ঢাকা, রবিবার ১৭, নভেম্বর ২০২৪ ২:৫৭:১১ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
মহাকাশচারীদের নিয়ে উপন্যাস ‘অরবিটাল’ লিখে বুকার জিতলেন হার্ভে জাতীয় সংসদে কোনো সংরক্ষিত নারী আসন থাকবে না রাষ্ট্র সংস্কারই এই সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ: প্রধান উপদেষ্টা দিনাজপুরে তাপমাত্রা ১৬ দশমিক ৮, বাড়ছে শীতের প্রকোপ আজ ঢাকায় আসছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভারতে হাসপাতালে ভয়াবহ আগুন, ১০ শিশুর মৃত্যু ডাকাতির সময় নিয়ে যাওয়া শিশু মোহাম্মদপুর থেকে উদ্ধার

শীতে বাঙালির অনন্য রসনা: পিঠাপুলি

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:১৫ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ বৃহস্পতিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

শীতের কুয়াশাভেজা, পাতাঝরা এক সকালে চুলোর পাশে জবুথবু হয়ে বসে গরম গরম ধোঁয়া ওঠা পিঠা খাওয়ার এই বাঙালি রীতি বেশ পুরোনো। শীতের সকালে গ্রামীণ পরিবেশ মুখর হয়ে ওঠে হরেক রকমের, হরেক স্বাদের পিঠায়। সারাবছর পিঠাপুলি কম-বেশি খাওয়া হলেও শীতের দিনে পিঠাপুলি খাওয়ার আনন্দই যেন অন্যরকম।

আবহমান কাল ধরেই বাঙালির ঐতিহ্যেবাহী খাদ্য তালিকার অনন্য এক পদ হলো-পিঠাপুলি যা বাঙালির লোকজ এবং নান্দনিক বৈশিষ্ট্যেরই বহিঃপ্রকাশ। অগ্রহায়ণের শুভ এক দিন দেখে পালিত হয় নবান্ন উৎসব। নতুন চালের ভাত, পিঠা-পুলি, নানা ব্যঞ্জন রন্ধনের মাধ্যমে আপ্যায়ন করা হয় বন্ধু-বান্ধব এবং পরম আত্মীয়দের। বর্তমানে এ রীতি বিলুপ্তির পথে হাঁটলেও শীতে নতুন চালের নানান মুখরোচক পিঠা খাওয়ার জন্য সবারই মন আনচান করে।


বাংলার শীতের জনপ্রিয় খাদ্য পিঠার অন্যতম উপকরণ নতুন ধানের চালের গুঁড়ো। এই চালের গুঁড়োর সাথে নানা উপকরণ মিশিয়ে তৈরী হয় বাহারী নামের চমৎকার সব পিঠা। শীতের সকালের আরেকটি আকর্ষণ হলো খেজুরের রসের তৈরী সুস্বাদু গুঁড়। খেজুরের রসের গুঁড়ের সাথে মিশে পিঠাপুলির স্বাদ হয়ে যায় দ্বিগুণ। দুধের সাথে খেজুর গুঁড় মিশিয়ে এতে ডুবিয়ে গরমাগরম খাওয়া হয় পিঠা। অনেক সময় চাটনি কিংবা মুরগির ঝোলের সাথেও খাওয়া হয় সুস্বাদু পিঠা।


বাংলাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় কিছু পিঠা রয়েছে। যেমনঃ ভাপা পিঠা, ভাপা পুলি, দুধ পুলি, চিতই, নকশি পিঠা, মালপোয়া, ক্ষীরের পাটিসাপটা, তেলের পিঠা, মেরা বা হাতমুঠি পিঠা, মুগপাকন, ঝালপাকন, কলাপিঠা প্রভৃতি।


