাস্টারসুলভ পরিচালনামের প্রচারপত্রে তিনি তাঁর বৈপ্লবিক অভিজ্ঞতার শিক্ষাকে সর্বজনীনতার সূত্রে গ্রথিত করেন। এই প্রচারপত্রটি তিনি রচনা করেন ফিনল্যান্ডের কুয়োক্কালায় বসে যেখানে খোদ লেনিন এবং ১৯০৫-এর বিপ্লবের অন্যান্য প্রত্যক্ষ অংশীদারদের সাথে তাঁর আলাপ-আলোচনা হয়।
লুক্সেমবার্গ এবং লেনিনের ভেতর নানা কিছু নিয়ে রাজনৈতিক মতবিরোধ ছিল। বিশেষত: জাতীয় প্রশ্নসমূহ নিয়ে। যেমন, লেনিন সব নিপীড়িত জাতির আত্ম-নিয়ন্ত্রণাধিকারের পক্ষেক্ষ ছিলেন। এছাড়া সাংগঠনিক কেন্দ্রমুখীনতার বিষয়ে লেনিনের সবিশেষ জোর দেয়া সম্পর্কেও রোজা একমত ছিলেন না। তবে ১৯০৫ সালের বিপ্লব এবং এর আন্তর্জাতিক প্রভাব সর্ম্পকে এই দু’জনেরই দৃষ্টিভঙ্গী বেশ ব্যপকভাবেই মিলে গেছিল। ১৯০৭ সালের মে এবং জুন মাসে লুক্সেমবার্গ লন্ডনে ‘রাশিয়ান সোশ্যালিস্ট ডেমোক্রেটিক রেভল্যুশনারি পার্টি (আরএসডিপি)’-র কংগ্রেসে যোগ দেন। সেখানে তিনি মেনশেভিকদের সমালোচনা করেন লিবারেল বুর্জোয়াদের লাঙুল মেহনের জন্য এবং বলশেভিকদের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গীর প্রতি তাঁর সমর্থন ব্যক্ত করেন। সবচেয়ে যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো রোজা কিন্তÍ ১৯০৫ সালের বিপ্লবের শিক্ষাকে সরাসরি কার্ল মার্ক্সের জীবন, কাজ ও রচনাবলীর উত্তরাধিকারের সাথে মিলাতে চাইলেন- প্রয়াস নিলেন দুয়ের মাঝে যোগসূত্র স্থাপণের। তিনি বললেন, ‘রুশ সোশ্যাল ডেমোক্রেসিই সেই প্রথম রাজনৈতিক অস্তিত্ব যার কাঁধে মার্ক্সের শিক্ষার নীতিমালা প্রয়োগের সম্মানিত দায়িত্ব ন্যস্ত হয়েছে- রাষ্ট্রের জীবনের শান্ত, সংসদীয় কালপর্বে নয় বরং একটি ঝড়ো বিপ্লবী কালপর্বে (রোজার বক্তব্যের পুরো টেক্সট এই রচনা সংগ্রহের ৭ম অধ্যায়ে বিধৃত হয়েছে)।’   
রুশ বিপ্লবের ফলে জার্মানীর শ্রমিক শ্রেণীর মাঝেও যে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল, তাকে সংহত রূপ দানের জন্য জার্মানীতে ফেরার পর রোজা অক্লান্ত পরিশ্রম শুরু করলেন।  যেমনটা তিনি প্রায়ই জোর দিয়ে বলেছেন, ‘আনুষ্ঠানিক বিধি-নিষেধ বা শৃঙ্খলার মাধ্যমে নয়, বরং যেখানে এবং যখনি চারপাশের বিদ্যমান পরিস্থিতি যদি অনুমতি দেয়, তবে গণ কার্যক্রমের সর্বোচ্চ বিকাশের মাধ্যমেই, এমন কোন গণ কার্যক্রম যা প্রলেতারিয়েতের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষকে সক্রিয় করে তুলবে...শুধুমাত্র এভাবেই সংসদীয় বিকলাঙ্গতা, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সাথে জোট বাঁধা, এবং পাতি বুর্জোয়া আঞ্চলিকতার ঘন কুহক থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব হতে পারে।’  যদিও এই দৃষ্টিভঙ্গি রোজাকে জার্মান শ্রমিক শ্রেণীর শ্রোতৃবর্গের কাছে জনপ্রিয়তম বক্তাদের একজনে পরিণত করে, এসপিডি নেতৃত্বের সাথে রোজার সঙ্ঘাত ততই বাড়তে থাকে। 
১৯০৭ সালের শুরুতে ক্লারা জেৎকিনকে লেখা একটি চিঠিতে লুক্সেমবার্গ লিখেছেন, ‘রাশিয়া থেকে ফেরার পর থেকে আমার নিজেকে কেমন বিচ্ছিন্ন লাগছে...আমাদের গোটা পার্টির ভেতর দৃঢ় সঙ্কল্পের অভাব এবং পার্টির সঙ্কীর্ণতা আরো প্রবলভাবে এবং অতীতের থেকে অনেক বেশি যন্ত্রণার সাথে অনুভব করছি।’    ১৯০৬ সালের ফেব্রুয়ারির মত বছরের প্রথম দিকেই, এসপিডি গোপণে যত সংষ্কারপন্থী ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দকে ট্রেড ইউনিয়নের সাথে সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ে সায়ত্ত্বশাসন দান করে অথচ এই নেতৃবৃন্দ ছিলেন গণ ধর্মঘটের ধারণার প্রবল বিরোধী। পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ ১৯০৭-এর নির্বাচনে, রাইখস্ট্যাগ তথা জার্মান সংসদে এসপিডির আসন সংখ্যা কমে ৮১ থেকে ৪৩-এ নেমে আসে। নির্বাচনী নীতিমালার উপর যাবতীয় মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে পার্টি দলের ভেতরের বৈপ্লবিক সব দাবি-দাওয়াকে নিস্ত ব্ধ করে তার যা উত্তর জানানোর সেটা জানিয়ে দেয়। লুক্সেমবার্গও কড়া উত্তর জানান, ‘জার্মান পার্টির জীবন আসলে দু:স্বপ্ন ব্যতীত কিছু নয় অথবা স্বপ্নহীণ একটি অবসাদগ্রস্থ নিদ্রা।’ তাঁর সমালোচনা শুধুই সংশোধনবাদী বা সংশোধনবাদীদের পক্ষাবলম্বীদের দিকেই লক্ষ্যাভিমুখী হয়নি; তাঁর সমালোচনার তীর ছুটেছে এমনকি খোদ কার্ল কাউতস্কির দিকেও, যাঁকে কিনা প্রায়ই ‘মার্ক্সবাদের পোপ’ বলা হতো। যিনি অতীতে পার্টির নানা বিতর্কে রোজার পক্ষে ছিলেন। ১৯০৮ সালে একটি চিঠিতে রোজা লেখেন, ‘দ্রুতই আমি কাউতস্কি রচিত কোন লেখা পড়তে অক্ষম হয়ে উঠবো...এ যেন মাকড়সার জালের বিরক্তিকর ধারাবাহিকতা...যা শুধুমাত্র মার্ক্সকে নিজে নিজে পড়ার মানসিক অবগাহনের পর পরিষ্কার হতে পারে বা সম্ভব।’  
১৯১০ সালে কাউতস্কির সাথে রোজার খোলাখুলি সম্পর্ক ভঙ্গ হয়। সে বছরের মার্চ মাসেই সম্পর্ক ভেঙ্গে গেল। (চলবে)