জায়গাভেদে নানা ধরনের মজাদার পিঠার নাম শোনা যায়। যেমন: কুমিল্লা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলের জনপ্রিয় একটি পিঠা হলো ডিমসুন্দরী পিঠা। এছাড়া রয়েছে বিক্রমপুরের বিখ্যাত পিঠা বিবিয়ানা বা জামাই ভুলানো পিঠা, ফেনী ও নোয়াখালী অঞ্চলের খোলাজা পিঠা ইত্যাদি আরো নানান পিঠার নাম শোনা যায়। যেমন: আন্দেশা পিঠা, কুলি পিঠা, কাঁঠাল পাতার পিঠা, খাস্তা পিঠা, ক্ষীর পিঠা, চন্দ্রপুলি পিঠা, চালের পিঠা, ছানার পিঠা, ছড়া পিঠা, জামাইভোগ পিঠা, জালা পিঠা, ডোবা পিঠা, তিলকুলি পিঠা, দৈলা পিঠা, দুধকদু পিঠা,পাকোয়ান পিঠা, পাক্কাশ পিঠা, পাপড় পিঠা, ফুলঝুরি পিঠা, বরফি পিঠা, বড়া পিঠা, ভাঁপাপুলি পিঠা, রস পিঠা, রুটি পিঠা, শেওই পিঠা, সিদ্ধকুলি পিঠা, ছাঁচ পিঠা, ছিটকা পিঠা, চুটকি পিঠা, চাপড়ি পিঠা, পানতোয়া পিঠা, মালাই পিঠা, লবঙ্গ লতিকা পিঠা, রসফুল পিঠা, জামদানি পিঠা, হাঁড়ি পিঠা, ঝুরি পিঠা, ঝিনুক পিঠা, সূর্য্যমুখী পিঠা, নারকেল পিঠা, দুধরাজ পিঠা প্রভৃতি।

চালের গুঁড়োর সাথে রকমারি উপকরণ মিশিয়ে এসব বাহারী নামের পিঠা তৈরী হয়ে থাকে। শুধু শীতকালেই নয়,মুসলমানরা তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানেও নানা পিঠা-পুলি তৈরী করেন। নতুন জামাই অ্যাপায়নে, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজনপর আগমনে গৃহবধূরা পিঠা তৈরী করে থাকেন। এছাড়া নবান্ন অনুষ্ঠানে হিন্দুরা নৈবেদ্য হিসেবে লক্ষ্মীদেবীর পূজোয় পিঠা নিবেদন করে থাকে। খ্রিস্টানরা বড়দিনের সময় নানা পিঠা-পুলির আয়োজন করে থাকেন।


আধুনিকতার স্পর্শে শহুরে জীবন ঠাসা হলেও শীতে শহুরে পাড়ার অলি-গলিতে বসে অস্থায়ী পিঠার স্টল। হেমন্তের শুরুতে মৌসুমী বিক্রেতারা পিঠার স্টল নিয়ে বিক্রি শুরু করে নানা পিঠা। সন্ধ্যার পর থেকে মূলত বেচা-বিক্রির পরিমাণ বেড়ে যায় তাদের। নানা জায়গায় হয় পালিত হয় পিঠা উৎসব। বিভিন্ন রেস্তোরাঁ এবং অনলাইন ফুড শপগুলোতেও পাওয়া যায় নানা রকমের পিঠা। শত ব্যস্ততার মাঝেও শহুরে মানুষ পিঠার স্বাদ আস্বাদন করতে ভুলেন না একেবারেই। বাসা-বাড়িতে তৈরী হয় নানা ধরনের পিঠা। গ্রামীণ পরিবেশে না হলেও চেয়ার-টেবিলে সকলে মিলে বসে গরম গরম পিঠা খাওয়ার আনন্দ কিন্তু সেই একইরকম।


পিঠা উৎসব এবং শীতে পিঠা খাওয়া সেই বাঙালির চিরন্তন সত্তাটুকু হারিয়ে যায়নি; বরং সময়ের সাথে এর সংস্করণ ও বাণিজ্যিকরণের পরিধি বেড়েছে। বাঙালির পিঠা এখন দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে পৌঁছেছে। এই পিঠা বারো মাসে তেরো পার্বণের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা পিঠা বিক্রির মাধ্যমে নিজেদের সফলতা অর্জনে চেষ্টা করে চলেছেন। পিঠা আন্তর্জাতিকভাবে বাজারজাতকরণ সম্ভব হলে বাঙালির এই বিখ্যাত খাদ্য পৌঁছে যাবে দেশ থেকে দেশান্তরে। যান্ত্রিকতার মোড়কে সবকিছু মিশে গেলেও বাঙালির শীতের এই পিঠা উৎসব অম্লান থাকুক চিরকাল।